রুবি হাসপাতালের কাছে বাড়ি থেকে তিনি নামতেই ঘিরে ধরলেন প্রতিবেশীরা। কেউ সেলফি তুলছেন তো কেউ তাঁর সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন। এর মধ্যেই গাড়িতে উঠলেন ‘ব্যোমকেশ’। শুরু হল আড্ডা:
লোকে বলছে হোলি ছাড়া এত আবির তারা একসঙ্গে কখনও দেখেনি কলকাতায়। এত হোর্ডিং ‘ব্যোমকেশ ফিরে এল’র...
(হাসি) ভালই তো। বেশ লাগছে... আপত্তি নেই। তবে এটাও দেখছি মানুষ কিন্তু কেক কেনা, চিড়িয়াখানা-সার্কাস যাওয়ার মধ্যেই ‘ব্যোমকেশ’ দেখার প্ল্যানও তৈরি করে নিয়েছেন।
এবং এ সবই হচ্ছে আমির খানের অত বড় ছবির সামনে। আরে আমির-রাজু হিরানি তো স্বপ্নের কম্বিনেশন। আমি নিজেও দেখতে চাইছি ‘পিকে’। কিন্তু এর মধ্যেও যে বাঙালি দর্শক আমাদের ‘ব্যোমকেশ’ দেখতে চাইছে তার জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
টলিউড বলছে, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ দিয়ে আবির হ্যাজ ফাইনালি অ্যারাইভড্ ...
দেখুন, এটা নিয়ে আমি কী বলব। এটুকুই বলব, প্রথম যখন ‘ব্যোমকেশ...’ করেছিলাম, কিছু লোকে বলেছিল আমাকে রোলটায় মানায়নি। তাদের মত ছিল অজিত ব্যোমকেশ হলে বেটার হত। তখন মনে মনে ঠিক করেছিলাম, যারা আমাকে খারাপ বলছে সেই মানুষগুলোকে দিয়েই ভাল বলাব। এটা আমি কোনও দিন কাউকে বলিনি।
ভিতরে একটা আগুন ছিল...
হ্যাঁ,ছিল তো বটেই। আর যারা বলেছিল, তাদের কথাটা ঠিক হলে তো তিন-তিনটে ছবিতে ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করতাম না।
কলকাতায় কিছু হোর্ডিংয়ে দেখা যাচ্ছে টেগোর, টেরেসা, সত্যজিত্ রায়ের পাশে আপনার ছবি...
ইস্! ওটার জন্য আমি অসম্ভব লজ্জিত। সে দিন আমার এক সহ-অভিনেতা বলছিল, ‘তুই মেয়েকে বাড়ির বাইরে বেরোতে দিস না। ইতিহাসটা ভুল জানবে।’ (হাসি) ওটা প্রযোজকের ইচ্ছে তাই আমার কিছু বলাটা ঠিক হবে না। এটুকুই বলব আমার অসম্ভব লজ্জা লেগেছে ওই পোস্টারটা দেখে।
ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকে আপনাকে স্ট্রং অ্যান্ড সায়লেন্ট টাইপ বলেন। টলিউডের রাহুল দ্রাবিড় আপনি?
ক্রিকেট আমার প্যাশন। ওটা ছাড়া বাঁচব না। এবং যাঁর কথা আপনি বললেন তিনি আমার অসম্ভব প্রিয় ক্রিকেটার। লক্ষ করে দেখবেন, আমরা তাঁর রান, তার টেকনিক, স্লিপে তাঁর ক্যাচিং এ সব নিয়েই কথা বলি। আই প্রেফার ইট দ্যাট ওয়ে। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো জীবন কাটাতে পারলে কাজটা অনেক শান্তিতে করা যায়।
সে জন্যই কি পার্টিতে আপনাকে কম দেখা যায়? সব ব্যাপারে বাইট দেন না...
এগুলোর দরকার আছে কিন্তু এই ব্যাপারগুলো কাজের থেকে বড় হয়ে উঠতে পারে না। যাঁরা করছেন তাঁরা হয়তো ব্যালেন্সটা করতে পারেন, আমি পারি না। তাই আমি একটু দূরে থাকি...
কখনও রাজনৈতিক মিছিলেও তো হাঁটতে দেখা যায় না আবিরকে...
হ্যাঁ, কোনও দিন না। কারণ আমি মনে করি আমার বেসিক কাজটা অভিনয় করা। আমি শিক্ষিত, অবশ্যই আমার সুস্পষ্ট একটা রাজনৈতিক ধ্যানধারণা রয়েছে। কিন্তু সবার সঙ্গে আমি সেটা শেয়ার করতে যাব কেন? আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় আমি নিশ্চয়ই সেই মত ব্যক্ত করব।
ব্যোমকেশ-এর পরে কী?
দর্শক দেখছি আমাকে বলছে, গোয়েন্দা তো অনেক হল, এ বার একটু রোম্যান্টিক কমেডি করুন। আমার নিজেরও মনে হয় আমার রোম্যান্টিক কমেডিতে মন দেওয়া উচিত।
গোয়েন্দা হিসেবে আপনার যা ফর্ম হিরোইনরা তাঁদের বয়ফ্রেন্ডদের উপর নজর রাখার কাজ দিচ্ছেন না আপনাকে?
(হাসি) না, এখনও অবধি তো কেউ কিছু বলেনি। আমি হয়তো সেই কাজটা করতেও পারব না।
সারা শহরে চশমা পরা বাবার ছবি দেখে আপনার মেয়ে কী বলছে?
হ্যাঁ, এটা ইন্টারেস্টিং। মেয়ে গতকাল প্রথমবার সিনেমা হলে গিয়েছিল। দু’বছর বয়স কিন্তু এর মধ্যেই ও বুঝিয়ে দিয়েছে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে ওর ভাল লাগে না।
কিন্তু গতকাল নাকি ও পুরো দু’ঘণ্টা বসে সিনেমাটা দেখেছে। শো শেষের পর বৌ এসএমএস করে লিখল, ও পুরো ছবিটাই দেখেছে। এটা আমার কাছে বিরাট পাওয়া।
পার্ক স্ট্রিট এসে গিয়েছে। শেষ প্রশ্ন, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ হিট হওয়ার পর তা হলে ২০১৫তে কি আবির নিজের রেমুনারেশনটা বাড়াচ্ছেন?
দেখুন আমি কোনও দিনই রেমুনারেশন-এর কথা ভেবে কাজ করিনি। (হাসি) তবে এ বার মনে হচ্ছে বাড়াতে হবে একটু। আরে আফটার অল মেয়ের বাবা...