রঘুনাথগঞ্জে শুরু হল নাট্যোৎসব। শনিবার ছিল বগুলার সূচনা নাট্য সংস্থার নাটক ‘পুঁটি রামায়ণ’। তারই একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
নাট্যচর্চার জন্য এক সময় জেলাজুড়ে নামডাক ছিল রঘুনাথগঞ্জের। শীত এলে নাটকের জন্য মুখিয়ে থাকত গোটা শহর। লোকজনে গমগম করত নাট্য উৎসবের ক’টা দিন। ভিন্ শহরের কত নামিদামি নাট্যদল শহরে এসে শো করে গিয়েছে। তেমনি ভিন্ রাজ্যে গিয়ে শো করে প্রশংসা কুড়িয়েছে এ শহরের শিল্পীরা। আর্থিক সঙ্কট, কলাকুশলীর অভাবে সেই নামডাকে ভাটা পড়েছিল।
মরা গাঙে খানিক জোয়ার আনল পাঁচ নাট্য সংস্থা। রবীন্দ্র ভবনে পরপর তাদের পাঁচ নাট্যোৎস হবে। মঞ্চস্থ হবে ৪৩টি নাটক। উদ্যোক্তাদের নাটক ছাড়াও উৎসবে যোগ দেবে ত্রিপুরা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৩৫টি নাট্যদল।
শনিবার শুরু হয়েছে নাট্য উৎসব। শুরুর দিন ছিল ‘অকপট নাট্য মঞ্চ’-এর আয়োজনে নদিয়ার বগুলার সূচনা নাট্য সংস্থার ‘পুঁটি রামায়ণ’ ও ‘লালন ছুটছে’ এই দুই নাটক। ‘মদ্যিখানে চর’, ‘সন্ত্রাস মাস্টার’, ‘টক টক টকাশ’-সহ ছয়টি নাটক হবে তাদের উৎসবে।
অকপটের সম্পাদক অরিন্দম বিশ্বাস জানান, উৎসবে অন্য শহর থেকে আসছেন বিভিন্ন নাট্য দল। বিনিময়ে তাঁদের দল যাচ্ছে অন্যদের নাট্যোৎসবে। ফলে তাঁদের যেমন পরিচিতি বাড়ছে, বাড়ছে অভিজ্ঞতাও। রাজ্যের অনেক জায়গায় শোয়ের ডাক পাচ্ছেন। উৎসবের সবচেয়ে বড় সাফল্য মঞ্চের এই আদান প্রদান।
তিনি বলছেন, “শহর লাগোয়া গ্রামগুলি থেকেও যুক্ত হচ্ছেন নাট্যকর্মীরা। কাজেই এখন নাটক দেখতে ভিড় করছেন সেইসব গ্রামের মানুষও।”
নাট্যম শ্রদ্ধাঞ্জলির নাট্যোৎসব রয়েছে ১-৬ ডিসেম্বর। সাতটি নাটকের মধ্যে দু’টি নাটক নিজেদের। সম্পাদক সাবির শেখের মতে, নাটকের মঞ্চে যেখানে জনা কুড়ি কর্মী পাওয়াও ছিল সমস্যার, এখন সেখানে নাট্য কর্মীর সংখ্যা প্রায় দেড়শো। দর্শকের সংখ্যাও বেড়েছে অনেকটাই। টিভি সিরিয়ালের সামনে থেকে টেনে এনে তাদেরকে যে মঞ্চমুখী করতে পারা গিয়েছে এটাই বড় সাফল্য বলছেন তিনি।
তৃতীয় বর্ষে পড়ল রঘুনাথগঞ্জ গ্রুপ থিয়েটারের এ বারের নাট্যোৎসব। ১৩-১৯ জানুয়ারি সাতদিনে ১১টি নাটক দেখাবে তারা। এদের একটি দল আসবে ত্রিপুরা থেকে। তারাও যাবে ত্রিপুরায় শো করতে।
সম্পাদক অজিত সরকার বলছেন, “ত্রিপুরা, অসম, দুর্গাপুর, হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শো করব। উৎসবের স্বার্থকতা পরস্পরের এই ভাব বিনিময়েই।’’
নাট্যম বলাকা অবশ্য শহরের নাট্য মঞ্চে বহুদিনের পরিচিত নাম। ১৪-২০ ডিসেম্বর ১৪টি নাটক মঞ্চস্থ হবে সাতদিনের নাট্যোৎসবে। তাদের দু’টি নাটক ছাড়াও উৎসবে আসবে বহরমপুরের ঋত্বিক, বালিগঞ্জের ব্রাত্যজন, সিউড়ির আত্মজ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার নাট্যদল।
রঘুনাথগঞ্জ নাট্য নিকেতনের উৎসব রয়েছে ২৫-২৮ জানুয়ারি। তাদের চার দিনের নাট্যোৎসব এ বারে আট বছরে পড়ল। রাজ্য নাট্যমেলায় পর পর চার বছর যোগ দিয়েছেন এই সংস্থা।
সম্পাদক নারায়ণ মণ্ডল বলছেন, “রঘুনাথগঞ্জে নাট্য চর্চার পরিসর বেড়েছে। কিন্তু উৎসবের বড় সমস্যা আর্থিক সঙ্কট। স্পনসরও সে ভাবে জোটে না। তবু নাটকের সুদিন ফিরছে। দর্শকেরা ফের মঞ্চমুখী হচ্ছেন বলেই নাট্যোৎসবের সংখ্যা বেড়েছে।”