লোক সুরের গান বাঁধছে বাংলা ব্যান্ড

কেউ ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, কেউ আসবাবের দোকানে কাজ করেন। কেউ আবার দিনমজুর রুজির টানে সিভিক ভলেন্টিয়ার। কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরেও রয়েছে তাঁদের অন্য একটি পরিচয়। তাঁরা ফোক ব্যান্ড ‘ইউরেনাসসস’-এর সদস্য। রাজ্যের অন্য ফোক ব্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, বীরভূমের ইলামবাজারের লোক গানের এই ব্যান্ডই এখন জেলায়-জেলায় কলেজ ক্যাম্পাস কাঁপাচ্ছে। আজ শনিবার রিলিজ হবে তাঁদের দ্বিতীয় অ্যালবাম।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

ইলামবাজার শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৩
Share:

কেউ ইলেকট্রিক মিস্ত্রী, কেউ আসবাবের দোকানে কাজ করেন। কেউ আবার দিনমজুর রুজির টানে সিভিক ভলেন্টিয়ার। কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরেও রয়েছে তাঁদের অন্য একটি পরিচয়। তাঁরা ফোক ব্যান্ড ‘ইউরেনাসসস’-এর সদস্য। রাজ্যের অন্য ফোক ব্যান্ডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, বীরভূমের ইলামবাজারের লোক গানের এই ব্যান্ডই এখন জেলায়-জেলায় কলেজ ক্যাম্পাস কাঁপাচ্ছে। আজ শনিবার রিলিজ হবে তাঁদের দ্বিতীয় অ্যালবাম।

Advertisement

জেলায় থেকে বাংলা ব্যান্ড করা নতুন নয়। এর আগেও মালদা কিংবা শিলিগুড়ির ব্যান্ড শুনিয়েছে মনে রাখার মতো নতুন কথা ও সুরের বাংলা গান। আর এই প্রতিটি ব্যান্ডেরই জন্মের পিছনে রয়ে যায় একটি গল্প। জেলায় থেকে কেমন করে ‘ইউরেনাসসস’-এর এই উড়ান সম্ভব হল, সে প্রশ্নের উত্তরেই রয়েছে ইলামবাজারের এই ব্যান্ডটি গড়ে ওঠার গল্প। জানা গেল, ‘যাওয়ার বেলা দেখা হল, কথা হল না’ মতো গানের সাফল্য কথা।

রুজির টানে ইলাবাজারের শেখ ফিরোজ, সাহেব হাসমীরা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। মাধ্যমিক কিংবা উচ্চ মাধমিকে পড়তে পড়তেই তাঁদের পেশা-প্রবেশ। তবুও দিনের শেষে আড্ডা দেওয়া চলছিলই। সঙ্গে গান-বাজনা নিয়ে কথা। চলত বাজনা নিয়ে টু-টাং!

Advertisement

দিনের শেষের ওই আড্ডাই যে এক দিন তাঁদের ‘সেলিব্রিটি’ করে দেবে, কে জানত! এলাকার পুজো-পরব থেকে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি, সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম, বিয়ে, অন্নপ্রাশনের মতো অনুষ্ঠান অথবা কলেজ ফেস্টেও এখন তাঁদের অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, লুপ্ত প্রায় ভাদু, সাঁওতাল গানের মতো লোক গান নিয়ে তাঁরা ব্যান্ডে নিয়মিত চর্চা করেন বলে লোকে তাঁদের গান শুনছে।

আট সদস্যের ‘ইউরেনাসসস’ লোক গানের চর্চার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রোতাদের অনুরোধে অন্য বাংলা গানেও জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। দলের দাবি, “শুধু মাত্র ইচ্ছে শক্তির জোরে এগিয়ে চলেছি আমরা। আর্থিক অনটন সত্ত্বেও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে কখনও থেমে থাকিনি। নতুন গান নিয়ে সময় ভেবেছি আমরা।”

প্রথম অ্যালবামটি ‘এই মন’ প্রকাশের পরই জেলায় নানা জায়গা থেকে শো করার জন্য আমন্ত্রণ পায় ‘ইউরেনাসসস’। ওই দলের সদস্য, আসবাব দোকানের কর্মী সাহেব হাসমি উড়ানের সেই স্মৃতিকথায় বলেন, “ওই অ্যালবাম-এর একাধিক গানে সফলতা এসেছে। ‘যাওয়ার বেলা দেখা হল, কথা হল না’ গানই আমাদের জনপ্রিয় করেছে।” হাসমি ছোট বয়স থেকেই গান লেখেন। ইতিমধ্যেই এক হাজারের বেশি গান লিখে ফেলেছেন। কয়েক বছর আগে বাঁকুড়ার এক স্টুডিও থেকে ‘এই মন’ নামের প্রথম অ্যালবামটি প্রকাশ করেছিলেন তাঁরা।

রুজির টানে দিন কাটিয়ে যখন দর্শককের সামনে এসে দাঁড়ান, তখন কেমন সেই অনুভব?

বলছিলেন পেশায় দিন মজুর, ‘ইউরেনাসসস’-এর ড্রামার দেবদাস মেটে। ইলামবাজার বাস স্ট্যান্ডে সাফল্যের উড়ান-কথা বলতে বলতেই তাঁর চোখে জল। “মানুষ আমাদের গান শুনছে, এটাই বড় প্রাপ্তি। যে জায়গা থেকে শুরু করেছিলাম, সেটা গল্পের মতো শোনায়। চাঁদা করে এবং এলাকার মানুষের কাছে থেকে চেয়ে, একটু একটু করে ওই ব্যান্ডের জন্য সরঞ্জাম কিনেছি। লোকসুরকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এ এক লড়াই!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন