দীপাবলির রাতে হোমের আয়োজনে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
সামনে হোমের আগুন। যজ্ঞে বসেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সোমবার, কালীপুজোর রাত থেকে এই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। এর আগে কালীপুজোয় পরিচিতের বাড়িতে ঢাক বাজাতে দেখা গিয়েছে প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতাকে। কপালের লাল তিলক জানান দিয়েছে, তিনি পুজো-অর্চনার বিরোধী নন।
কিন্তু তাঁকে বাড়িতে যজ্ঞ করতে দেখে একটু হলেও হকচকিয়েছে টলিপাড়া। সবিস্তার জানতে পরমব্রতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। তিনি সাড়া দেননি। তবে কথা বলেছেন তাঁর স্ত্রী পিয়া চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “পরম বরাবর ঈশ্বরভক্ত। দেবী কালীকে মানে। বাড়িতেও ঠাকুরঘর আছে। সেখানে ধুপ দেখানো হয়। পরম নাস্তিক—এই ভাবনা একেবারেই ভুল।” তিনি এও জানিয়েছেন, বাড়িতে কালীপুজো হয়নি। অভিনেতার ইচ্ছায় হোমের আয়োজন করা হয়েছিল। কেন যজ্ঞ করার ইচ্ছা হল, সে কথা অভিনেতা ভাল বলতে পারবেন।
দিন কয়েক আগে অভিনেতার গলায় লাল সুতোয় বাঁধা মাদুলিও দেখা গিয়েছে। ক্রমশ ঈশ্বরের প্রতি কি আত্মনিবেদন বাড়ছে অভিনেতার? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য পিয়া দেননি। তাঁর যুক্তি, “প্রত্যেকের ভক্তি নিজের কাছে। ফলে, এই নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। যেমন, আমার তেমন ঈশ্বরভক্তি বা ঈশ্বরপ্রীতি নেই। তাই নিয়ে পরম কখনও কিছু বলে না। আবার আমিও ওর বিশ্বাসকে সম্মান করি।”
অভিনেতাকে নিয়ে এ রকম কৌতূহল জাগার আরও কারণ আছে। গত দু’বছর ধরে তিনি ভূত চতুর্দশীতে দর্শকদের ভৌতিক সিরিজ় উপহার দিয়েছেন। তখনই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সিরিজ়ের পরিচালক বাস্তবে এ সবে বিশ্বাসী? দেব-দেবী, পূজা-অর্চনা, মন্দিরে মানত কিংবা ভৌতিক অভিজ্ঞতা- এ সবেই বা তাঁর কতটা বিশ্বাস? তিনি কি তা হলে উপোস করেন? মন্দিরে মানত রাখেন? সেই প্রার্থনা পূরণ হয়?
তাঁর উত্তর ছিল, “পুজো দেব বলে কখনও আলাদা করে নিজে থেকে কোথাও যাইনি। তবে হ্যাঁ, কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানে যদি ঐতিহাসিক মন্দির বা মসজিদ থাকে তা হলে সেটা অবশ্যই দেখতে যাই। বলতে পারেন, বিশ্বাস নিয়েই সেই ধর্মীয় স্থানে পা রাখি।” এই জায়গা থেকেই কালীপুজো তাঁর কাছে বিশেষ দিন। সেটা ছেলেবেলায় বাজি পোড়ানোর জন্য। বড় হয়ে দেবী কালিকার মাহাত্ম্য তাঁকে বেশি আকর্ষণ করেছে। পরমব্রতের কথায়, “মা কালীর মতো দেবী বিরল। বাঙালিরা দশমহাবিদ্যার আরাধনার মাধ্যমে নারীশক্তির আরাধনা করে। কখনও সেই আরাধনায় দেবীর কোমল রূপ। কখনও কঠিন। আমার চোখে দেবী কালিকা রুদ্র রূপের প্রতীক। তিনি যেন শক্তির আধার।” যদিও তিনি উপোস করে কোনও দিন দেবীর পুজো দেননি।
পরমব্রত কোন মন্দিরে পুজো দিতে যান? যেখানে গেলেই মনে হয়, জোড়হাতে মাকে ডাকলে তিনি সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন?
জবাব দিতে গিয়ে পরমব্রত ফিরে গিয়েছিলেন অতীতে। তখনও তাঁর মা সুনেত্রা ঘটক জীবিত। চট্টোপাধ্যায় পরিবারে খুব যে পুজোর চল ছিল, তেমনটা নয়। পরিচালক-অভিনেতার কথায়, “তবু শেষের দিকে মা বাড়ির নানা কাজে বা অনুষ্ঠানে পুজো দিতে যেত। মায়ের পছন্দ কালীঘাট। সেই সময় মায়ের সঙ্গে আমিও কয়েক বার সেই মন্দিরে গিয়েছি। বার কয়েক যাওয়ার কারণেই সম্ভবত ওই মন্দিরের সঙ্গে আত্মিক টান গড়ে উঠেছে।”