হঠাত্ করে বাকি সব মার্শাল আর্টকে পেছনে ফেলে দিয়েছে ইজরায়েলের এক কমব্যাট ট্রেনিং। কলকাতা হোক কী শহরতলি, ধীরে ধীরে বহু ছেলেমেয়ে নিচ্ছেন এই প্রশিক্ষণ।
কেন?
নির্জন রাস্তায় একা হেঁটে চলেছেন। ভয় এই বুঝি কিছু হয়!
আপনি মহিলা হলে এ রকম অভিজ্ঞতা তো জীবনে কখনও না কখনও হয়েছেই আপনার।
সেই কারণেই ক্রাভ মাগা।
নাহ্, শুধু ক্যারাটে বা জুডোর মারপ্যাঁচ নয়। বক্সিং, স্যাভেট, মুয়ে থাই, উইংচু, জুডো, জুজুত্সু, রেসলিং, গ্র্যাপলিং সব ধরনের আত্মরক্ষার কলাকৌশল মিলিয়েই তৈরি এই রিয়্যালিস্টিক ফাইট ট্রেনিং কৌশল।
কথা হচ্ছিল ক্রাভ মাগা ইন্সট্রাক্টর এবং ট্রেনার আশিস রায়ের সঙ্গে। বালিগঞ্জের অভিজাত পাড়ায় তাঁর অ্যাক্টিভিটি ক্লাসে স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে আরও নানা বয়সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০-৪৫।
ক্রাভ মাগার বিশেষত্ব হল স্রেফ হাতের নানান ব্যবহার শিখে নিয়েই আত্মরক্ষা করা যায় দারুণ উপায়ে। বিভিন্ন ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ দিয়ে কমব্যাট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করানো হয় এই প্রশিক্ষণে। ক্যারাটে, জুডো কী জুজুত্সুর মতো অত পদ্ধতি নির্ভর ট্রেনিং নয় ক্রাভ মাগা। সারপ্রাইজ অ্যাটাকের ক্ষেত্রে তাই দারুণ কাজে লাগে।
কলকাতা শহরে তো এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সেটা কী করে হল?
উত্তরে আশিস বলেন, “কলকাতায় জনপ্রিয়তা দারুণ। কিন্তু আরও অনেকটা পথ চলা বাকি। আসলে এই ট্রেনিংটা অন্যান্য সেল্ফ-ডিফেন্স টেকনিকের চাইতে একটু ব্যয়বহুল। তবে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেন অর্গানাইজ করেছি। ভাল রেসপন্সও পাচ্ছি।”
ক্রাভ মাগা শিখতে কিছু বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়। শিল্ড, ফোকাসমিন্ট, পাঞ্চিং ব্যাগ, রাবার নাইফ ব্যবহার করে শেখানো হয় আত্মরক্ষার নানান কৌশল। হাতের কাছে পড়ে থাকা সামান্য লাঠি দিয়েও শেখা যায় অতর্কিত আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়। শেখানো হয় কিছু সঙ্গে না থাকলেও কী ভাবে বন্দুক, গোলাগুলির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
জিমের মতো খরচসাপেক্ষ টেলর মেড যন্ত্রপাতি নয়। ক্রাভ মাগা করতে বেসিক কিছু জিনিস হলেই চলে। সে কারণেই দেশের মিলিটারি বা ল-এনফোর্সমেন্টেও ক্রাভ মাগা এতটা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
কিন্তু অনেকেই তো এখন অত্যধিক ফিগার সচেতন। জিমে গেলে যে কাজটা হয়, ক্রাভ মাগা করলেও কি একই ফলাফল পাওয়া যেতে পারে? “দেখুন ক্রাভ মাগায় আমরা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজের ওপর জোর দিয়েই টেকনিকগুলো তৈরি করি। ঠিকঠাক করলে প্রায় ৮০০ ক্যালোরি বার্ন হতে পারে। এতে ফিগার কারেকশনের কাজও হয়ে যায়,” বলেন আশিসবাবু।
ক্রাভ মাগা যাঁরা শিখছেন, তাঁরাই বা কী বলছেন?
দশ বছরের অগ্নীশ রায় ক্রাভ মাগার ট্রেনিং নিচ্ছে প্রায় বছর তিনেক। অগ্নীশের মা তন্দ্রিমা ছেলেকে নিয়ে যান ক্রাভ মাগা শিখতে। বললেন, “আমি ছেলেকে সাত বছর বয়সে ভর্তি করে দিই এই ট্রেনিংয়ে। খুব রিয়্যালিস্টিক এই ট্রেনিং। সহজ উপায়ে আত্মরক্ষা করতে দারুণ সাহায্য করে। অগ্নীশের আত্মবিশ্বাসও অনেক বেড়ে গিয়েছে এই ট্রেনিং করে।” তন্দ্রিমা চান যত দিন সম্ভব, তত দিনই ছেলেকে এই ট্রেনিংয়ে রাখতে।
অগ্নীশ, দেবাংশী, অঙ্কুরের মতো ছোট ছেলেমেয়েরা তো বটেই, বড়রাও ভালবেসেই শিখছেন ক্রাভ মাগা।
নিজেদের প্রাইভেট ফার্মে কাজ করেন অধিরাজ গিদওয়ানি। বছরখানেকের একটু বেশি হল তিনি নিয়মিত ক্রাভ মাগার ট্রেনিং করছেন। বছর চব্বিশের অধিরাজ বললেন, “এত প্র্যাক্টিক্যাল আর ইজি সেল্ফ-ডিফেন্স ট্রেনিং খুব কম আছে। কোনও আর্টি ব্যাপার নেই। স্ট্রেট আর ডিরেক্ট। আমি করে খুব খুশি।” অধিরাজ যদিও ট্রেনার হিসেবে কাজ করতে খুব আগ্রহী।
কোনও দিন কি ভেবেছিলেন আপনার হাতে থাকা একটা সামান্য মোবাইল ফোন, গাড়ির চাবি, ব্যাগ বা ল্যাপটপ আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে দিশেহারা আক্রমণের হাত থেকে?
ক্রাভ মাগাই তো ভাবতে শেখাল।
প্রত্যেক মহিলারই ক্রাভ মাগা শেখা উচিত
সুদক্ষ, নিপুণ আত্মরক্ষার কৌশল এই ক্রাভ মাগা। খুব বাস্তবসম্মত একটা মার্শাল আর্ট।
আসলে যিনি এটা তৈরি করেছিলেন, একটা কথাই ভেবেছিলেন যে কী ভাবে অতর্কিত আক্রমণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। আমি তো বলব প্রত্যেক মহিলারই
উচিত ক্রাভ মাগা শেখা। এত প্র্যাক্টিক্যাল আর রিয়্যালিস্টিক সেল্ফ-ডিফেন্স
টেকনিক খুব কমই আছে। আমি এখনও রোজ প্র্যাকটিস করি
টোটা রায়চৌধুরী