ছবির নাম ‘পার্ক স্ট্রিট’। একটি ধর্ষণ কাণ্ড এবং সেই ঘটনার পরেকার দীর্ঘ টানাপড়েন নিয়ে কাহিনি। এই ছবিটি মুক্তির ছাড়পত্র পাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
চলচ্চিত্র সেন্সরের ভারপ্রাপ্ত সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)-এর আঞ্চলিক আধিকারিকের কমিটি ‘পার্ক স্ট্রিট’-এর প্রদর্শন নিয়ে আপত্তি তুলেছে। ওই ছবির প্রযোজক যদি সেই আপত্তি মানতে না-চান, সে-ক্ষেত্রে তিনি দিল্লিতে ফিল্ম সার্টিফিকেশন অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন বলেও ইতিমধ্যে তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ছবিটির প্রদর্শনে আপত্তি কেন?
সিবিএফসি-র আঞ্চলিক কর্তা ভাস্বর গঙ্গোপাধ্যায় বিষয়টি প্রকাশযোগ্য নয় বলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পরে মামলা হতে পারে। তাই এখন এই বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।”
তবে ‘পার্ক স্ট্রিট’-এর প্রযোজক দেবযানী রায় ও পরিচালক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, সিবিএফসি-র পাঠানো চিঠিতে এটা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণ কাণ্ডের সঙ্গে মিলই ছবিটির ‘দোষ’!
কী আছে ওই চিঠিতে?
প্রযোজক-পরিচালকের বয়ান অনুযায়ী সিবিএফসি-র চিঠিতে বলা হয়েছে, দু’বছর আগের বহুচর্চিত পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ড এই ছবিতে স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়েছে। যাঁরা ছবিটি দেখেছেন, সেই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যেরা মনে করেন, ছবিটি অবাধে দেখানো হলে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে। ছবিটির প্রদর্শন নিয়ে সমস্যা প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে, কলকাতাবাসীর আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত পার্ক স্ট্রিটের ভাবমূতির্র্ও নষ্ট করেছে ওই ছবি। পার্ক স্ট্রিটের সঙ্গে হিংসা, অশ্লীল আচরণকে জড়ানোর দরুন কলকাতাবাসী মানসিক ভাবে আহত হতে পারেন বলে সেন্সর কমিটির কর্তাদের অভিমত। দু’বার ‘পার্ক স্ট্রিট’ দেখার পরে সোমবার সিবিএফসি নিযুক্ত রিভিউ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, ছবিটি দেখানোর ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়।
২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিটে পানশালা-ফেরত একটি গাড়িতে এক মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। সেই ঘটনায় বেআব্রু হয়ে যায় মহানগরের নৈশ নিরাপত্তার ঘাটতি। পুলিশ-প্রশাসনে তো বটেই, তোলপাড় শুরু হয় সব মহলেই। সেই ঘটনায় কয়েক জন গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত এখনও ফেরার।
‘পার্ক স্ট্রিট’-এর পরিচালক পার্থবাবুর বক্তব্য, তাঁর ছবিতেও ধর্ষণ আছে। আছে তা নিয়ে ঘাত-প্রতিঘাত। স্থানিক নাম এবং বিষয়বস্তুর সেই সাদৃশ্যই তাঁর ছবির মুক্তির বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলে পরিচালকের ধারণা। তিনি বলেন, “পুরনো রাজনৈতিক বিতর্কের জন্যই আমার ছবিটির উপরে কোপ পড়ল। কমিটির সদস্যেরা আমায় বলেছেন, ছবির নাম পার্ক স্ট্রিট না-হয়ে ক্যামাক স্ট্রিট বা অন্য কিছু হলে কোনও সমস্যা হতো না।”
স্থাননাম আর ঘটনাগত মিলেই তাঁর ছবির মুক্তি আটকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিচালক। তবে সেটাই ওই ছবির মুক্তি আটকানোর আসল কারণ, নাকি আরও কিছু কিছু কারণ আছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সেন্সর বোর্ডের যে-আঞ্চলিক কমিটি ছবিটি দেখেছে, হরনাথ চক্রবর্তী তার অন্যতম সদস্য। মঙ্গলবার তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ছবিটির প্রদর্শনে তাঁদের কমিটির আপত্তি ঠিক কোথায়?
হরনাথবাবু কোনও রকম সবিস্তার ব্যাখ্যায় যাননি। শুধু বলেন, “এটা আমার একার সিদ্ধান্ত নয়।”
ধর্ষণ শুধু পার্ক স্ট্রিট বা কলকাতা বা বাংলা নয়, গ্রাম-শহর নির্বিশেষে সারা দেশেরই জ্বলন্ত সমস্যা। প্রশ্ন উঠছে, শিল্পে-সাহিত্যে-চলচ্ছবিতে এই সমস্যার প্রতিফলন ঘটলে সেই শিল্পকে আলোয় আনাটা রুখে দেওয়া হবে কেন? এই ক্ষত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালালেই কি কোনও বিশেষ স্থানের মাহাত্ম্য রক্ষা পাবে?
জবাব মিলছে না।