Dangerous Triangle of Face

মুখের সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ কোনটি? সেখানে হওয়া ব্রণ ফাটালে কি মৃত্যুও হতে পারে?

ত্বকের চিকিৎসার দুনিয়ায় ওই অংশটি পরিচিত ‘ট্রায়াঙ্গল অফ ডেথ’ অথবা ‘ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গল’ নামে। ওই ত্রিভুজাঞ্চলে ব্রণ হোক বা ফুস্কুড়ি, তা নিয়ে নিজে থেকে বেশি নাড়াঘাঁটা না করাই ভাল বলে মনে করেন ত্বকের চিকিৎসকেরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ ১৮:১০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

মুখেরও ‘ডেঞ্জার জ়োন’ আছে। সেই বিপদসীমার সীমারেখা পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দিলে তৈরি হবে একটি ত্রিভুজের আকৃতি। ওই ত্রিভুজাঞ্চলে ব্রণ হোক বা ফুস্কুড়ি বা কোনও রকম ত্বকের সমস্যা— তা নিয়ে নিজে থেকে বেশি নাড়াঘাঁটা না করাই ভাল বলে মনে করেন ত্বকের চিকিৎসকেরা। কারণ, ত্বকের চিকিৎসার দুনিয়ায় ওই অংশটি পরিচিত ‘ট্রায়াঙ্গল অফ ডেথ’ অথবা ‘ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গল’ নামে।

Advertisement

ত্বক থেকেও মৃত্যুর আশঙ্কা!

আমেরিকার ট্রিপল আর্মি মেডিক্যাল সেন্টারের ইন্টারনাল মেডিসিন প্রকাশিত একটি কেস রিপোর্টে বলা হচ্ছে কোভিড অতিমারি চলাকালীন মাস্ক থেকে এক ব্যক্তির ‘ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গালে’ ত্বকের সংক্রমণ হয়, যা থেকে হওয়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ মস্তিষ্কেও ছড়ায়। কেস রিপোর্টে প্রতিবেদক হাভিয়ার বারাঙ্কো ট্রাবি লিখছেন, ‘‘মুখের ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গলে হওয়া ত্বকের সংক্রমণ ক্যাভেরাস সাইনাস থ্রম্বোসিস ঘটাতে পারে। যা হলে সাইনাসে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যা থেকে মৃত্যুর ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।’’

Advertisement

কতকটা একই কথা বলছে আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন সংরক্ষিত আরও একটি গবেষণাপত্র। ওই গবেষণাটি যৌথ ভাবে করেছিল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের এলুরু মেডিক্যাল কলেজ এবং আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ফাউন্ডেশন। ক্যাভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিসের মতো মারণরোগ কী কী কারণে হতে পারে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে তারাও বলছে, ‘‘ক্যাভেরনাস সাইনাস থ্রম্বোসিস যদি ‘সেপ্টিক’-এ পরিণত হয়, তবে তার কারণ হতে পারে মুখের মধ্যভাগের ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গলের সংক্রমণ। এর থেকে সেলুলাইটিস, সাইনাসাইটিসও হতে পারে।’’

ছবি: সংগৃহীত।

মুখের বিপদসীমা কোনটি?

মুখের যে বিপজ্জনক ত্রিভুজের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই মনে মনে এঁকে নিতে পারবেন। ত্রিভুজের চুড়ো বা শীর্ষবিন্দুটি থাকবে দু’চোখের মাঝবরাবর নাকের মাঝখানে। আর ত্রিভুজের নীচের রেখাটি থাকবে উপরের ঠোঁট যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে। নীচের রেখাটি ততটাই বিস্তৃত হবে, যতটা বিস্তৃত ঠোঁটের দুই প্রান্ত। এ বার উপরের শীর্ষবিন্দু থেকে দু’দিকে দু’টি কাল্পনিক সরলরেখা টানলেই তৈরি হবে ‘ট্রায়াঙ্গল অফ ডেথ’।

ব্রণ ফাটানো কতটা ঝুঁকির?

'অ্যানালস অফ সার্জারি' নামের মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘১৮৫২ সালে মুখের বিপজ্জনক জায়গা বা ‘ডেঞ্জারাস এরিয়া’র কথা প্রথম চিকিৎসা সংক্রান্ত বইয়ে উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে ওই সংক্রান্ত ছ’টি ঘটনার উল্লেখও করা হয়। যার মধ্যে ২০ বছরের এক সুস্থ যুবকের ঘটনাও ছিল। ঠোঁটের ডগায় হওয়া একটি ব্রণ ভুলবশত নখ দিয়ে চুলকে ফেলেছিলেন তিনি। সেই ঘটনার ছ’দিন পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ৩৬ ঘণ্টা পরে তাঁর মৃত্যু হয়।’’ ওই জার্নালে বর্ণিত বাকি ঘটনাগুলিও অনেকটা একই রকম। কারও নাকের ডগায় হওয়া ফুস্কুড়ি থেকে সংক্রমণ হয়েছে। কাউকে পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা করার পরেও বাঁচানো যায়নি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ব্রণ বা ত্বকের সংক্রমণ হয়েছিল ‘ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গল’-এ। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণ হয়েছে সেখান থেকেই।

ছবি: সংগৃহীত।

তবে কী করণীয়?

মুখের ত্বকে হওয়া ব্রণ ফাটাতে এমনিই বারণ করছেন ত্বকের চিকিৎসকেরা। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এ বিষয়ে সব সময় পেশাদারের সাহায্য নেওয়াই ভাল। একই সঙ্গে তারা জানাচ্ছে মুখের ‘ডেঞ্জারাস ট্রায়াঙ্গল’ বলে পরিচিত এলাকাটি সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত ক্যাভেরনাস সাইনাসের মাধ্যমে। তাই ত্বকের সংক্রমণ ওই রাস্তা ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছোতেও পারে। বিষয়টি বিরল হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। তাই মুখের ত্বকের ওই অংশে ব্রণ বা কোনও রকম ফুস্কুড়ি হলে তা না ফাটানোই ভাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement