পুনশ্চ: প্রাণপ্রতিমা রূপা

ফেসবুক। টুইটার। হোয়াটসঅ্যাপের জমানায় শাশ্বত ভালবাসার খোঁজ। লিখছেন সংযুক্তা বসুফেসবুক। টুইটার। হোয়াটসঅ্যাপের জমানায় শাশ্বত ভালবাসার খোঁজ। লিখছেন সংযুক্তা বসু

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:১৪
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

এ এক অভিসারের গল্প।

Advertisement

যে অভিসার নিয়ে যায় এক অমোঘ উত্তরণে।

জীবন-মরণের সীমানায়। আর সেখানে দাঁড়িয়ে নায়িকা রূপা গঙ্গোপাধ্যায় নতুন করে উপলব্ধি করেন প্রেম, বন্ধুতা, চিরসখার উপস্থিতি।

Advertisement

অনামা সম্পর্ক, ব্যাখ্যাহীন বন্ধুত্ব যা কিনা আটত্রিশ বছরের কালপ্রবাহে মুছে যায় না। এবং পৃথিবীর সব সম্পর্ককেই যে একটা নাম দিতে হবে তেমন কোনও দায়ভার যে মহাকাল বহন করে না এমনই এক শাশ্বত সত্যকে ঘিরে দানা বেঁধেছে ‘পুনশ্চ’ ছবির গল্প।

ফেসবুক-টুইটার-সেলফির জমানায় খাঁটি সম্পর্ক সময়ের কষ্টি পাথরে যাচাই হয়ে কী ভাবে আধুনিক প্রযুক্তির যোগাযোগের কোনও পরোয়া না করে, আপন আনন্দে অক্ষয় হয়ে থাকে, তাই প্রমাণ করেন এ ছবির নতুন জুটি রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

আটত্রিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি ভালবাসার এক প্রান্তে রয়েছেন সৌমিত্র। তিনি পেশায় সাহিত্যিক এবং অন্য দিকে রূপা। যিনি চাকরি শেষে কলকাতায় এসে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন একা। এক নিরালা গৃহকোণে। স্বামী মারা যাবার পর এক কন্যাকে নিয়ে তাঁর জীবন।

প্রেম পরিণতি পেতে পেতে না পাওয়া সৌমিত্রর সঙ্গে আটত্রিশ বছরের জীবনে রূপার দেখা হয়েছে ক্ষণকালের জন্য মাত্র তিন বার। কিন্তু তাতেও হারিয়ে যায়নি সেই পিছুটান, সেই আকর্ষণ। তারই জন্য একদিন দিল্লিতে গিয়ে সেরা সাহিত্যিকের পুরস্কার নেওয়ার পর কলকাতায় ফিরে মাত্র একদিনের জন্য ফিরে আসেন হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা রূপার জীবনে সৌমিত্র। প্রেমের যে কোনও বয়স নেই, প্রমাণ হতে থাকে তখন থেকেই। রূপা-সৌমিত্র জুটির দেখা হওয়ার ক্ষণিক উচ্ছলতা থেকে গভীর অনুভূতি ছুঁয়ে ফেলা মুহূর্তগুলো বার বার খোঁজ দেয় সেই প্রেমের যা রোজকার জীবনে ছেয়ে না থাকলেও হারায় না। শান্তিনিকেতনে তাঁদের পুরনো

সখ্যের স্মৃতিপথ বেয়ে পরিচালক শৌভিক মিত্র নায়কনায়িকার সম্পর্কের রঙিন মুহূর্তগুলোর প্রেক্ষাপটে দোলের যে ফ্ল্যাশব্যাক রচনা করেছেন, এবং লাল আবির মাখা ছেলেমেয়েদের নিয়ে যে অন্ত্যাক্ষরির দৃশ্যটি বিন্যাস করেছেন এক কথায় বলা যায় তা চমকপ্রদ।

সৌমিত্রের রোম্যান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয় দর্শকদের ভাল লাগবে। তাঁর সংলাপের লিরিকাল অথচ মননশীল মেজাজ আপামর বাঙালি চিরকালই ভালবেসেছে। এবং এই ছবিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে যাঁর কথা বারেবারেই বলতে হয় তিনি রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। একদিনের জন্য চিরসখার অভিসারে আসার পর যে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যায় তার সাক্ষী রূপার বিহ্বলতা, যন্ত্রণা, ভালবাসার নিঃশব্দ উচ্চারণ প্রতি পদে ছুঁয়ে থাকে এ ছবির প্রাণপ্রতিমাকে। এক কথায় বলতে গেলে রূপাই ছবির কেন্দ্রবিন্দু। ধারণ করে আছেন একটাই সত্যভালবাসা হারিয়ে যায় না। অঘটন ঘটে যাওয়ার পর নায়ক সৌমিত্রের স্ত্রী অঙ্গনা বসুর সঙ্গে রূপার দেখা হওয়ার মুহূর্তকে বড় মরমি ভাবে বুনেছেন পরিচালক। রূপার বাক্রুদ্ধ প্রতিটা চাহনি যেন বলে দেয় অন্তরের সত্য। তার কোনও বাহ্যিক আড়ম্বর না থাকলেও কিছু এসে যায় না। অঝোর বৃষ্টিধারার সঙ্গে নিজের চোখের জল মিশিয়ে দেওয়ার দৃশ্যটি মনে থেকে যাবে।

ছবির পরতে পরতে রয়েছে সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক ট্রিটমেন্ট। বেশ অনেকটা রিলিফ দিয়ে, স্পেস রেখে গল্পের বিন্যাস করেছেন পরিচালক। কিন্তু মাঝে মাঝে কঠোর বাস্তবের মুহূর্তে কাব্যিক সংলাপ অবাস্তব মনে হয়। সংলাপ রচনায় বাস্তবতার ছোঁয়া আরও খানিকটা থাকা উচিত ছিল। গল্পের প্রয়োজনে ছবিটা ধীরগতির। তবে ‘পুনশ্চ’ দৈর্ঘ্যে আর একটু ছোট হলে আরও টানটান হত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন