Hawa

শ্রীভূমির বুর্জ খলিফা না কি নন্দন প্রাঙ্গণ! বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘চঞ্চল’ স্রোত

উপচে পড়ছে ভিড়। ‘হাওয়া’ দেখার ভিড়। সত্যিই যেন উৎসব। এটা কি চঞ্চলকে দেখার উৎসব না কি বাংলাদেশের ছবি দেখার উৎসব?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৩১
Share:

বাংলাদেশের ছবি দেখার কেন এত উত্তজনা? ফাইল-চিত্র।

‘সাদা সাদা, কালা কালা…’।

Advertisement

শনিবার কলকাতার নন্দন প্রাঙ্গণে কান পাতলে যেন শোনা যাচ্ছিল এই সুরই। থিক থিক করছে মাথা। পাঁচ হাজার মানুষ তো হবেই। শেষ হয় তো শ্রীভূমির দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে এমন ভিড় দেখা গিয়েছিল। প্রতিমা দর্শনের উত্তেজনার পর মনে হয় এই চঞ্চল দর্শনের ভিড়। প্রদর্শিত হচ্ছে চঞ্চল চৌধুরীর ছবি ‘হাওয়া’। বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে এত উত্তেজনা! কেন?

বেহালার সুদেষ্ণা বিশ্বাস আর মধ্যমগ্রামের পূর্বাশা ঘোষ। দুই বন্ধু। মিডিয়া সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ১১টায় কলেজের ক্লাস শেষ করেই সোজা নন্দনে। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সন্ধে ৬টায় শো। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার অপেক্ষা। আনন্দবাজার অনলাইনকে পূর্বাশা বলেন, “আমাদের কলেজের স্যর ‘হাওয়া’র গান শুনিয়েছিলেন। তার পরই আমাদের কয়েক জনের মধ্যে এই ছবিটা দেখার আগ্রহ তৈরি হয়।” অন্য দিকে কেষ্টপুরের অরিত্র গায়েনের কপালটাই খারাপ। আগে গিয়েও খুব একটা লাভের লাভ হল না। মিলল না জায়গা। কয়েক ঘণ্টা লাইন দিয়েও ব্যর্থ। অরিত্রর কথায়, “বাংলাদেশি ছবি বলে নয়। এই নির্দিষ্ট ছবির প্রতি দর্শকের আকর্ষণের কারণ ওই গান। তবে বাংলাদেশের অন্যান্য ছবি দেখার জন্যও কি এত লাইন হয়, তা হয়তো নয়।”

Advertisement

শনিবার রাতে নন্দন প্রাঙ্গণে উপচে পড়ল ভিড়। নিজস্ব-চিত্র।

কেন এত পাগলামি দর্শকের? এটা কি বাংলাদেশের ছবি দেখার ভিড়? না কি চঞ্চল চৌধুরীর জনপ্রিয় ছবি দেখার ভিড়। লাইনে দাঁড়িয়েই ভিড় করা দর্শকের একাংশ তো কলকাতার ছবি বনাম বাংলাদেশের ছবির তর্কে মজলেন। এই ভিড়ের পাঁচ শতাংশও যদি কলকাতার বাংলা ছবি দেখার জন্য হত। তা হলে হয় তো ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’— এই স্লোগান আওড়াতে হত না। তবে কি বাংলাদেশের ছবি অনেক নম্বরে গোল দিয়ে দিয়েছে কলকাতার ছবিকে?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক শুভদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মত তেমনটাই। তিনি বললেন, “বাংলাদেশের ছবির এই নিখুঁত কাজ, ন্যাচারাল আলোয় শুট। এত নিখুঁত ছবি সত্যিই আমাদের এখানে তৈরি হয় না। কনটেন্টের দিক থেকে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। তবে এটা ভুললে চলবে না, ফ্রি-তে শনিবার ‘হাওয়া’র মতো ছবি বলে এমন ভিড়। কারণ ‘হাওয়া’র গান ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য করতে হবে বাংলাদেশের বাকি ছবিগুলোর দেখার জন্যও এমন ভিড় হচ্ছে কি? এখানে চঞ্চল চৌধুরী একটা ফ্যাক্টর। তা ছাড়া ‘হইচই’ প্ল্যাটফর্মের দৌলতে তো বাঙালির হাতের মুঠোয় এখন এমন অনেক কনটেন্ট।”

ভবানীপুরের নবেন্দ্র বসু এবং তাঁর স্ত্রী চৈতালী বসু দু’জনে মনেই করতে পারছেন না শেষ কবে হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখেছেন। কর্তা-গিন্নি দু’জনেই কিন্তু চলচ্চিত্র নিয়ে চর্চা করতে ভালবাসেন। নবেন্দ্রবাবু বললেন, “ইউটিউবে হাওয়ার এই ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গান শুনেই ইচ্ছে হয়েছিল সিনেমাটি দেখতে যাওয়ার। তার পর যখন শুনলাম ছবিটি দেখানো হবে, তাই দু’জন মিলে দেখতে গেলাম। প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল।”

দেশপ্রিয় পার্কের শুভদীপ, ভবানীপুরের নবেন্দ্র, কেষ্টপুরের অরিত্র, বেহালার সুদেষ্ণা, মধ্যমগ্রামের পূর্বাশা— সকলের মতই এক জায়গায় এসে মিলে যাচ্ছে। এই ছবির ক্ষেত্রে চঞ্চল চৌধুরী যদিও একটা ফ্যাক্টর। তবে আমাদের কলকাতার বাংলা ছবির পথ চলা এখনও অনেকটা বাকি। ঋত্বিক ঘটকের উক্তি ‘ভাবো ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো...’ এই আপাতত হতে পারে টলিপাড়ার মূলমন্ত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন