টলিউডের রং কি বদলাবে?

বাংলায় গেরুয়া শক্তির উত্থান। সেই জোয়ারে গা ভাসাবে কি টলিউড? প্রশ্ন তুলল আনন্দ প্লাসবাংলায় গেরুয়া শক্তির উত্থান। সেই জোয়ারে গা ভাসাবে কি টলিউড? প্রশ্ন তুলল আনন্দ প্লাস

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০০:০১
Share:

তারকা প্রার্থীর চমক এই বছরের লোকসভা নির্বাচনেই প্রথম নয়। তারকার গ্ল্যামারকে বাজি ধরে অনেক রাজনৈতিক দলই ভোটের ময়দানে লড়েছে। তবে টলিউডের শিল্পীদের উপরে বাংলার শাসকগোষ্ঠী গত আট বছরে যে ভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, সেই দৃষ্টান্ত বোধহয় বাংলায় বিরল। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ব্রিগেড সমাবেশ... শাসকগোষ্ঠীর যে কোনও জনসংযোগকারী কর্মকাণ্ডে টলিউডের উপস্থিতি নজরকাড়া। ছোট পর্দার নামজাদা শিল্পী থেকে বড় পর্দার সফল অভিনেতা, কেউই এই বৃত্তের বাইরে নন। সেই ধারায় কি এ বার কোনও ছেদ ঘটবে? গেরুয়া শক্তির উত্থানে বাংলায় প্রশ্নের মুখে শাসকদল। সেখানে তাঁরা কি পারবেন টলিউডের উপরে আধিপত্য কায়েম রাখতে?

Advertisement

সমান্তরাল সিন্ডিকেট?

Advertisement

অরূপ বিশ্বাস ও স্বরূপ বিশ্বাস টলিউডে যে দাদাতন্ত্রের বুনিয়াদ কায়েম করেছেন, গেরুয়া ঝড়ে তা কি কোনও ভাবে ধাক্কা খাবে? বিরোধীদের অভিযোগ, ইট-সিমেন্টের সিন্ডিকেটের মতো টলিউডেও সিন্ডিকেট চালান দুই ভাই। দলবদল হলে কি সেই সিন্ডিকেটের ভিত নড়বড়ে হবে? গড়ে উঠবে সমান্তরাল কোনও সিন্ডিকেট? প্রশ্ন উঠছে নানাবিধ।

ভেঙ্কটেশের ভবিষ্যৎ?

এক দিকে নির্বাচনের ঘণ্টা বাজল। তার কিছুটা আগেই রোজ ভ্যালি কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেফতার করল সিবিআই। রাজনীতির অঙ্ক যাঁরা বোঝেন, তাঁরা জানেন ঘটনা দু’টি নিছক সমাপতন নয়। বস্তুত, টলিউডের শিল্পীদের রাজনৈতিক মঞ্চে তুলে আনার ক্ষেত্রে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। শিল্পীদের সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির পথ যত তারা সুগম করেছে, ততটাই তাদের ব্যবসারও প্রতিপত্তি বেড়েছে। যদিও মোহতার গ্রেফতারির পরে পয়লা নম্বর প্রযোজনা সংস্থা বিপাকে। আটকে তাদের ঘোষিত অনেক প্রজেক্ট। প্রশ্ন উঠছে ভেঙ্কটেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও। তেমন পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্য বাঁচাতে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস কি শিবির বদলাবে?

তারকা বনাম তারকা

তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়েছেন মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, দেব। তাঁরা তিন জনই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কেন্দ্রে জয়ী। অন্য দিকে গেরুয়া দলের হয়ে বিজয়ী লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বদলে যাওয়া রাজনৈতিক আবহে টলিউডের অনেকেই হয়তো চলতি হাওয়ার পন্থী হবেন। সে ক্ষেত্রে বিকল্প মুখ হিসেবে কারা উঠে আসবেন? টলিউডের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের উত্থান সমীকরণে বদল আনতে পারে। পুলিশের লাঠি খেয়ে, বিরোধীদের চোখে চোখ রেখে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রণং দেহি চেহারায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। অনেকের মতে, বিজেপির আর এক নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এত দিন ততটা সক্রিয় ছিলেন না। এ বার কি তিনিও টলিউড রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা নেবেন? আবার রূপা-লকেটের পারস্পরিক সম্পর্কে বদল আসতে পারে বলেও মত অনেকের। রূপাকে কি ছাপিয়ে যাবেন লকেট? অন্য দিকে তৃণমূলের হয়ে আসানসোল নির্বাচনী কেন্দ্রে লড়ে পরাজিত মুনমুন সেন। তাঁর অসতর্ক মন্তব্যের জন্য শাসকদলকে অনেক সময়ে বিপদের মুখেও পড়তে হয়েছে। তিনিও কি অন্য রকম ভাবতে পারেন?

আড়ালের কান্ডারিরা

সরাসরি পার্টিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িত না হলেও দলের তরফেই প্রচারে সাহায্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী হালদার ও অরিন্দম শীলকে। গেরুয়া ঝড়ের প্রভাব ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা পড়বে, জানতে চাওয়া হয়েছিল ইন্দ্রাণীর কাছে। বৃহস্পতিবার তিনি ফোনে বলেন, ‘‘এখনও কাউন্টিং চলছে। আমি কাল সকালে কথা বলব।’’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। অরিন্দম শীল বললেন, ‘‘কে রং বদলাবে, কে বদলাবে না, জানি না। যারাই রং বদলাক, তারা এতই তুচ্ছ যে, তাতে সত্যের পরিবর্তন হবে না।’’ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘‘পরে কথা বলব।’’

চিরকালীন অভিযোগ

কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, তারকারা যতই সাংসদ হন, টলিউড ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে তাঁদের কোনও ভূমিকা দেখা যায় না। যে ইন্ডাস্ট্রির উপরে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর এত ভরসা, সেখানে বকেয়া টাকা না মেটানোর অভিযোগে শুটিং পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়। আর্টিস্ট ফোরাম ও প্রযোজকের কাজিয়ায় পরিস্থিতি সামলাতে হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। এত জন তারকা সাংসদ হওয়ার পরে তাঁরা কি ইন্ডাস্ট্রিকে সুসংগঠিত করতে একসঙ্গে কোনও পদক্ষেপ করবেন? না কি সেখানে রাজনীতির রং বজায় রেখে যে যাঁর ঘর গোছাবেন? সেই প্রশ্নেরও জবাব দিতে হবে তারকা সাংসদদের।

রাজনীতির ময়দানে রং বদলানোই স্বাভাবিক নিয়ম। আগামী দিনে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই হয়তো চলতি হাওয়ার সঙ্গী হবেন। সে ক্ষেত্রে শাসকগোষ্ঠী কোন পথে যাবে, সে দিকেও নির্ভর করবে ইন্ডাস্ট্রির নানা সমীকরণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন