কমলদার সঙ্গে কাজ করতে চাই না

অকপট ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। সামনে ইন্দ্রনীল রায়।লর্ডসের মোড়ে আপনার এই ফ্ল্যাটটাই তো এখন ইন্ডাস্ট্রির হটস্পট? তা তো জানি না, কেন বলছেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০২:৫০
Share:

দুই বন্ধু ‘লুচি’ আর ‘পায়েস’-য়ের সঙ্গে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। ছবি: কৌশিক সরকার।

লর্ডসের মোড়ে আপনার এই ফ্ল্যাটটাই তো এখন ইন্ডাস্ট্রির হটস্পট?

Advertisement

তা তো জানি না, কেন বলছেন?

Advertisement

বলেছি এই কারণে, এখানে প্রায় রোজ আড্ডা মারেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। শ্রীকান্ত মোহতা আপনার ফ্ল্যাটে এসে লুচি-তরকারি খান। অরিজিৎ সিংহও কলকাতায় এলে এখানেই থাকেন।

হাহাহাহা, সেটা বোধহয় আমার ফ্ল্যাটের লোকেশনের জন্য। আর আমি ব্যাচেলর মানুষ। আমার ফ্ল্যাটে আমি থাকি। আর থাকে আমার দুই বন্ধু। লুুচি আর পায়েস। ওরাই আমার বন্ধু। আমি ওদের মা-বাবা। কে বলল বাড়ি এবং জীবন পরিপূর্ণ করতে মহিলার দরকার হয়?

এত উদাসীনতার সঙ্গে বলবেন না। অনেক নায়িকাও আসেন...

বিশ্বাস করুন সেটা খুব কম। আমার বাড়ি হল একেবারেই ব্যাচেলরস প্যাড।

মাঝখানে তো শুনেছিলাম আপনার অসম্ভব ভাল বন্ধুু নাকি কৌশিকী? কৌশিকী চক্রবর্তী...

সেটা একদম ঠিকই শুনেছিলেন। কিন্তু বাকিটা পুরোটাই গসিপ। এখানে এই সমস্যা। দু’জন সমবয়স্ক নারীপুরুষ থাকলেই গসিপ শুরু হবে, তারা প্রেম করছে কি না তা নিয়ে। কৌশিকী আমার দারুণ বন্ধু।

আজ অবধি আপনি সেই পাঁচ লক্ষ সাতষট্টিতম সেলিব্রিটি যিনি এই ক্লিশে উত্তরটা দিলেন...

হাহাহাহা। আরে বাবা, একদম ঠিক বলছি। সবাই আমার বন্ধু। আর এই মুহূর্তে আমার এত কাজের চাপ, প্রেম করব কখন বলুন তো?

কী কী ছবি করছেন?

পরমের পরের ছবি ‘লড়াই’য়ের মিউজিক করছি। সৃজিতের পরের ছবিটা করছি। বিরসার ‘পিজা’ ছবিটার কাজ প্রায় শেষ। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অপুর পাঁচালি’ আর ‘খাদ’য়ের কাজ শেষ করলাম। দেবালয় ভট্টাচার্যের পরের ছবিটা করব। প্রেমের সময়ই নেই।

আচ্ছা, একটু পিছনে ফিরি। হঠাৎ করে চিরদীপ থেকে নিজের নামটা বদলালেন কেন?

সেটা অনেকটাই কেরিয়ারের জন্য। এবং নিউমেরোলজিকাল কারণে। নাম বদলানোর পর আমি ফলও পেয়েছি হাতেনাতে। একটা সময় ছিল, আমি অ্যাগ্রেসিভ ছিলাম খুব। একটা গোঁয়ার্তুমি কাজ করত আমার মধ্যে। ফেলিওরটা বেশি ছিল জীবনে। তার পর আমার বড় দাদার মৃত্যু। সেই ধাক্কাতেই জীবন আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়ে গেল। তার পর নিজের মা-বাবার প্রপার্টি থেকে আলাদা হয়ে একা থাকা শুরু করলাম। নামটা বদলালাম। ধীরে ধীরে জীবনটাও অনেকটাই বদলে গেল।

আজকে তো অনেকেই বলেন অন্য ধারার বাংলা ছবির এক নম্বর মিউজিক ডিরেক্টর আপনি। সে সৃজিত থেকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় সবার ছবির সুরকার আপনি...

জাস্ট চেষ্টা করছি। চেষ্টা করছি আমি যাতে পুরনো বাংলা গানে যে মেলোডি ছিল, সেটা সামান্য হলেও আবার ফিরিয়ে আনা যায়। বাঙালি কিন্তু সেই পুরনো গানের কথা, ভাল সুর, চেঁচামেচি কমএমন গানই আজও ভালবাসে। ওই পাগলের মতো গান গাওয়াটা বাঙালি মেনে নেয় ঠিকই। কিন্তু গলা ফাটিয়ে গান গাওয়াটা বাঙালি পছন্দ করে না।

এটা কি আপনি জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে খোঁচা মারলেন?

একেবারেই না। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে আবার বাঙালিদের ফিল্মের গানের দিকে টেনে নিয়েছে সেটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু ২০০৭-য়ে জিতের মিউজিক যতটা ভাল ছিল, যতটা ফ্রেশ লাগত, সেটা ২০১৩-তে এসে কোথাও কোথাও যেন একটু মোনোটোনাস লাগে আমার নিজের। হয়তো মানুষের রুচিটা একটু বদলে গিয়েছে। আর আমি জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সুর করি না। আমার মিউজিকটা একেবারেই অন্য রকম। তাই আমি জিৎকেও আমার প্রতিযোগী হিসেবে দেখি না। যে সঙ্গীত পরিচালক ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করেন না, তাঁকে আমি পরিপূর্ণ সঙ্গীত পরিচালক মনে করি না। আর দেখুন, আমি ভাল না জিৎ ভাল এ সব কথার কিন্তু এই দেশে কোনও মানেই হয় না। যে দেশে গানের সুর করছেন রবীন্দ্রনাথ, এসডি বর্মন, শঙ্কর-জয়কিষেণ, আর ডি বর্মন কি এ আর রহমান, সেখানে আমাদের এই আলোচনাগুলো ধৃষ্টতা। মানুষ যদি আমাকে ভাল মানুষ হিসেবে মনে রাখে সেই অ্যাওয়ার্ডটা আমার কাছে ‘দারুণ মিউজিক ডিরেক্টর ছিল ইন্দ্রদীপ’-য়ের থেকে অনেক বেশি দামি।

তা হলে হিসেবটা কী দাঁড়াল? জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দ্য মিউজিক ডিরেক্টর, না জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দ্য হিউম্যান বিইং?

এনি ডে, মানুষ জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আমার বেশি পছন্দের।

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আনন্দplus –য়ের এক সাক্ষাৎকারে কিন্তু সে দিন বললেন, উনি আপনার কাজ বিশেষ শোনেননি।

হ্যাঁ। পড়লাম। হয়তো ব্যস্ত ছিলেন। তাই শুনতে পারেননি। আমি ওঁকে একটা সিডি কম্পাইল করে দিতে চাই। আমার করা গান ওঁর কেমন লাগল এটা জানলে তো আমারও ভাল। হিজ ওপিনিয়ন ম্যাটারস টু মি। আর সত্যিই তো, উনি শুনবেন কী করে আমার গান। উনি স্টেজ শো করতে যা ব্যস্ত থাকেন...

আচ্ছা একটু আগেই আপনি কৌশিকীর কথাটা তো অস্বীকার করলেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, রাতে পার্টি থেকে রাইমা সেন নাকি আপনার সঙ্গে বাড়ি ফিরতেই বেশি কমফর্টেবল?

রাইমা দারুণ মানুষ। হয়তো আমি গাড়িটা ভাল চালাই আর দুটো ওয়াইনের বেশি খাই না পার্টিতে বলেই রাইমা আমার সঙ্গে কমফর্টেবল।

অনেকে আবার এটাও বলে প্রেমিক-প্রেমিক ভাব দেখালেও একটা স্টেজের পর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত সবার ‘ভাই’ হয়ে যায়।

সে আমি দরকার পড়লে ফাদার ফিগারও হতে পারি।

আপনি তো ইন্ডাস্ট্রির অনেকের প্রেমের সমস্যা মেটান। শুনেছি মন খারাপ হলে সৃজিত আপনাকেই প্রথম ফোন করেন।

শুধু সৃজিত নয়, অনেকেই আসেন। তবে পুরোটাই আমার সঙ্গে ওঁদের বন্ধুত্বের জন্য। আর শুধু প্রেম সমস্যা নিয়েই সৃজিতের সঙ্গে আমার আড্ডা হয় না। পার্সোনাল ওয়েল্থ থেকে পার্সোনাল হেল্থ সব ব্যাপারেই আমার সঙ্গে কথা হয়।

‘মিশর রহস্য’র সুরও তো দিয়েছিলেন আপনি।

হ্যাঁ।

ছবিটা ভাল লেগেছিল আপনার?

এটুকু বলতে পারি ছবিটা দেখে আমি খুশি হইনি। ‘মিশর রহস্য’ সৃজিতের সব চেয়ে উইক ছবি। ওর পোটেনশিয়াল অনেক বেশি।

কিন্তু এত বন্ধু আপনি। ‘মিশর’য়ের পর তো ‘জাতিস্মর’য়ে সৃজিত আপনাকে নিলেন না?

কিন্তু ওর পরের ছবিটা তো আমি করছি। ‘চতুষ্কোণ’। আর ‘জাতিস্মর’য়ে ও আমাকে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে নেয়নি বলে আমার একটুও খেদ নেই। আমি ওর কাছে থ্যাঙ্কফুল এই কারণেই যে, আমি ওর জন্যই কবীর সুমনের সান্নিধ্যে আসতে পারলাম। একজন মানুষ কখনও সুর দিচ্ছেন, কখনও শেলি নিয়ে আলোচনা করছেন, সেটা তার পর রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সঙ্গে রিলেট করিয়ে দিচ্ছেন। উফফ্, ওই পাণ্ডিত্য কল্পনা করা যায় না। আমি শুধু ওখানে ব্লটিং পেপার ছিলাম। শুধু শুনতাম মন দিয়ে।

অনেকে একটা কথা প্রায় বলেন। বাংলা ছবিতে অরিজিৎ সিংহকে দিয়ে গাইয়ে আপনি অনুপম রায়কে ফিল্মের গান থেকে প্রায় সরিয়ে দিলেন।

দেখুন, অরিজিৎ আর অনুপমের কোনও তুলনা হয় না। অরিজিৎ সিংহ ইজ ইন এ ডিফারেন্ট লিগ। আর অনুপম রায়কে আমি গায়কই মনে করি না। ও খুব ভাল লেখে, ওর গলায় একটা নেক্সট ডোর বয়ের টোনাল কোয়ালিটি আছে। কিন্তু গায়ক হিসেবে ওকে আমি কোনও নম্বর দিতে রাজি নই।

বোঝাই যাচ্ছে অরিজিৎ আপনার ফেভারিট।

আরে এমনি এমনি ফেভারিট হতে যাবে কেন? অরিজিতের গলাটা দেখলাম। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ গানটা গাওয়ার আগে থেকেই আমি এটা অন্তত বুঝতে পেরেছিলাম। অরিজিৎ ইজ এ স্পেশাল ট্যালেন্ট। ওকে ওর মনের মতো থাকতে দিতে হবে।অরিজিৎকে কেউ বেঁধে রাখতে পারবে না। ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত পাগলামি আছে যেটা আমি এনকারেজ করি। তাই হয়তো ওর সঙ্গে আমার টিউনিংটা এত ভাল। উই হ্যাভ অ্যান ইউনিক বন্ড।

আচ্ছা একটা বিতর্কিত জোনে ঢুকছি। ‘চাঁদের পাহাড়’ রিলিজের তেরো দিন আগে শুনলাম আপনি দেবজ্যোতি মিশ্রকে রিপ্লেস করছেন। মুম্বইতে গান রেকর্ডও করলেন। কিন্তু তার পর রিলিজের সময় সেই দেবজ্যোতি মিশ্রই থেকে গেলেন। কী হয়েছিল বলুন তো!

এটার সব চেয়ে ভাল উত্তর দিতে পারবে শ্রীকান্ত মোহতা ও মহেন্দ্র সোনি। আমি আর এটা নিয়ে বিশেষ কথা বলতে চাই না।

বোঝাই যাচ্ছে আপনি বেশ ব্যথিত।

এটুকুই বলব, আমার খুব খারাপ লাগছিল। কমলদা আর সাউন্ড ডিজাইনার বিশ্বদীপ চট্টোপাধ্যায় লেট মি ডাউন। কমলদার থেকেও বিশ্বদীপের ব্যবহারে আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম।

কমলেশ্বর যদি পরের ছবি আপনাকে অফার করেন, তা হলে কী করবেন?

না, আমি আর কাজ করতে চাই না কমলদার সঙ্গে। এই উত্তরটা বিতর্কিত হতে পারে, এটা কি একটু অন্য ভাবে বলতে পারি?

নিশ্চয়ই...

এটাই বলব, কমলদা বোধহয় দেবজ্যোতি মিশ্রের সঙ্গে কাজ করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন