ফ্যাশনে সবুজ বিপ্লব

অর্গ্যানিক সুতি মুছে দিচ্ছে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’। পোশাক এখন পরিবেশবান্ধব। লিখছেন পরমা দাশগুপ্তঅর্গ্যানিক সুতি মুছে দিচ্ছে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’। পোশাক এখন পরিবেশবান্ধব। লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

অর্গ্যানিক কটন।

Advertisement

অহিংসা সিল্ক।
চেনা লাগছে তো?
আপনি যদি হন পরিবেশ বাঁচানোর ‘গো গ্রিন’ মন্ত্রে দীক্ষিত, এ নামগুলো অচেনা ঠেকার কথা নয়।
কারণ বেশ কিছু দিন হল দুনিয়া জুড়েই ক্রমশ ছেয়ে যাচ্ছে পরিবেশ-সচেতন সাজের ভাবনা। যে ভাবনা থেকেই জন্ম নিচ্ছে অর্গ্যানিক কটন কিংবা অহিংসা সিল্কের ফ্যাব্রিক। যার তৈরি পোশাক শোরগোল ফেলছে ফ্যাশন-বিশ্বে।
পরিবেশ বাঁচাতে জুটের ব্যাগ বা চটি বেশ কয়েক বছর ধরেই চেনা ছিল এ দেশের। পরিবেশ বন্ধু সাজের ভাবনাটাও সারা বিশ্বে মাথাচাড়া দিচ্ছিল তখন থেকেই। যে ফ্যাব্রিক বা পোশাক তৈরিতে এমন কিছু ব্যবহার হবে না যা পরিবেশের কিংবা প্রাণীজগতের ক্ষতি করে, যে পোশাকের এককালীন ব্যবহার ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও নতুন ভাবে তাকে ফের কাজে লাগানো যায়— তার সবটাই উঠে আসছিল সেই ভাবনায়।

চলো সবুজ পথে
অতএব হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াল ন্যাচারাল ফাইবার, প্রোটিন, সেলুলোজের মতো একেবারে প্রাকৃতিক সামগ্রী। সাধারণ সুতি তৈরির ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ মুছে ফেলতে হাজির হল অর্গ্যানিক কটন, যা তৈরি হল কীটনাশক, রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছাড়াই। সেই পথেই শুরু ব্যাম্বু বা পাইন্যাপল ফাইবার অর্থাৎ বাঁশ ও আনারসের আঁশে তৈরি ফ্যাব্রিকের পথচলা। সিল্ক তৈরির চেনা পথে না হেঁটে রেশম পোকাকে না মেরে তার স্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তৈরি হল অহিংসা সিল্ক। শুধু পোশাক তৈরি করে ফেললেই তো হল না, রং বা প্রিন্টও তো চাই তাতে। তাই শাকসব্জি, ফুল-ফল থেকে তৈরি রাসায়নিক হীন ভেজিটেবল ডাই বা ফ্লোরাল কালারের হাত ধরল ফ্যাশন দুনিয়া। তুঁতে বা লোহা থেকে এল নীল বা কালো রং। বিদ্যুৎ বাঁচাতে ভরসা হল হাতে বোনা পোশাক।

Advertisement

কিন্তু কিছু দিন পরে ফেলে দেওয়া পুরনো পোশাকও তো এক ধরনের দূষণ ছড়ায়। তার ফ্যাব্রিক বা তাতে ব্যবহৃত রাসায়নিকও তো ক্ষতি করে পরিবেশের। একই পোশাক ঘুরিয়েফিরিয়ে বেশি দিন ব্যবহার করা গেলে, তা খানিক আটকানো যায় বটে। অর্থাৎ পুরনো পোশাকটাই খানিক কেটেছেঁটে, রং বদলে এক্কেবারে ভোল পাল্টে ফেললেই তো হয়ে যেতে পারে আস্ত একটা নতুন পোশাক। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। পুরনো জিন‌্‌সটাই দিব্যি কায়দার হটপ্যান্ট কিংবা ছেঁড়া টপটাই রং পাল্টে দু’তিনটে স্কার্ফ— সাজের দুনিয়া পেয়ে গেল ‘আপসাইকেল ফ্যাশন’।

ফ্লেভার ইন্ডিয়া
সারা বিশ্বই যদি সেজে ওঠে পরিবেশ বাঁচানোর সাজে, এ দেশই বা পিছিয়ে থাকে কেন? পরিবেশ রক্ষার লড়াই তাই ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ফ্যাশনিস্তাদের ওয়ার্ডরোবেও। অর্গানিক কটন বা অহিংসা সিল্কের শাড়ি, কুর্তি, টপ, দেশ-বিদেশের ব্র্যান্ডেড পোশাক হাজির এ দেশের স্টোরেও। ডিজাইনার থেকে বিক্রেতা, সকলেই বলছেন চাহিদা বাড়ছে পরিবেশবন্ধু পোশাকের। যদিও তার দাম খানিকটা বেশির দিকেই।
ডিজাইনার অভিষেক দত্ত বলছেন, ‘‘অর্গ্যানিক কটন ত্বকের পক্ষেও ভাল। পোশাকের উপাদান বা রঙে রাসায়নিক নেই, প্রাকৃতিক ফাইবারে ত্বক শ্বাস নিতেও পারে ঠিক মতো। তা ছাড়া এ দেশের মতো গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এ ধরনের পোশাক আরামদায়কও বটে। আর অর্গানিক কটনই পরুন বা অহিংসা সিল্ক— আপনি তার মানে এক্কেবারে গ্লোবাল ফ্যাশন পথের পথিক।’’ সম্প্রতি অভিষেক নিজেরই একটি কালেকশনে ব্যবহার করেছেন পরিবেশবন্ধু উপাদান। তুঁতের রঙে রাঙানো সে সব পোশাক নজর কেড়েছে ফ্যাশন দুনিয়ায়।
শুধু পোশাকই নয়, জুটের ব্যাগ-জুতোর মতো এখন গয়নাগাঁটিতেও কিন্তু হয়ে ওঠা যায় পরিবেশবন্ধু। নারকেল মালা, কাঠ, বাঁশের কঞ্চি, ঝিনুক, মাটির গয়না ভারতীয় সাজে আলাদা মাত্রাও তো আনে।

সঙ্গী বিতর্কও
পরিবেশবন্ধু ফ্যাশন যতই ছড়িয়ে পডুক বিশ্ব জুড়ে, পিছু ছাড়ছে না বিতর্কও। সে বিতর্ক মূলত রাসায়নিক ব্যবহার না করার দাবি ঘিরেই। ব্যাম্বু ফাইবার অর্থাৎ বাঁশ থেকে ভিসকোসের মতো নরম আঁশ বার করে আনতে রাসায়নিক লাগেই, অর্থাৎ পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছেই— প্রথম থেকেই এমন দাবি তুলে আসছেন অনেকেই।
আরও একটা বিতর্ক রয়েছে পোশাকের রং নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন, রাসায়নিক ব্যবহার না করলে পোশাকে প্রাকৃতিক রং বেশি টেকসই করা মুশকিল। ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা যেমন বলছেন, ‘‘পোশাকের ফ্যাব্রিকে প্রাকৃতিক রং টিকিয়ে রাখতে হলে একটু-আধটু রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হবে। এ ধরনের পোশাকের দাম যথেষ্ট। ফলে অল্প কিছু দিন পরার পরে রং উঠে গেলে কত বার পোশাক কিনবেন মানুষ?’’
ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল বা ডিজাইনার অভিষেক দত্ত অবশ্য অল্প দিনেই রং উঠে যাওয়ার বিষয়টা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, ভেজিটেবল-ফ্লোরাল কালার বা তুঁতে কিংবা লোহার কালো রং স্টিম করে কিছু নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মেনে ফ্যাব্রিকে ডাই করা হয় তা টিকিয়ে রাখার জন্যই। ব্যাবহার হয় অ্যাজো-ফ্রি রং। সে রং টেকেও।

থোড়াই কেয়ার
রং উঠুক বা না উঠুক, পরিবেশ সচেতনতা তো হল। সে কথা ভেবেই তাই পরিবেশবন্ধু পোশাকের দিকেঝুঁকছেন আজকালকার ফ্যাশন-সচেতনারা। কলেজপড়ুয়া শর্মি কিংবা অধ্যাপিকা ঈপ্সিতা তাই ঠিক করেছেন এ বার পুজোয় কিনেই ফেলবেন অর্গানিক কটনের রংচঙে কুর্তি কিংবা অহিংসা সিল্কের শাড়ি। সঙ্গে পরিবেশবন্ধু গয়না, জুতো-ব্যাগ তো রইলই!
গোয়িং গ্রিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন