চলন প্রেডিক্টেবল, তবে বিনোদন রয়েছে

কেড়ে নেয় রাজ পরিবারের সকলের প্রাণও। কিন্তু ঠিক সময়ে খুদাবক্স ফিরে আসায় বেঁচে যায় নবাবের একরত্তি কন্যা জ়াফিরা।

Advertisement

অন্তরা মজুমদার

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

আমির ও অমিতাভ ছবির দৃশ্যে।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতের এক মুক্ত প্রদেশ রৌনকপুর। সেখানকার নবাব মির্জ়া সিকন্দর বেগ (রণিত রায়) ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যু্দ্ধের জন্য অস্ত্র বানায় মহলের চোরাকুঠুরিতে। তার বিশ্বস্ত অনুচর খুদাবক্স (অমিতাভ বচ্চন) মিত্রপক্ষ তৈরি করতে যায় ভিন্ন প্রদেশে। সঙ্গে নবাবের ছেলে। কিন্তু কী ভাবে যেন নবাবের ছেলেকে অপহরণ করে ফেলে ইংরেজরা। ব্রিটিশদুরস্ত কায়দায় ছেলেকে টোপ হিসেবে ফেলে ব্রিটিশ লর্ড ক্লাইভ (রবার্ট ক্লাইভ নন) কেড়ে নেয় নবাবের রাজত্ব। কেড়ে নেয় রাজ পরিবারের সকলের প্রাণও। কিন্তু ঠিক সময়ে খুদাবক্স ফিরে আসায় বেঁচে যায় নবাবের একরত্তি কন্যা জ়াফিরা।

Advertisement

এগারো বছর পরে সেই একরত্তি কন্যা জ়াফিরাই (ফতিমা সানা শেখ) পুরোদস্তুর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠে। খুদাবক্স শুধু তার শিক্ষক নয়, বাবার মতোই। তখন প্রতিশোধই জ়াফিরার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। খুদাবক্সও তখন আর পুরনো নামে নেই। তাকে লোকে চেনে আজ়াদ বলে। তবে আজ়াদ কেবল তার একার নাম নয়। আজ়াদ একটি বিশ্বাসের নাম। বলা ভাল এক রকমের চেতনার নাম। স্বাধীনতার চেতনা। যার পিছনে সিনেমার ফর্মুলা মেনে যেমন একটা প্রতিশোধের কাহিনি রয়েছে, তেমনই রয়েছে নাটকীয় ভালবাসা, বন্ধুত্ব, নির্ভরতা এবং আবেগের ওঠাপড়া।

অর্থাৎ একটি আপাদমস্তক কমার্শিয়াল ছবি এই ‘ঠগস অব হিন্দোস্তান’। সুতরাং তার চলন প্রেডিক্টেবল। ক্লাইম্যাক্সে কী হবে, পপকর্নের বাকেট ফুরনোর আগেই বুঝে যাওয়া যাবে। আবার এটি পিরিয়ড ছবিও বটে। তবে এখানে পিরিয়ডের রেফারেন্স বলতে গল্পের সময়কালটাই। তার মধ্যে ইতিহাসের তথ্যগত সাযুজ্য আদৌ কতটা আছে, সেটা খুঁজতে যাওয়ার মানে হয় না। তা ছাড়া বলিউ়ড মূলধারার বিগ বাজেট ছবিতে প্রবল খেটে শেষ কবে নিখুঁত চিত্রনাট্য লেখা হয়েছিল, সেই ঠগ খুঁজতে গাঁ উজার হয়ে যাবে! তা হলে কী খুঁজতে যাব এই ছবিতে? উত্তর একটাই— এনটারটেনমেন্ট। অর্থাৎ যে মনোভাব নিয়ে লোকে ‘টাইগার জ়িন্দা হ্যায়’ দেখতে হলে যান, আমির খানের এই ছবিটাও সেই মনোভাব থেকে দেখলে মজা কমবেশি পাওয়া যেতেই পারে।

