পার্ক হোটেলের পুল সাইড। ফোটোশ্যুটের জন্য প্রপস্ থেকে লাইটিং সব দিকেই নজর বাঁকুড়ার এমপির।
চুল ঠিক করতে করতে মেয়ে রিয়া সেনকে ক্যামেরার সামনে বডি ল্যাঙ্গোয়েজ নিয়ে মাস্টারক্লাসও নিলেন সুচিত্রা-কন্যা। মকটেল খেতে খেতে শুরু হল আড্ডা এক দিকে ডিক্টাফোন...অন্য দিকে সেন পরিবার...
কেমন আছেন?
রাইমা: ফ্যান্টাস্টিক।
কী চলছে জীবনে?
রাইমা: (হাসি) মুভিজ, মুভিজ, মুভিজ।
মিথ্যে কথা।
রাইমা: একদম সত্যি কথা। একটার পর একটা হিন্দি ছবি সাইন করছি। একটা তো প্রতীক বব্বরের সঙ্গে। ছবির বাইরে কিছু ভাবছি না।
কলকাতা শহর তা মানছে না।
তাদের বক্তব্য অন্য...
রাইমা: কী বলছে তারা?
তারা বলছে, মধ্য কলকাতার এক নামী হোটেলের মালিকের ছেলের সঙ্গে আপনার প্রেম। আর তাঁকেই বিয়ে করছেন।
রাইমা: (হাসি) বাজে কথা। আমাকে এ সব প্রশ্ন কেন করছেন? (হাসি)
আপনি মিথ্যে কথাটাও কনভিন্সিংলি বলতে পারছেন না।
রাইমা: মিথ্যে বলছি না।
সঙ্গীত পরিচালক কাম জ্যোতিষী ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত বলছেন, আপনি প্রেমে পড়েছেন। শুনি রাতে প্রায়ই ওঁর সঙ্গে আপনার কথা হয়।
রাইমা: ইন্দ্রদীপ এটাও বলেছে, আমি জীবনে অনেক বার প্রেমে পড়ব।
আপনি তো আনন্দplus-এ আমার সিনিয়র সহকর্মীকে বলেছেন, আপনি এখন ‘ওয়ান ম্যান ওম্যান’।
রাইমা: ওঁকে বলেছি ঠিকই কিন্তু আমি বোঝাতে চেয়েছি, যখন আমি বিয়ে করব, আই উইল বি আ ‘ওয়ান ম্যান ওম্যান’ (হাসি)।
কিন্তু দু’মাস আগে যে বললেন বিয়ে করতে চান। সেটা তা হলে মিথ্যে?
রাইমা: এখন ম্যারেজ কলিং নয়। এখন শুধু বলিউড কলিং। নিন একটু আলুকাবলি খান...
এমপি মুনমুন সেনের এটা কিন্তু প্রথম ইন্টারভিউ আনন্দplus-এ...
মুনমুন: হ্যাঁ, অনেক দিন পর আমি ইন্টারভিউ দিচ্ছি। সামনে মৈনাকের ছবি ‘কলকাতা কলিং’ রিলিজ - এই প্রথম দু’মেয়ের সঙ্গে ছবিতে কাজ করলাম। আর কয়েকটা ছবি করতে চাই ওদের সঙ্গে, অভিনয়টা পাকাপাকি ভাবে ছেড়ে দেওয়ার আগে।
বলছেন করবেন, কিন্তু এমপি হওয়ার পর আর সময় কোথায় আপনার?
মুনমুন: (হেসে) সবাই ভাবে এমপি হওয়াটা ভীষণ গ্ল্যামারাস। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। ফিল্মের অভিনেত্রী হওয়াটা এমপি হওয়ার থেকে যে কোনও দিন অনেক বেশি গ্ল্যামারাস। এমপি হওয়ার পর কার সবচেয়ে লাভ হয়েছে জানেন?
কার?
মুনমুন: আমার ড্রাইভারের।
রাইমা: আমি জানি, কেন।
কেন?
মুনমুন: (হেসে) আমার ড্রাইভার টোল প্লাজাতে আমার পরিচয় দিলে ওকে টোল দিতে হয় না। এটা ওর জীবনের থ্রিল। তাই নিয়ে ও খুব খুশি। আর ফিল্ম অভিনেত্রী হিসেবেও তো আমার কাছে পাইলটওয়ালা গাড়ি ছিল। পুলিশ এসকর্ট ছিল। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ফিল্ম ইউনিটের মধ্যে থাকাটা অনেক বেশি মজার। ফিল্ম জার্নালিস্টরাও অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল। বাঁকুড়াতে আমার একটা পরিবার তৈরি হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ফিল্ম ইউনিটের সঙ্গে তার তুলনা হয় না।
রিয়া পাশেই রয়েছে। মুনমুন সেন এমপি হয়েছেন, এই খবরট আপনি টিভি চ্যানেল থেকে জেনেছিলেন? না মা ফোন করেছিল?
রিয়া: না, মা ফোন করেছিল। তখন আমি মুম্বইতে। ফোন করে বলল, ‘আমাকে একটু বাঁকুড়া যেতে হচ্ছে।’ আমি বললাম, কেন? তখন মা বলল সব কথা। আই ওয়াজ ভেরি হ্যাপি। আমাদের ফ্যামিলিতে, বাবা, আমি আর রাইমা অনেকদিন ধরেই বলতাম, মায়ের পলিটিক্সে জয়েন করা উচিত। কিন্তু তখন মা রেডি ছিল না।
মুনমুন: এখানে আমি একটা কথা বলি। এই যে ছবিটা করছি, ‘কলকাতা কলিং’ এটার ডাবিংয়ে গিয়ে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল... (হাসি)।
কেন ?
মুনমুন: আরে, আজকে আমি এমপি। একটা মাদার ফিগার ইমেজও রয়েছে । বাঁকুড়ার মানুষের সামনে শ্রীমতী দেব বর্মন হিসেবে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, সঙ্গে বর ছিল। (হাসি) কিন্তু ডাবিং করতে গিয়ে দেখি আমার চরিত্রটা একজন নটি মাদারের। সব ইয়াং ছেলের দিকেই তার নজর। তাদের সঙ্গে প্রায়ই বেডরুমে ঢুকছে (হাসি)। আমি মেয়েদের বললাম, হায় রে! কী হবে এ বার’!
রাইমা: আমরা মায়ের সিচ্যুয়েশন দেখে হেসেই চলেছি।
এই ছবিটা তো আপনাদের পরিবারের কাছে বেশ ইমোশনাল?
মুনমুন: হ্যাঁ, ইমোশনাল তো বটেই। এই ছবিটা করতে করতেই তো মা চলে গেলেন। শ্যুটিংয়ের সময় কী টেনশন...
রাইমা: হ্যাঁ, প্রায় প্রত্যেকদিনই শ্যুটিং হবে কি হবে না সেই আনসার্টেনটি। সন্ধেবেলা হাসপাতাল যাওয়া...
রিয়া: গিয়ে কোনও দিন ভাল খবর। কোনও দিন টেনশনে বাড়ি ফেরা।
এখানে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই...
মুনমুন: বলুন...
শীতকাল আসছে, দিন ছোট হচ্ছে, এক বছর আগে সেই বেলভিউয়ের দিনগুলো কি মনে পড়ছে?
মুনমুন: ইন্দ্র, আমার রোজ মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা। প্রতি মুহূর্তে। এ বার তো পুজোর সময় তাই পালিয়ে গিয়েছিলাম।
থাকতে পারলেন না কলকাতায়?
মুনমুন: না, থাকতে পারলাম না। মনে হয় না কোনও দিন আর পুজোর সময় কলকাতায় থাকতে পারব। পুণেতে ছিলাম কিন্তু ভীষণ মায়ের কথা মনে হচ্ছিল পুজোর দিনগুলোয়। সেই মতো হাঁটুর অপারেশনটাও ওই সময়ই ফেলেছিলাম পুনেতে...
অপারেশন ঠিকঠাক হয়েছে তো?
মুনমুন: একদম ঠিক হয়েছে। এখন বাড়িতে ফিজিওথেরাপি চলছে। তবে এত কিছুর পরেও মায়ের স্মৃতি কিছুতেই যাওয়ার নয়। আর কিছু দিনের মধ্যে মায়ের ফ্ল্যাটটাও ব্যবহার করব ঠিক করেছি। মাসি-মাসির মেয়েরা এলে তো আগে ওখানেই যেত। বাড়ি ফিরে আজও ইন্সটিংক্টিভলি ওই ফ্ল্যাটের দিকে দেখি। খালি মনে হয়, মা সেই আগের মতো বলে উঠবে, ‘মণি, তুমি এসে গিয়েছ?’ (চোখে জল) এই যে ফোটোশ্যুট হল, ইন্টারভিউ হচ্ছে আমার অভ্যেসই ছিল মাকে গিয়ে সব বলা। দিন হোক, রাত হোক, আমি মায়ের কাছে যেতাম। এই স্মৃতিগুলো কোনও দিন যাওয়ার নয়।
বুঝতেই পারছি, পুজোতেই যখন থাকতে পারলেন না, জানুয়ারিতে তো আরওই পারবেন না...
মুনমুন: থ্যাঙ্কফুলি, সেই সময় পার্লামেন্ট চলবে। তাই দিল্লিতে থাকব। আমার দিল্লির ফ্ল্যাটটাও তৈরি হচ্ছে। আচ্ছা, রিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন না তো...
রিয়াকে জিজ্ঞেস করতে চাই, রিয়া মানেই লোকজনের ধারণা উদ্ধত, মুডি একজন অভিনেত্রী। এই ইমেজটা কি কোনও দিন বদলাবে না...
রিয়া: এটা তো মিডিয়ার পারসেপশন। যারা আমার ক্লোজ বন্ধুবান্ধব, আমার ফ্যামিলি তারা সব্বাই জানে আসলে রিয়া একেবারেই এ রকম নয়।
আপনাদের পরিবারের লোকজনকে শশ্মানে দেখেছি, সেই মানুষগুলো কিন্তু রাইমার থেকে রিয়ার সঙ্গে বেশি স্বচ্ছন্দ। তাদের বাথরুমে নিয়ে যাওয়া কী তাদের খাওয়াদাওয়া কিন্তু রিয়াই দেখেন...
মুনমুন: একদম ঠিক।
রিয়া: হ্যাঁ, যত বার আমার ওই অ্যারোগেন্ট দিকটার কথা বলে মিডিয়া, তত বার এই কন্ট্রাডিকশনটাও থাকে।
আর কনট্রাডিকশনটা আপনি রেখে দিতেও চান?
মুনমুন: রিয়ার দোষ হচ্ছে এই ইমেজটা রেক্টিফাই করা কী বদলানোর ও কোনও চেষ্টাই করে না।
রিয়া: কেন বদলাতে যাব মা? কে আমাকে অ্যারোগেন্ট বলল, কে আমাকে মুডি বলল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
মায়ের অপারেশনের পর নাকি আপনি সারাক্ষণ ছিলেন মায়ের সঙ্গে?
মুনমুন: আমাদের ফ্যামিলিতে রিয়া হচ্ছে ‘রিয়েল মাদার’। আমার অপারেশনের পর আমাকে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া, চটি দরকার হলে সেই চটি নিয়ে আসা। পা পরিষ্কার করে সেই চটি পরিয়ে দেওয়া, এই কাজগুলো রিয়াই করে।
আর যেহেতু ওকে মনে হয় ইনঅ্যাকসেসেবল তাই মিডিয়া ওকে অন্যভাবে প্রোজেক্ট করে।
মানে মিডিয়ার জন্য ওই মেকি হাসিটা রিয়া সেন হাসবেন না?
মুনমুন: একেবারেই হাসবে না।
রিয়া: কোনও দিন হাসব না। আর দেখুন, আমি মুম্বইতে ১৪ বছর কাজ করছি। প্রায় সব ডিরেক্টর আমাকে রিপিটও করেছে। এই ইমেজটা আরও বেশি তৈরি করেছে বাংলার কিছু অভিনেত্রী। মুম্বইতে কি অন্যরা আপনাকে হিংসা করে না? অবশ্যই করে। তারা ঠিক এসে দেখে যাবে আপনি কী পরছেন, অথবা আপনার হেয়ার ড্রেসারকে ম্যানেজ করে আপনার হেয়ার স্প্রেতে এমন কিছু মিশিয়ে দেবে যাতে চুলের ক্ষতি হয়। সেটা একটা কম্পিটিশন। কিন্তু এখানে অভিনেত্রীরা পি আর ম্যানেজার রেখে অন্যদের ব্যাপারে খারাপ কথা লেখায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে মিথ্যে আর্টিকেল বার করে অন্য অভিনেত্রী সম্বন্ধে।
মুনমুন: আমি একটা কথা বলতে পারি...
সিওর
মুনমুন: আমি একটা ছবির সেটে গিয়েছিলাম। একজন খুব নামী ডিরেক্টরের সেটে, সেই ডিরেক্টরও খুব ভাল কাজ করে। গিয়ে দেখলাম একজন অভিনেত্রী ইচ্ছে করে রিয়াকে ঢেকে দিচ্ছে, রিয়ার লাইটটা কেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে। রাইমা হলে কিন্তু ওখানেই বলে দেবে, শটটা আর একবার নেওয়া উচিত। আমি হলে তো সেই ডিরেক্টরকে ওখানেই ফায়ার করব। বলব, এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি? কিন্তু রিয়া কিছু বলবে না।
হুম... আচ্ছা, রিয়া যদি ‘রিয়েল মাদার’ হন, রাইমা তা হলে কী?
রিয়া: রাইমা হচ্ছে ডেভিল।
রাইমা: হা হা হা হা হা
মুনমুন: রাইমা কী রকম জানেন? রাইমা হচ্ছে বাড়ির গ্ল্যামারাস হিরোইন।
আমি হয়তো বিছানায় শুয়ে আছি হাঁটুর ব্যথা নিয়ে। ঘর থেকে বেরোনোর সময় বললাম, রাইমা মা, একটু বলবি চা দিতে। রাইমা শুনবে, কিন্তু সেই চা আর কোনওদিন আসবে না। পরের দিন যদি আমি বলি, তুই চা দিতে বলিসনি ওদের, মাথা ঘুরিয়ে বলবে, ‘মা তুমি চা চেয়েছিলে না?’ রাইমা হচ্ছে এ রকম। ও নিজের জগতে থাকে।
‘কলকাতা কলিং’ হল, বাঁকুড়া কলিং হল, ম্যারেজ কলিংটা কবে হবে?
মুনমুন: আমি বলছি আপনাকে, আই অ্যাম লাকি, আমার বর হাবি আমাকে সব কিছু করার স্বাধীনতা দিয়েছে...
না, মানে মুনদি...
রিয়া: (হাসি) মা, উনি জিজ্ঞেস করছিলেন আমাদের বিয়ের কথা...
রাইমা: হা হা হা হা হা...
মুনমুন: হা হা হা হা হা।। ধুর, ফ্যামিলিতে আমি ছাড়া কেউ বিয়ে করেনি তাই আমি আমার কথা বলা শুরু করেছিলাম। তবে আমি মেয়েদের বলেছি তোমরা দু’জনেই এস্টাব্লিশড। যা উপার্জন করছ তাতে তোমাদের জীবন চলে যাবে। তাই বিয়ে না করলেও চলবে কিন্তু আমার নাতি-নাতনি চাই। বুড়ো বয়সে নাতি-নাতনির সঙ্গে কাটাতে চাই। তাই তোমরা জিন মিলিয়ে, ফ্যামিলি হিস্ট্রি দেখে কোনও ‘ব্যাঙ্ক’য়েও যেতে পারো। আই নিড গ্র্যান্ডচিল্ড্রেন (হাসি)।
রিয়া-রাইমার অনেক বন্ধুকে তো আপনার বিশেষ পছন্দ নয়?
মুনমুন: হ্যাঁ, কয়েকজন একেবারে পাতে দেওয়ার নয়। তবে আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের কিছু ছেলেমেয়ে আছে যারা ওদের বন্ধু, তাদের খুব স্নেহ করি।
বাকি কয়েকটা বন্ধু আমাদের বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়...একেবারে হোরস্ অ্যান্ড পিম্পস্ সেগুলো। আর ছেলেগুলো তো আরও খারাপ। ডিনার থেকে ফিরে এসে আমাকে বলে, ‘আন্টি, জানো, রিয়া আর রাইমা আমাদের ট্রিট দিল।’ (হাসি) কোনও শিভালরি নেই আজকাল ছেলেগুলোর। ওয়ার্থলেস।
আচ্ছা, শেষ প্রশ্ন। শুনেছিলাম আপনি সংসদে ঢোকার পর থেকে অনেক এমপি-ই নাকি লোকসভা কী রাজ্যসভায় না গিয়ে আপনার সঙ্গেই বসে থাকেন।
মুনমুন: (সেই সিগনেচার হাসিটা হেসে) এখনও মুনমুন সেনের অ্যাপিলটা আছে তা হলে...