Entertainment news

ছ’মাসের মধ্যেই বন্ধ ‘আমি সিরাজের বেগম’! হতাশ অভিনেতা থেকে কলাকুশলী

মনে করছেন ধারাবাহিকের অন্যতম অভিনেতা চান্দ্রেয়ী ঘোষ?

Advertisement

মৌসুমী বিলকিস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৯ ১৩:২৬
Share:

ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য।

বন্ধ হয়ে গেল ‘আমি সিরাজের বেগম’ ধারাবাহিক। ৮ মে ছিল ধারাবাহিকটির শেষতম শুটিং। খুব জাঁকজমক করে শুরু হলেও মাত্র ছ’মাসের মধ্যেই ধারাবাহিকটি বন্ধ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। আগেও টেকনিশিয়ান্সদের পেমেন্ট আটকে যাওয়ায় মাঝে মাঝেই ধারাবাহিকটির শুটিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেমেন্ট সংক্রান্ত ঝামেলায় এক প্রোডাকশন হাউজ থেকে আর এক প্রোডাকশন হাউজে হস্তান্তরিত হয়েছে ধারাবাহিকটি। তাতেও শেষরক্ষা হল না। কী মনে করছেন ধারাবাহিকের অন্যতম অভিনেতা চান্দ্রেয়ী ঘোষ?

Advertisement

তিনি বললেন, “যে কোনও চরিত্রই যখন শেষ হয়ে যায় তখন খুবই কষ্ট হয়। এই চরিত্রটি (ঘসেটি বেগম) তো পরিচিত, ইতিহাসের পাতায় আছে... তো সেটা নিয়ে খুবই মন খারাপ। মন খারাপ চলছে, এখন কিছুদিন থাকবে। আসলে আজকাল কিছুই আগে থেকে বলা যায় না... সব লাস্ট মোমেন্টে জানা যায়, আর ডিসিশনও হয় লাস্ট মোমেন্টে। এরকমই একটা সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি আর কী। আমি তো ২০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে আছি... যখন শুরু করেছিলাম তখন এক ভাবে কাজ হত, এখন আর এক ভাবে কাজ হয়। তো মেনে নিয়েই চলতে হবে... কিছু করার নেই। মানুষ হিসেবে বিগত ২০ বছরে আমিও হয়তো চেঞ্জ হয়েছি, তো ইণ্ডাস্ট্রিও বদলেছে ২০ বছরে। আমি আমার কাজ ভালোবাসি, কিছু যদি চেঞ্জও হয় তাঁর সঙ্গেই চলতে হবে... আমি নিজের কাজ এতটাই ভালবাসি।”

সিরাজ-এর চরিত্রাভিনেতা শন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম কাজ। প্রথম কাজ এ ভাবে শেষ হয়ে যাওয়াতে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী? তিনি এতটাই বিমূঢ় প্রথমে কথা খুঁজে পেতে অসুবিধা হল, “আ...ম...আ... কী যে বলি! বিষয়টা খুবই... আ... হঠাৎ করে হয়ে গেল তো খুব খারাপ লাগছে। তবে এখানে অভিনয় করে আমার অনেক এক্সপিরিয়েন্স হয়েছে, অনেককিছু শিখতে পেরেছি... অ্যান্ড মেট আ লট অফ নাইস পিপল। সব মিলিয়ে এটা আমার জীবনের ভাল এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকবে। টিমের সবাইকে অলরেডি খুব মিস করছি। তবে কো-অ্যাক্টরদের সঙ্গে কোনও না কোনও প্রোজেক্টে দেখা হবেই। ইণ্ডাস্ট্রি তো ছোট। যা হয়ে গেল সেটাকে অ্যাকসেপ্ট করে উই হ্যাভ টু মুভ অন।”

Advertisement

আরও পড়ুন: চুমু বিতর্কে বিদ্ধ এই নবাগতা বলি নায়িকা একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