Advertisement

তবে ছবিতে আসল ‘ঠগী’দের উপস্থিতি মোটে একটি দৃশ্যেই। খুদাবক্স এবং তার দলবলদের কার্যকলাপ দেখে বরং তাদের জলদস্যুই মনে হয়। তবু তাদের কেন ‘ঠগস’ বলা হচ্ছে, বোঝা গেল না। খুদাবক্সের চরিত্রটি এখানে প্রতীকী। বিশ্বস্ততা, সততা, ভরসার প্রতীক সে। আর তার ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে আমির খানের ফিরঙ্গি মল্লা। প্রতারণা, মিথ্যা, জালিয়াতির পয়লা নম্বর উদাহরণ। খুদাবক্সের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতার কোনও দাম হয় না। বিশ্বাস তার কাছে অমূল্য। আবার ফিরঙ্গির কাছে সব কিছুরই একটা দাম ধরা আছে। কিন্তু কোনও কিছুরই মূল্য নেই! এই দুই মেরু এক হয়ে গিয়েই হারিয়ে দেয় ক্লাইভকে। এবং এই এক হওয়ার প্রসেসটায় একাধিক মজাদার মুহূর্ত রয়েছে। বিশেষ করে আমিরের মুখে যে সংলাপগুলো বসানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই কমিক। তবে নির্মাতারা অতি উৎসাহে একটি মারপিটের দৃশ্যকে কমিক করে তোলার চক্করে চার্লি চ্যাপলিনের কারিকুরি আমিরকে দিয়ে না-ই করাতে পারতেন। অবশ্য জ্যাক স্প্যারোকেই যখন নকল করলেন তাঁরা, চ্যাপলিন আর কী দোষ করলেন!

তবে আমির খান যে কোন ধাতুর অভিনেতা, সেটা আবার প্রমাণিত হল। জ্যাক স্প্যারোর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েও ফিরঙ্গিকে নিজের একটা ফ্লেভার দিয়েছেন তিনি। ছবি একটু এগোনোর পরে প্রায় প্রতিটা দৃশ্যেই তিনি আছেন এবং ফিরঙ্গি যে কখন কী করে ফেলে, এই চমকটা অভিনয়ের জোরে ধরেও রেখেছেন দিব্যি। অমিতাভ বচ্চনও আজ়াদি-প্রেমী যোদ্ধার ভূমিকায় মুগ্ধ করেছেন। তবে হতাশ করলেন ক্যাটরিনা কাইফ এবং ফতিমা সানা শেখ। লাস্যময়ী নর্তকী সুরাইয়ার চরিত্রে ক্যাটরিনা কেবল নাচটাই চুটিয়ে করেছেন। কিন্তু এতগুলো বছর পরেও কেন যে তাঁর সংলাপ বলায় এমন আনাড়ি ভাব রয়ে গিয়েছে, ভেবে কূলকিনারা পাওয়া যায় না। ফতিমা অবশ্য অনেকটাই নতুন। ছবিতে নিজের স্টান্টগুলো ভালই করেছেন তিনি। কিন্তু আবেগের দৃশ্যে ব়ড্ড আড়ষ্ট তিনিও।

ট্রেলারেই সকলে বুঝে গিয়েছিলেন, ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ এবং ‘বাহুবলী’র সঙ্গে এ ছবির সেটিংগত মিল আশ্চর্য রকমের। কিন্তু নির্মাতারা যখন এতটাই করলেন, তখন স্পেশ্যাল এফেক্টকে আর একটু পদের করতে পারলেন না? ২০০ কোটিরও বেশি টাকার বাজেটেও সেটা করে দেখানো গেল না? দুঃখজনক ভাবে অ্যাকশন-নির্ভর হিন্দি ছবিতে স্লো মোশনে অ্যাকশন দেখতে দেখতে এ বার ক্লান্তি আসছে। তার চেয়ে ড্রয়িং রুম ড্রামা তো ভাল! এত খরচও হয় না।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বিনোদন কোশেন্টটাকে বাদ দেওয়া যাবে না এই ছবির ক্ষেত্রে। বিশেষ করে আমিরের পারফরম্যান্সের জন্যই। তার উপরে শেষ দেখে মনে হল, সিকুয়েলের প্ল্যানিংও রয়েছে ‘ঠগস...’-এর। খুঁতগুলোকে একটু বুদ্ধি খরচ করে ঢেকে নিতে পারলেই কেল্লা ফতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন