প্রোগ্রামের পর হাততালি শুনতে কার না ভাল লাগে?
সবাই এসে বাহবা দিয়ে যাবেন। বলবেন এমন শো-এর আগে কোনও দিন দেখেননি। শিল্পীমাত্রেরই এই অনুভূতিটা খুব সুন্দর লাগে। কিন্তু যে কোনও শো তো শুধুমাত্র একজন শিল্পীর গায়কির জন্যই সাফল্য পায় না। এমনকী কোনও অ্যালবামের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, সাউন্ড রেকর্ডিস্ট, লাইট ডিজাইনার, এমনকী ইমপ্রেসারিও এঁদের সবার প্রচুর অবদান থাকে একটা সফল শো-এর পিছনে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এঁদের কাজ সম্পর্কে শ্রোতারা জানলেও, এঁদের নাম সব সময় উইংসের আড়ালেই থেকে যায়।
তবে এর পর থেকে এমনটা যাতে না ঘটে, তার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন শিল্পী উষা উত্থুপ। স্টেজের জন্য যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখে শুরু করছেন অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স ইন স্টেজক্র্যাফ্ট। ১৬ অগস্ট এই পুরস্কার বিতরণের প্রথম অনুষ্ঠান হতে চলেছে কলামন্দিরে।
৪৪ বছর ধরে শো করার পর কেন এই উদ্যোগ নিলেন তিনি? “এত বছর প্রোগ্রাম করে মনে হয়েছে যে লাইট, সাউন্ড, স্টেজ কোম্পানির উদ্যোগ ছাড়া তো কোনও দিন কোনও শো সফল হতে পারে না। মনে হয়েছে এঁদের সবাইকে আমার একটা ধন্যবাদ জানানো দরকার। তাই এই উদ্যোগ,” বলছেন শিল্পী।
নিজের কেরিয়ার সম্পর্কে নানা ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি চলে যান ট্রিঙ্কাস-এ শো করার প্রথম দিকের সেই অভিজ্ঞতায়। “তখন মাত্র একটা স্পিকার ছিল ট্রিঙ্কাস-য়ে। মনে আছে কত ভাবতাম কী ভাবে সাউন্ডটা আরও ভাল করা যায়। মেট্রো গলিতে ঘুরে ঘুরে খোঁজ করতাম ভাল অ্যাম্পলিফায়ার আর স্পিকারের। সব সময় মনে হয়েছে এই সব মানুষ না থাকলে আমাদের কাজটা এত সুন্দর করে হতই না,” বলে চলেন উষা।
আর তাই যখনই প্রোগ্রাম করেছেন, তখন তিনি সব সময় নিজের মিউজিশিয়ান এবং শো-এর পিছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছেন। শুধু তাই নয়, দর্শকের সঙ্গে তাঁদের আলাপও করিয়ে দিয়েছেন তিনি। কত নাম মনে পড়ে যায় তাঁর। “শো-হাউসের ওমর হায়দার, সাউন্ড অ্যান্ড লাইটের পি সি মুখোপাধ্যায়, ইন্টেলিজেন্ট সাউন্ড অ্যাপ্লিকেশনের দীনেশ পোদ্দার কত নাম আছে! ঝন্টুদা, নীরোধ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো কত মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি,” বলেন তিনি। তার পর স্মৃতিচারণ করেন ‘শান সে’ গানের লাইভ শো-এর অভিজ্ঞতার। বলে চলেন অমল দাসের লাইভ সাউন্ড আর অশোক অধিকারীর লাইট করার গল্প। সে সময় কেউ স্টেজে স্মোক বম্বস ব্যবহার করতেন না। “১৯৮০-৮২ হবে। আমরাই সেটা প্রথম চালু করি। এখন তো ওই সব জলভাত হয়ে গিয়েছে। একটা শো-তে তো স্টেজে বসে আমরা ট্র্যাক আর লাইভ মিউজিক মিক্স করার ট্রেন্ডটা শুরু করি।
সেই কাজটা করেছিল অমল দাস,” বলছেন তিনি।
কিন্তু সবাই তো এই প্রথা মেনে চলেননি। কেন প্রকাশ্যে তাঁদের কদর করা হয় না? প্রোগ্রাম ভাল না লাগলে খুব সহজেই তো সাউন্ড যাঁরা করেন, তাঁদের ওপর রাগ দেখানো হয়। কিন্তু ক’জন ভাবেন যে প্রোগ্রাম বা শো ভাল হলে সেই একই মানুষদের সাবাস বলাটাও জরুরি? “আমার সব সময় মনে হয় ধন্যবাদ দেওয়াটা জরুরি,” বলেন তিনি।
আপাতত ন’টা ক্যাটেগরিতে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। তার মধ্যে রয়েছে বেস্ট ইভেন্টস ম্যানেজার, বেস্ট স্টেজ ডিজাইনারস অ্যান্ড এক্সিকিউটর্স, বেস্ট সাউন্ড কোম্পানি, বেস্ট সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার অন স্টেজ, বেস্ট লাইট ডিজাইনার অন স্টেজ, বেস্ট লাইট ইঞ্জিনিয়ার ফর থিয়েটার অ্যান্ড ডান্স, বেস্ট রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (নন ফিল্ম), হল অব ফেম আর পায়োনিয়ার্স ইন ইভেন্টস-এর সম্মান।
আসল কথা হল গান গেয়ে যত সুখ, আনসাং হিরোদের ওপর স্পটলাইট ফেলার আনন্দটাও কিন্তু কম নয়।