পারিশ্রমিক পেয়েছেন? চান্দ্রেয়ী জানালেন, “আমার পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা হয়নি। সরাসরি চ্যানেলের সঙ্গে আমার চুক্তি। কিন্তু টিমের অনেকের পেমেন্ট আটকে আছে।”

শন বললেন, “আমাকে যে হেতু সরাসরি চ্যানেল পারিশ্রমিক দেয়, আমার সমস্যা হয়নি। কিন্তু প্রোডাকশনের বিষয়ে বলতে পারব না। তবে বলা যায় যে টিআরপি রেটিং-এর জন্য বন্ধ হয়নি। এর থেকে কম রেটিং নিয়েও অনেক ধারাবাহিক চলছে।”

অনেক অভিনেতার সমস্যা না হলেও টেকনিশিয়ান্স এবং অন্যান্য বিভাগে যারা কাজ করেছেন পারিশ্রমিক আটকে যাওয়ায় তাঁরা প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ। কেউই জানেন না আদৌ বকেয়া পাওনা পাওয়া যাবে কি না। ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঠিক কারণ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কেউ মন্তব্য করতে চাইছেন না ঠিকই। কিন্তু টলি পাড়ায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বকেয়া অর্থের পরিমাণ জমতে জমতে বিশাল অঙ্কের টাকায় দাঁড়িয়েছে। তার সঠিক হিসেবও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। ধারাবাহিকের পূর্ববর্তী প্রোডিউসার রাণা সরকার বা তাঁর প্রোডাকশন হাউজের যারা সঠিক হিসেব জানতেন তাঁদের সবাই নাকি বেপাত্তা। ফলত এই বিশাল অঙ্কের বকেয়ার হিসেব মেটানো সংশ্লিষ্ট চ্যানেল বা ভারপ্রাপ্ত প্রোডাকশন হাউজ কারও পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অনেকে মনে করছেন মূলত বকেয়া অর্থের জটিলতার কারণেই ধারাবাহিকটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। হাতে যে কটি এপিসোড ব্যাঙ্কিং আছে সেগুলির টেলিকাস্ট হয়ে গেলেই দর্শকরা আর দেখতে পাবেন না ধারাবাহিকটি। রাণা সরকারের প্রোডাকশন হাউজ থেকে যে কটি ধারাবাহিক হস্তান্তরিত হয়েছে তার মধ্যে এই ধারাবাহিকটিই প্রথম বন্ধ হয়ে গেল। শোনা যাচ্ছে হস্তান্তরিত অন্যান্য ধারাবাহিকের কর্মীদেরও পারিশ্রমিক বিষয়ে একইরকম জটিলতা আছে। সেগুলোর ভবিষ্যৎ বিষয়েও তাই নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ধারাবাহিকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন এক ব্যক্তি মর্মাহত হয়ে জানালেন, “সিরাজের বেগম এত সুন্দর করে শুরু হয়েছিল... সেট, লুকস, সেট প্রপস্‌ সবকিছুতেই একটা গ্রাঞ্জার ছিল... দারুণ ব্যাপার ছিল। এমনকি অন্যান্য ধারাবাহিকের থেকে সিনেম্যাটোগ্রাফির দিক থেকেও বেশ যত্ন নেওয়া হত। সবেমাত্র ফ্যামিলির কাহিনি ছেড়ে রাজনৈতিক কাহিনির দিকে এগোচ্ছিল ধারাবাহিকটি। এখন পর্যন্ত কাহিনির এক তৃতীয়াংশও দেখানো হয়নি। বিপুল আশা ও উত্তেজনা তৈরি করে হঠাৎ করে সিরিয়াল বন্ধ হয়ে যাওয়াটা দর্শকদের সঙ্গে একরকমের প্রতারণা বৈকি। আশা করি অচিরেই অডিও ভিজুয়াল কর্মীদের পারিশ্রমিক নিয়ে এই কালচার বন্ধ হবে। সবাই নিয়মিত পারিশ্রমিক পাবেন এবং কোনও ধারাবাহিক শুধু এই কারণে এরকমভাবে হঠাৎ করে বন্ধ হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন