অবশেষে...

টালিগঞ্জে সুস্মিতা সেন। অনেক জল্পনা-কল্পনা হলেও, এ বার পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়-য়ের ছবিতে তিনি। মিস ইউনিভার্স থেকে বাংলা ছবির পৃথিবীতে আসতে লেগে গেল ঠিক কুড়ি বছর আট দিন। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়।টালিগঞ্জে সুস্মিতা সেন। অনেক জল্পনা-কল্পনা হলেও, এ বার পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়-য়ের ছবিতে তিনি। মিস ইউনিভার্স থেকে বাংলা ছবির পৃথিবীতে আসতে লেগে গেল ঠিক কুড়ি বছর আট দিন। লিখছেন ইন্দ্রনীল রায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৪ ১৯:২৭
Share:

ঠিক কুড়ি বছর আট দিন পর ঘটল ঘটনাটা।

Advertisement

ম্যানিলাতে ২১ মে ১৯৯৪ সালে যে অষ্টাদশী বাঙালি সুন্দরী মিস ইউনিভার্স জিতে সারা দেশে চূড়ান্ত আলোড়ন ফেলেছিলেন, অবশেষে তিনি তাঁর প্রথম বাংলা ছবি করার সিদ্ধান্ত নিলেন দু’দিন আগে।

হ্যাঁ সুস্মিতা সেন বাংলা ছবি করছেন। এবং তাঁকে রাজি করিয়ে ফেলেছেন যিনি, সেই পরিচালকের নাম সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

দু’সপ্তাহ আগে আনন্দplus-কেই সৃজিত জানিয়েছিলেন তাঁর পরের ছবি ‘দুলালচন্দ্র ভড়ের আসল ভালবাসার গল্প’র কথা। সেখানেই তিনি বলেছিলেন যিশু সেনগুপ্ত ও ঋত্বিক চক্রবর্তী ছাড়া আরও দু’টি চরিত্রের কাস্টিং বাকি আছে তাঁর।

অবশেষে এই সপ্তাহের গোড়ায় সেই কাস্টিং ফাইনাল করে ফেলেন পরিচালক। নায়িকার চরিত্রে সুস্মিতা সেন যদি বড় চমক হয়, তাহলে চতুর্থ চরিত্রের কাস্টিংও কম চমকের নয়। সেই চরিত্রে অভিনয় করবেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সৃজিত যখন কনফারেন্সে সুস্মিতা সেনকে মুম্বইতে ধরলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলেই বোঝা গেল সুস্মিতা নিজে অসম্ভব এক্সাইটেড সৃজিতের ছবিতে কাজ করতে পেরে।

সেভড্ দ্য বেস্ট ফর দ্য লাস্ট

কিন্তু তা বলে ২০ বছর ৮ দিন লাগল বাংলা ছবিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নিতে?

প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন সুস্মিতা। হাসতে হাসতে বললেন, “এটুকুই বলতে পারি, আই হ্যাভ সেভড্ মাই বেস্ট ফর দ্য লাস্ট। তামিল ছবি দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে আমি কনশাস ছিলাম যে, পুরোপুরি কনফিডেন্ট না হলে করব না। আজ আমি কনফিডেন্ট।”

তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, ‘অটোগ্রাফ’ ছাড়া সৃজিতের সব ছবি তিনি দেখে ফেলেছেন। এবং এত দিন পর যে তিনি বাংলা ছবি করছেন সেই খবর জানার পর সুস্মিতার বাবা-ও অসম্ভব খুশি।

“বাবা শিমলাতে ছিলেন। শরীরও ভাল যাচ্ছিল না বলে অনেক দিন কথা হয়নি। কিন্তু বাবাকে যখন বললাম যে, বাংলা ছবি করছি বাবা যে কী খুশি হল, আমি বলে বোঝাতে পারব না,” বলেন ‘ম্যয় হু না’র সেই বিখ্যাত কেমিস্ট্রি টিচার।

সৃজিত একজন ফ্যাবুলাস হিউম্যান বিয়িং

কলকাতায় সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রথম সারির পরিচালক। অনেকের মতেই নম্বর ওয়ান। সে জন্যই কি সৃজিতের ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হলেন?

“নম্বর ওয়ান বলে ওর ছবি করতে একেবারেই রাজি হইনি। রাজি হয়েছি কারণ হি ইজ আ ফ্যাবুলাস হিউম্যান বিয়িং। আমি অনেক নম্বর ওয়ান দেখেছি জীবনে কিন্তু হিউম্যান বিয়িং হিসেবে তাঁদের সম্বন্ধে আমি এ রকম সার্টিফিকেট দিতে পারব না, যা সৃজিত সম্বন্ধে বলতে পারছি। সেই জন্যই ওর ছবি করছি,” বলেন সুস্মিতা।

সুস্মিতার এত বড় সার্টিফিকেট শুনে কনফারেন্স কলে আর কথা না-বলে থাকতে পারলেন না সৃজিত নিজেও।

“থ্যাঙ্ক ইউ, সুস্মিতা। এটা প্লিজ লিখবেন সুস্মিতার এই কথা শুনে আমি কিন্তু অসম্ভব ব্লাশ করছি,” বলতে বলতে হেসে ফেলেন সৃজিত।

আমি অনার্ড

যে সুস্মিতা সেনকে বহু পরিচালক অনেক অনুরোধ করেও রাজি করাতে পারেননি, সেই সুস্মিতা সেনকে কী করে রাজি করালেন সৃজিত?

“আমি প্রথম ওঁকে স্ক্রিপ্টটা পাঠিয়েছিলাম। স্ক্রিপ্টটা পড়ে সুস্মিতার এত ভাল লাগে যে, আমাকে উনি তাঁর বান্দ্রার ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠান। গিয়ে জানতে পারি স্ক্রিপ্টের সঙ্গে সঙ্গেই আমার প্রায় সব ছবি ডিভিডি-তে দেখে নিয়েছেন তিনি। তারপর আর কিছু নয়, পুরো ব্যাপারটাই আড্ডায় রূপান্তরিত হল। আই অ্যাম অনার্ড দ্যাট শি ইজ ডুইং দিস ফিল্ম,” বলছিলেন সৃজিত।

প্রসঙ্গত, ছবিতে সুস্মিতা সেন অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাওয়ার পর তিনি এই ছবির টাইটেলও পাল্টে ফেলেছেন। ছবির নাম আর ‘দুলালচন্দ্র ভড়ের আসল ভালবাসার গল্প’ নয়। এই ছবির নাম ঠিক হয়েছে ‘নির্বাক’।

“হ্যাঁ নামটা চেঞ্জ করলাম। কিন্তু সেটা সুস্মিতা ছবিতে আছে বলে নয়। করলাম কারণ, ‘দুলালচন্দ্র ভড়...’টা বড্ড কালচার স্পেসিফিক রেফারেন্স। বাংলার বাইরের মানুষ বুঝতে পারবেন না। ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটের কথা তো ছেড়েই দিন। সে জন্য ‘নির্বাক’ ফাইনালাইজ করলাম ছবির নাম হিসেবে। টাইটেল যে চেঞ্জ করতে পারি সেটা কিন্তু আগের ইন্টারভিউতে উল্লেখ করেছিলাম,” বলছেন পরিচালক।

২০০৩-এ ঐশ্বর্যা, ২০১৪-য় সুস্মিতা

টাইটেল চেঞ্জটা তো বোঝা গেল, কিন্তু সুস্মিতার সঙ্গে বান্দ্রার ফ্ল্যাটে আর কী নিয়ে আড্ডা হল?

“সুস্মিতা প্রথমেই জিজ্ঞেস করল, ছবির জন্য কত দিনের ডেট দিতে হবে। আর বাজেট কত? তারপর আমার বাকি ছবিগুলোর বাজেট জানতে চাইলেন। আমি বাজেটগুলো বলতে প্রায় আকাশ থেকে পড়লেন। আমি নিজেই তখন বললাম, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকম রিসোর্স নিয়েই কাজ হয়। তারপর কথায় কথায় তাঁর নিজের জীবনের অনেক কথা বললেন। বলিউডে তাঁর জার্নির কথা, ওঁর নিজের ড্রিম প্রোজেক্টের কথা। এটুকুই বলতে পারি, সুস্মিতা সেন হল কুইন্টএসেনসিয়াল বিউটি উইথ ব্রেনস্। ওঁর সঙ্গে আড্ডা মারা ইজ অ্যান এনরিচিং এক্সপেরিয়েন্স,” বলেন সৃজিত।

সুস্মিতাকে সাইন করাতে পেরে যথেষ্ট এক্সাইটেড প্রযোজক ভেঙ্কটেশ ফিল্মস-ও।

১৯৯৪

ম্যানিলার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত

২০০৩য়ে তারা ‘চোখের বালি’র জন্য সাইন করিয়েছিলেন ঐশ্বর্যা রাইকে। এবার এগারো বছর পর সুস্মিতা সেনকে। কেমন লাগছে তাদের?

“দেখুন, ঐশ্বর্যা বা সুস্মিতা বলে আলাদা এক্সাইটমেন্ট নয়, আমাদের কাছে যেটা ইম্পর্ট্যান্ট সেটা হল, ছবির স্ক্রিপ্ট। এই ছবির ক্ষেত্রে পরিচালক সৃজিতের মনে হয়েছে সুস্মিতা বেস্ট চয়েস। আমরা সেটাকে রেসপেক্ট করি। বাট ইট’স আ বিগ অনার ফর আস,” বলছেন ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনি।

সব মিলিয়ে যা পরিস্থিতি জুলাই মাসের ১৭ তারিখ কলকাতায় পৌঁছবেন সুস্মিতা। দু’দিন তিনি কস্টিউম ট্রায়াল করবেন এবং ১৯ তারিখ থেকে শুরু হবে শ্যুটিং।

“হ্যাঁ, ১৯ তারিখ থেকে শ্যুটিং শুরু। শেষে এটুকুই বলতে পারি এই ছবিটার স্ক্রিপ্টটা এত ভাল লেগেছে, আমি সত্যি ‘নির্বাক’ হয়ে গিয়েছি। শ্যুটিংটা এ বার ভাল করে করতে চাই,” ফোন রাখার আগে বলেন সুস্মিতা সেন।

সুস্মিতা সেনের শ্যুটিং! তা-ও আবার বাংলা ছবিতে!

অবশেষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন