পিকে করমুক্ত, অখিলেশের ঘোষণায় বিতর্ক

গত কয়েক দিন ধরেই দেশ জুড়ে পিকে নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিবাদ। আঙুল উঠেছে বজরঙ্গ দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দিকে। আজ দিল্লির তিনটি সিনেমা হলে এই ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় আজ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর রাজ্যে পিকে-র কোনও শো বন্ধ হবে না। পাশাপাশি আমির খান অভিনীত এই ছবিকে কেন্দ্র করে আসরে নেমে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। নিজের রাজ্যে এই ছবিকে করমুক্ত ঘোষণা করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪০
Share:

গত কয়েক দিন ধরেই দেশ জুড়ে পিকে নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিবাদ। আঙুল উঠেছে বজরঙ্গ দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দিকে। আজ দিল্লির তিনটি সিনেমা হলে এই ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় আজ মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীশ সাফ জানিয়ে দিলেন, তাঁর রাজ্যে পিকে-র কোনও শো বন্ধ হবে না। পাশাপাশি আমির খান অভিনীত এই ছবিকে কেন্দ্র করে আসরে নেমে পড়লেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। নিজের রাজ্যে এই ছবিকে করমুক্ত ঘোষণা করে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন তিনি।

Advertisement

কিছু দিন আগেই সঙ্ঘ পরিবারের অতি সক্রিয়তায় ধর্মান্তরণ প্রশ্নে সংসদে খেসারত দিতে হয়েছে মোদী সরকারকে। তাই পিকে নিয়ে বিতর্কে ইতি টানার চেষ্টা করছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংখ্যালঘুদের আস্থা অর্জনে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছেন। সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভিকে দিয়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই পথেই হেঁটে পিকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে সব রকম বিতর্ক বন্ধ করতে মুখ খুললেন ফডনবীশ।

যদিও গত কাল প্রতিবাদের জেরে মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রাম শিন্দে ছবির বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখতে পুলিশি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সবে পাত্তা না দিয়ে ফডনবীশ আজ সাফ বলেন, “কোনও তদন্ত হবে না। মহারাষ্ট্রে এই ছবি দেখানো হবে।” শো চলাকালীন যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। ফডনবীশ জানাচ্ছেন, সেন্সর বোর্ড মনে করেছে ফিল্মটির মুক্তিতে কোনও অসুবিধা নেই। তারা ছাড়পত্রও দিয়েছে। তাই ছবি না দেখানোর কোনও প্রশ্ন নেই।

Advertisement

কিন্তু অখিলেশের পদক্ষেপে বেজায় খেপে গিয়েছে রাজ্য বিজেপি। মঙ্গলবার রাতে ছবিটি দেখেন অখিলেশ। তাঁর খুবই ভাল লেগেছে বলে জানান। আজ সাংবাদিকদের সামনে ছবিটি করমুক্ত করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই ছবিটি নিয়ে আপত্তি করছে লোকজন। তাঁর কথায়, “ছবি দেখলে বিক্ষোভকারীরাও প্রশংসা করবেন। আগে ছবিটা দেখা হয়নি বলে আফশোস হচ্ছে আমার।” বিজেপি অবশ্য তাঁর এ সব কথায় ভুলছে না। রাজ্যে দলীয় মুখপাত্র বিজয় বাহাদুর পাঠক বলেছেন, “যে কোনও সরকারের উচিত প্রতিবাদ থামানোর চেষ্টা করা। অথচ এ ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বিতর্ক তৈরি করছেন।” তাঁর ইঙ্গিত মেরুকরণের রাজনীতির দিকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আবেগ উস্কে দিতেই এমনটা করেছেন অখিলেশ, দাবি বিজয়ের।

অখিলেশের এই ঘোষণার পরেই তেতে উঠেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাদের নেতা বিনোদ বনশল বলেন, “যে ভাবে অখিলেশ সরকার এই ছবিটি করমুক্ত ঘোষণা করেছে, তাতে আশ্চর্যের কিছু দেখি না। যে সরকার সহারনপুর, মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ পীড়িত হিন্দুদের পুনর্বাসন নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, যে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য দাউদ ইব্রাহিম ও আইএসআই-এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে গর্ববোধ করেন, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?”

শুধু পিকে নিয়ে বিতর্কে রাশ টানা নয়, সংখ্যালঘু আবেগের কথা মাথায় রেখে অমিতাভ বচ্চনের মতো সেলিব্রিটিকে দিয়ে একটি বিশেষ অ্যাড ফিল্মের কথা ভেবেছে মোদী সরকার। যাতে দেখা যাবে গুজরাতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অমিতাভ বচ্চনকে। জাতপাত-ধর্ম নির্বিশেষে সরকারের উন্নয়নের কর্মসূচি তুলে ধরা হবে সেখানে। এ বিষয়ে অমিতাভকে নিজে ফোন করে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে মুক্তি পাবে সেটি।

বিরোধীদের অবশ্য দাবি, ভোট এলেই বিজেপি বা মুলায়মের দল এ ভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করে। বিজেপির চাই হিন্দু ভোট, মুলায়মের মুসলিম। মেরুকরণের ফায়দা তোলে দু’পক্ষই। ফলে নরেন্দ্র মোদী এখন যেভাবে অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে ছবি বানিয়ে সম্প্রীতির চিত্র তুলে ধরতে চাইছেন, সেটি লোকদেখানো। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতে, “কাক চলছে হাঁসের চালে! ‘কাক’ মানে বিভাজনের রাজনীতি, আর ‘হাঁস’ মানে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখানোর চেষ্টা। অমিতাভ বচ্চনই জবাব দিন না, যে ভাবে ধর্মান্তরণ হচ্ছে, বিজেপি-র একের পর এক নেতা হিন্দুত্ব উস্কে দিচ্ছেন, সেগুলি কি বিভাজনের রাজনীতি নয়?”

পিকে নিয়ে আজও বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ চলেছে। পুলিশ পিকেট বসিয়ে সিনেমা দেখানো হয়েছে শিলচরের হলগুলিতে। যদিও শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল বজরঙ্গ দলকেই সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, এই ছবি ভারতীয় সংস্কৃতিতে আঘাত করেছে। তাই এই ছবির প্রদর্শন সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন