লিখে লিখে কথা বলো

ফূর্তি হোক বা দুঃখ। টেক্সটিং-ই একমাত্র ভরসা। লিখছেন সোমঋতা ভট্টাচার্যযবে থেকে এসএমএস এসেছে বাজারে, বকবক কিছুটা কমেছে, বা বেড়েছেও বলা যেতে পারে! ক্লাসরুম, অফিস মিটিং, সিনেমাহল- অর্থাৎ, যে সব জায়গায় জোরে জোরে কথা বলায় বাধা, সেখানে লিখে থুড়ি টাইপ করে কথাই একমাত্র উপায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩৪
Share:

মুশকিল ১: ঠিক দুপুর বারোটায় করার কথা ফোনটা। খুব জরুরি ফোন। একজনের ইন্টারভিউয়ের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। ব্যস! এগারোটা থেকে শুরু পেটের মধ্যে প্রজাপতি ওড়াউড়ি, করিডরের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি। বসেই থাকা যাচ্ছে না একটানা চেয়ারে!

Advertisement

মুশকিল ২: ফোনটা সমানে বেজেই চলেছে। ইচ্ছে করছে না ধরতে। অথচ একেবারে উত্তর না দেওয়াটা অত্যন্ত অভদ্রতা হয়ে যাবে। মেজাজটা খিঁচড়ে যাচ্ছে।

এত কথা বলার দরকারটা কি? যখন হাতের খুটখাটে মিটে যায় সমস্যা!

Advertisement

যবে থেকে এসএমএস এসেছে বাজারে, বকবক কিছুটা কমেছে, বা বেড়েছেও বলা যেতে পারে! ক্লাসরুম, অফিস মিটিং, সিনেমাহল- অর্থাৎ, যে সব জায়গায় জোরে জোরে কথা বলায় বাধা, সেখানে লিখে থুড়ি টাইপ করে কথাই একমাত্র উপায়। তারও অনেক পরে তো ব্যাটিং পিচে ‘হোয়াট্‌সঅ্যাপ’ নামক বস্তুটির আগমন এবং প্রবল ছক্কা।

মেট্রোর বন্ধ দরজায় হেলান, বাসের জানলার সিটে মগ্ন, অফিসে কোণা মিললেই মাথা নিচু, মায় ফুটপাথে পর্যন্ত লোকের ঠেলা খেতে খেতে পদচারণা। হ্যাঁ, ‘হোয়াট্‌সঅ্যাপ’-এর ‘কল্যাণে’ এমনটাই ছবি আশপাশের। কোথায় যেন একটা লেখা চোখে পড়েছিল, এই তো ক’দিন আগেই। যার মর্মার্থ অনেকটা এ রকম, ‘আপনার হঠাৎ খুব ফূর্তি হলে খানিক নেচে নিন, দুঃখ হলেও তা-ই করুন। ঘাবড়াবেন না, কেউ আপনাকে দেখছে না। সকলে নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত।’

আদতে তো বিষয়টা একেবারেই তা-ই। কথা যাচ্ছে কমে। মুখের বিশ্রাম। শুধু আঙুলগুলো খেটে যাচ্ছে- টাচ স্ক্রিনে, কি-প্যাডে। এ গলি থেকে ও গলিতে, এ ঘর থেকে ও ঘরে, এ খাট থেকে ও সোফায়। তবে, এ-ও তো কথাই। বরং আরও নিভৃতে। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, যে কোনও অভ্যাসই নেশার পর্যায়ে গেলে তা ক্ষতিকর। তবে, ‘টেক্সটিং’ অর্থাৎ এসএমএস বা হোয়াট্‌সঅ্যাপ অনেক মুখচোরা মানুষকে বেশ খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে। যাঁদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে মরে অজস্র কথা, স্রেফ প্রকাশে অস্বস্তি বলে মুখ ফোটে না, তাঁদের কাছে ‘টেক্সটিং’ একটা বিরাট ভরসার জায়গা।

সেই সঙ্গে, ‘হোয়াট্‌সঅ্যাপ’ তো এখন নানা কাজের ক্ষেত্রেও অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌজন্যে ‘হোয়াট্‌সঅ্যাপ’-এর হরেক গ্রুপ। অফিসের গ্রুপ, বিজনেস গ্রুপ, যে কোনও প্রোজেক্টে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে গ্রুপ। সেই সব গ্রুপ-এ ঝটপট হয়ে যাচ্ছে তথ্য চালাচালি। মিটিং-এর সময় থেকে পরিকল্পনায় কোনও বদল- শুধু একটা গ্রুপে সংক্ষেপে একটু জানান দেওয়া। অমনি সে খবর ফোন থেকে ফোনে।

তবে প্রবীণদের কিন্তু বড় অভিমান, ছেলেমেয়েরা, অল্পবয়সীরা জগৎ ভুলে সারা দিন ফোন নিয়েই মেতে থাকে। কথা নেই, দেখাসাক্ষাৎ নেই। কোন্ এক আজব দুনিয়ার বাসিন্দা যেন তারা সকলে! অবশ্য হাতের ছোঁয়ায় কথা বলার যে আরাম, তাতে ধীরে ধীরে বেশ ভালই মজছেন প্রবীণেরাও। ফেসবুক, হোয়াট্‌সঅ্যাপ নিয়ে দিনের অনেকটা সময় দিব্যি কেটে যাচ্ছে তাঁদেরও।

তবে সত্যিই এ যেন আরও ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা। পরিবার তো এখন ছোট হতে হতে ছোটতর। ঘাড়ের উপরে চেপে বসা প্রোফেশনাল লাইফ ছুটিয়ে মারে। দু’দণ্ড জিরোনোর সময় নেই কোথাও বসে। তাই হাতের মুঠোয় থাকা জিনিসগুলোই বেঁধে বেঁধে রাখে। মনটা বেশ খারাপ। পছন্দের মানুষটির প্রোফাইলে তাকে অনলাইন দেখাচ্ছে। টুকটাক কিছু হাল্কা কথা, দু’চারটে স্মাইলি চালাচালিতে পলকে মন ফুরফুরে। হ্যাঁ অফিসে বসেও, যোজন দূরে থেকেও।

শুধু একটা ‘কী রে?’ তার পরে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা। ও প্রান্ত থেকে উত্তর আসছে, লেখা উঠছে…..টাইপিং!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন