মাছ মিষ্টি অ্যান্ড ফ্যামিলি

হালখাতা, মিষ্টির বাক্স, ক্যালেন্ডার আর নতুন জামার মন ভাল করা গন্ধ—এ সবই বাঙালির খুব চেনা অনুষঙ্গ। পয়লা বৈশাখের সনাতন সাজকথা। তবে আজকের প্রজন্মের সঙ্গে এর যোগ কতটুকু? পয়লা বৈশাখ মানে কী তাদের কাছে? শুনলেন মধুমন্তী পৈত চৌধুরীসারা বছর জেনারেশন ওয়াই যদি হয় বং, এই একটা দিন তারা বাঙালি। অন্তত আজকের দিনে তেমনটাই তারা বলতে চায় নিজেদের। সঙ্গে আশেপাশের মানুষকেও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২২
Share:

আমরা বাঙালি

Advertisement

সারা বছর জেনারেশন ওয়াই যদি হয় বং, এই একটা দিন তারা বাঙালি। অন্তত আজকের দিনে তেমনটাই তারা বলতে চায় নিজেদের। সঙ্গে আশেপাশের মানুষকেও। টিপিক্যাল বাঙালি সাজগোজ, খাওয়া-দাওয়া আর বাংলা সিনেমার সঙ্গে তাই আগে ভাগেই ডেট ফিক্স়ড করে রাখে কর্মব্যস্ত জেন ওয়াই। আর বরাতজোরে যদি অফিস ছুটি থাকে, তবে সময়টা শুধুই গোছানো থাকে পরিবারের জন্য। পরিবারের সঙ্গে পাওয়া এক টুকরো ছুটির অবসর বৈশাখী দুপুরকে ভরিয়ে তোলে মিষ্টি মধুর স্মৃতিমেদুরতায়।

Advertisement

সাজকাহন

দিল্লিতে কর্মরতা সোমঋতা ঘোষের কাছে পয়লা বৈশাখ মানে, ‘‘ট্র্যাডিশনাল মাস্ট।’’ হাল্কা সুতির শাড়ি, যেমনটা অফিসে ক্যারি করা যায়। কানে মাঝারি ঝুমকো। হাতে দু-চার গাছা বালা। ব্যস! সাজ কমপ্লিট। অফিসে এথনিক ডে না হলেও বাঙালিদের দেখাদেখি অনেক

অ-বাঙালিও কিন্তু সেজে ওঠেন নববর্ষের বাঙালিয়ানায়, বলছিলেন সোমঋতা। আবার কলকাতার এক কলেজের শিক্ষিকা অঙ্কিতা মুখোপাধ্যায়ের পছন্দ, প্যাস্টেল শেডের হাল্কা ঢাকাই। অফিসে মেয়েদের শাড়ি পরার সুযোগ থাকলেও, কর্পোরেট সংস্থায় ছেলেদের পাঞ্জাবি পরায় কিন্তু আছে অনেক ঝক্কি। তাই অফিসের পরে পাজামা-পাঞ্জাবিতে সাজতে পছন্দ করেন অনেক বাঙালি যুবক। আর বাড়িতে থাকলে তো কথাই নেই! ‘‘পাঞ্জাবি মাস্ট,’’ বললেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অহিম পাল।

খাই খাই

পয়লা বৈশাখের মুখ্য আকর্ষণ কিন্তু লুকিয়ে আছে বাঙালি রসনায়। সারা বছরের পিৎজা, বার্গার, কেএফসি আজ লিস্ট থেকে একেবারে বাদ। জেন ওয়াইয়ের বেশির ভাগের পছন্দ আজকের দিনে কোনও বাঙালি রেস্তোরাঁয় জমিয়ে ভুরিভোজ। মালাইকারি থেকে ভাঁপে, পাতুরি থেকে মুইঠ্যা— মাছের নানা রকম পদ চেখে দেখতে জেন ওয়াইয়ের লম্বা লাইন দেখা যায় শহরের বিভিন্ন বাহারি খাওয়ার দোকানে। অনেকে আবার বাড়িতে মা-জ্যেঠিমার হাতে রাঁধা কচি পাঁঠার ঝোলেই খুশি। তবে কর্মসূত্রে যারা কলকাতার বাইরে, তারাও কিন্তু সেই শহরে খুঁজে পেতে বার করে নেন একটি বাঙালি রেস্তোরাঁ। বেঙ্গালুরুতে বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত অঙ্কুর ঘোষ যেমন বলছিলেন, ‘‘আলাদা করে পয়লা বৈশাখ তো এখানে বুঝি না। তবে ডিনারটা কোনও বাঙালি রেস্তোরাঁতেই করব।’’ আর খাওয়ার টেবিলে জমবে দেদার আড্ডা।

নো মদ

সাজ হল, খাওয়া হল আর নেশা? নৈতিকতার দায় বলুন বা সংস্কৃতির গুঁতো—অ্যালকোহল প্রিয় জেনওয়াই কিন্তু আজকের দিনে সেই সংশ্রব থেকে দূরেই থাকতে চান। অহিমের কথায়, ‘‘মদ আজ স্ট্রিক্টলি নো নো!’’

ফ্যামিলি টাইম

সারা বছরের জন্য বন্ধু-সহকর্মী তো আছেই। পয়লা বৈশাখে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গেই ছুটি কাটাতে বেশি পছন্দ করছেন জেনওয়াই বাঙালি। আবার যারা বন্ধু ছাড়া থাকতেই পারেন না, তারা আয়োজন করছেন হাউজ পার্টির। তবে বাইরে নয়, দিনটা কাটুক ঘরেই প্রিয়জনদের সঙ্গে। দাদু-জ্যেঠু-কাকুর ফেলে আসা দিনের গল্পে আজকের প্রজন্ম হয়তো খুঁজে দেখতে চায়, তারা কী কী মিস করছে! আবার তর্কেরও ঝড় ওঠে বাড়ির ড্রয়িংরুমে। আমাদের জেনারেশন মানেই কিন্তু শুধু ক্যান্ডি ক্রাস খেলা নয়। সুযোগ পেলে, ঢিল মেরে বাগানের কাঁচা আম পাড়তে আমরাও ভালোবাসি, বলতেই পারে কোনও এক দাদুর আদরের নাতি।

বায়োস্কোপে

নববর্ষকে নজরে রেখে গত কয়েক বছর ধরেই এ দিন নতুন নতুন বাংলা ছবি মুক্তি পায় শহরের নানা প্রেক্ষাগৃহে। সারা বছর যদি ব্র্যাড পিট বা রণবীর সিংহের প্রেমে হাবুডুবু খায় বঙ্গতনয়ারা, এই একটা দিন কিন্তু দেব বা প্রসেনজিতকে রুপোলি পর্দায় দেখতে খারাপ লাগে না তাদের। মা-জ্যেঠিমাদের সঙ্গে নিয়ে তারা বেরিয়ে পড়েন কোনও এক শঙ্খচিলের খোঁজে। এ ছাড়া মাল্টিপ্লেক্স তো আছেই, বছরের যে কোনও বিশেষ দিনে বিশেষ রঙে রঙিন হওয়ার জন্য।

শুধু তোমারি জন্য

ইংরাজী ক্যালেন্ডার দেখেই তৈরি হয় অফিসের রোস্টার। ফিক্সড হয় প্রেমিকার সঙ্গে ডেট, বন্ধুদের সঙ্গে আউটিং, ইএমআই দেওয়ার দিনটাও। বিয়ে-পুজো বা উপনয়ন ছাড়া সারা বছর বাঙালি ক্যালেন্ডারে তেমন চোখ পড়ে না জেন ওয়াইয়ের। তবে তাদের সবটুকু বাঙালিয়ানা উজাড় করে বৈশাখের এই প্রথম দিনটাকে তারা বলতে চায়, ‘‘আমরা আছি। শুধু তোমারি জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন