‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’র পোস্টার। ছবি: অক্ষয় কুমারের টুইটার পেজের সৌজন্যে।
বাড়িতে ‘টয়লেট’ না থাকলে প্রেম জানলা গলে পালাতে পারে, বিয়েও ভেঙে যেতে পারে! হ্যাঁ, অক্ষয় কুমারের নতুন ছবির বিষয় এটাই। শুক্রবার মুক্তি ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’র। অনুপ্রেরণা প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান। যেটা ভেবে দেখার তা হল, এত দিন ভারতকে স্বচ্ছ করার অভিযানে বহু সেলিব্রিটিকে ঝাড়ু হাতে প্রচার করতে দেখেছি আমরা। এ বার গোটা একটা ছবির বিষয় সেই স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ঘরে ঘরে শৌচালয় প্রকল্প। গোটা একটা ছবি জুড়ে আমাদের সমাজের একটি বড় সমস্যা।
‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর প্রচারে তারকারা। ছবি— সংগৃহীত।
আরও পড়ুন, হ্যারি-সেজলের প্রেম দেখতে গিয়ে বিদেশমন্ত্রীকে টুইট করলেন দর্শক, কেন?
জানেন, এই ছবির নাম শুনে নাকি হাসি থামেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তবে সে হাসির কারণ অবশ্য কারও জানা নেই। টয়লেট ছবি নিয়ে গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন অক্ষয়। দেশের বিভিন্ন অংশে টয়লেট তৈরি করে দেবেন বলেও জানিয়েছেন অক্ষয় নিজেই। ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী নায়ক বলেছিলেন, ‘‘এ দেশে শৌচাগার নিয়ে বেশ সমস্যা রয়েছে। আর তা নিয়ে ছবি তৈরির ভাবনা আমার বেশ ভাল লেগেছিল। কাহিনি শুনেই আমি ছবিটিতে অভিনয় করার জন্য রাজি হয়ে যাই।’’
হ্যাঁ, দেশকে এ ধরনের বিষয় নিয়ে সচেতন করতে প্রচার চলে। আজকাল ছবিও হচ্ছে। কিন্তু আসল চিত্রটা কি বদলাবে? যে দেশে সকালে ঘুম থেকে উঠে একটা বড় অংশের মানুষ প্রাতঃকৃত্যের জন্য খোলা মাঠে দৌড়ন, তাঁদের কাছে বাড়িতে শৌচালয় তৈরির প্রয়োজনীয়তা কতটা সেটাও তো বোঝানো দরকার। জন্মাবধি যাঁদের মাঠে, নদীনালা, ডোবার প্রান্তে, খাটা পায়খানায় যাওয়ার অভ্যেস, তাঁদের জল ঢেলে মল নিষ্কাশনের প্রয়োজন পড়ে না বলে, সে সম্বন্ধে কোনও ধারণাও কিন্তু থাকে না। তা না হলে ট্রেনে, সুলভ শৌচালয়ে, বাস টার্মিনাসের টয়লেটে এমন বীভৎস নোংরা অবস্থা হয়তো আমাদের দেখতে হত না।
আরও পড়ুন, স্বপ্নের মধ্যে পাপ, পাপের ভয় বাস্তবেও, আসছে বিনয় পাঠকের নতুন ছবি ‘ডার্ক ব্রিউ’
এরই মাঝে এক বার মনে করা দরকার, ভারত সরকারের এই স্বচ্ছ ভারত অভিযান কী?
২০১৪-য় ভারত সরকার একটি জাতীয় প্রকল্প গড়ে তোলে, যার মাধ্যমে দেশের ৪০৪১টি শহরের রাস্তা এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২রা অক্টোবর দিল্লির রাজঘাট সমাধিতে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯-এর ২রা অক্টোবরে মহাত্মা গাঁধীর দেড়শোতম জন্মবার্ষিকীর মধ্যে এই কাজ শেষ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অভিনেতা আমির খান। ছবি— সংগৃহীত।
এ ক’বছরে গ্রাম ও শহরের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের উৎসাহ প্রদান অর্থ সাহায্যও করছে ভারত সরকার। কিন্তু লোকসভার রিপোর্ট কী বলছে? দেশের প্রথম ডেটা জার্নালিজম ওয়েবসাইট ইন্ডিয়াস্পেন্ড-এ সেই রিপোর্টের তথ্য রয়েছে।
তার মানে সব মিলিয়ে ‘দিল্লি আভি দূর হ্যায়’!
‘‘প্রেমিকরা তো তাঁদের প্রেমিকার জন্য তাজমহলও তৈরি করেছেন, আর আমরা একটা শৌচালয় বানাতে পারব না?’’ ছবির ট্রেলারেই এ কথা শোনা গিয়েছে নায়কের মুখে। রিপোর্ট আর ট্রেলার দেখে বাস্তবের জীবনে কি সত্যিই ‘টয়লেট’ আর ‘প্রেমকথা’ মিলতে পারবে কোনও দিন? বাড়ি বাড়ি টয়লেট আর প্রেমে ভরে উঠবে ভারত?
স্টেজ তৈরি। ছবির মুক্তিও হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ছবির বিষয়কে ‘থাম্বস আপ’ও দিয়েছেন। এ বার ছবি দর্শকের মনে ধরলে আরও মাইলেজ পাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্বচ্ছ’ প্রকল্প।