Bengali Culture and Identity Through Proverbs

বাংলা প্রবাদের জগতে বাঙালির সংস্কৃতি, স্মৃতি ও সত্তার গল্প উঠে এল তন্ময় রায়চৌধুরীর কলমে

বাংলা প্রবাদে আছে ‘হরি ঘোষ’ নামের এক বাঙালির প্রসঙ্গে—‘হরি ঘোষের গোয়াল’! গোয়াল মানে গোরুর ঘর, তবে এই হরি ঘোষের না ছিল গোরুর দুধের কারবার, না ছিল তাঁর বাড়িতে কোনো ‘গোয়াল’। তা হলে তাঁর নামের সঙ্গে গোরু জুড়ল কী ভাবে?

Advertisement

তন্ময় রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫ ১১:১২
Share:

প্রতীকী চিত্র (ইনসেটে: প্রাক্তন রেডিয়ো জকি, সঞ্চালক, তন্ময় রায়চৌধুরী)।

বাংলা ভাষার দুটো প্রবাদের মধ্যে দুজন বাঙালির নাম আছে, খেয়াল করেছ?

Advertisement

এই যে আমরা বলি, ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’—কে এই গৌরী সেন? দেবী দুর্গার আরেক নাম গৌরী, তাই নাম শুনে মেয়ে মনে হলেও, এই ‘গৌরী’ একজন পুরুষ। তাঁর পুরো নাম গৌরীকান্ত সেন। সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ছিলেন, ১৫৮০ সালে হুগলীতে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের মানুষ।

তাঁদের ছিল আমদানি-রপ্তানির পারিবারিক ব্যবসা, যার মাধ্যমে গৌরী সেন অনেক টাকা উপার্জন করে সেই সময়ের বণিকসমাজে বেশ বিখ্যাত হয়ে যান। সেই কালে দেনার দায়ে কারও জেল হলে, সেই ঋণ শোধ না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা জেল থেকে ছাড়া পেতেন না। এই অবস্থায় গৌরী সেন তাঁদের অনেককেই সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেন। দু-হাতে টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন অনেকবার, অনেক লোককে তিনি ঋণের হাত থেকে মুক্ত করেছেন, বা ব্রিটিশের রাজকর দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছেন। কেউ চাইলেই আগু-পিছে না-ভেবে তিনি টাকা দিয়ে দিতেন। এ থেকেই ‘লাগে টাকা, দেবে গৌরী সেন’ এই বাংলা প্রবাদের জন্ম। কলকাতার আহিরীটোলায় গৌরী সেনের বিশাল বাড়ি ছিল বলে জনশ্রুতি আছে। তাঁর বংশধররা এখনও নাকি আছেন, কলকাতার বালিগঞ্জ এলাকায় থাকেন।

Advertisement

আরেকটা বাংলা প্রবাদে আছে ‘হরি ঘোষ’ নামের এক বাঙালির প্রসঙ্গে—‘হরি ঘোষের গোয়াল’! গোয়াল মানে গোরুর ঘর, তবে এই হরি ঘোষের না ছিল গোরুর দুধের কারবার, না ছিল তাঁর বাড়িতে কোনো ‘গোয়াল’। তা হলে তাঁর নামের সঙ্গে গোরু জুড়ল কী ভাবে?

হরি ঘোষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুঙ্গের দুর্গের দেওয়ান ছিলেন। বাংলা ও ফারসি ভাষা বেশ ভালোই জানতেন তিনি। ইংরেজিতেও তার বেশ দখল ছিল। দেওয়ানি থেকে অবসর নিয়ে তিনি কলকাতায় এসে থাকতে শুরু করেন। খানিকটা গৌরী সেনের মতোই, তিনিও কারও মেয়ের বিয়ের খরচ তো কারও ধারের টাকা মেটানো—এই করতে গিয়ে প্রচুর টাকা খরচ করতেন। উত্তর কলকাতায় তাঁর বাড়িতে বহু গরিব ছাত্র থাকা-খাওয়ার সুযোগ পেত। তাছাড়া তাঁর মস্ত বড় বৈঠকখানায় জমাটি আড্ডার আদর বসত, যেখানে বহু বেকার ছেলে কাজকর্ম না করে, শুধুই আড্ডা দিত আর খাওয়া-দাওয়াটা সেখানেই সেরে নিত। ফলে, হরি ঘোষের বাড়ি সারাদিন গমগম করত, বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে গেলে লোকের মনে হত এটা বাড়ি নয়, যেন ‘গোরুর গোয়াল’! এই থেকেই নাম, আর প্রবাদ—হরি ঘোষের গোয়াল।

পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি জেলার ২৫০টিরও বেশি স্কুলে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’ শুরু হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আমাদের সহযোগিতা করছে আনন্দবাজার ডট কম আয়োজিত ‘শব্দ-জব্দ ২০২৫’-এর পার্টনাররাও। এই উদ্যোগ সফল করার পেছনে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। ‘প্রেজ়েন্টিং পার্টনার’ ইআইআইএলএম কলকাতা। ‘পাওয়ার্ড বাই পার্টনার’ ট্রেন্ডস এবং সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও, ‘স্ন্যাকস্ পার্টনার’ কিকু নুডুলস্, ‘ফুড পার্টনার’ মনজিনিস এবং ‘নলেজ পার্টনার’ শব্দবাজি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement