Saliva testing for detecting disease

কয়েক ফোঁটা লালারসে ধরা পড়বে ক্যানসার-সহ নানা রোগ! কেন কার্যকরী এই পদ্ধতি?

ডায়াবিটিস থেকে শুরু করে ক্যানসার, এমনকি, অ্যালঝাইমার্সের মতো মস্তিষ্কের রোগের অতিসামান্য উপসর্গও ধরা পড়ে যাবে শুধু লালারস বিশ্লেষণ করে, এমনটাই বলছে গবেষণা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ১৫:৫৩
Share:

রোগের ‘সঙ্কেত’ লালারসে? ছবি : শাটারস্টক।

যে কাজ করতে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, চিকিৎসকের স্ক্যালপেল বা স্ক্যানার লাগত, সেই কাজ করে দেবে কয়েক ফোঁটা লালারস!

Advertisement

ডায়াবিটিস থেকে শুরু করে ক্যানসার, এমনকি, অ্যালঝাইমার্সের মতো মস্তিষ্কের রোগের অতিসামান্য উপসর্গও ধরা পড়ে যাবে শুধু লালারস বিশ্লেষণ করে, এমনটাই বলছে গবেষণা। তার জন্য বায়োপসি, রক্ত পরীক্ষা, স্ক্যান— কোনও কিছুরই দরকার পড়বে না।

বিষয়টি যে একেবারে নতুন, তা কিন্তু নয়। রোগ নির্ণয়ে লালারসের কার্যকরিতা বিজ্ঞানীরা বুঝেছিলেন কয়েক দশক আগে। ১৯৮০ সালে প্রথম গবেষকেরা হরমোনের সমস্যা বুঝতে এবং মাদকের ব্যবহার চিহ্নিত করতে লালারস ব্যবহার করেন। পরে নব্বইয়ের দশকে এডস নির্ণয়ের জন্যও লালারস পরীক্ষা শুরু হয়। সাম্প্রতিক অতীতে কোভিড অতিমারির সময়েও বহু দেশ লালারস পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করেছে। তা হলে এতে নতুনত্ব কী?

Advertisement

নতুন এটাই যে, লালারস পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া এখন আরও দ্রুত এবং আরও নিখুঁত হয়েছে। আধুনিক প্রক্রিয়ায় শুধু লালারস পরীক্ষা করে শরীরের অণুর স্থান পরির্তনও বোঝা যায়। যা কয়েক বছর আগে ভাবাও যেত না।

কোন কোন রোগ নির্ণয় করতে পারে লালারসের পরীক্ষা?

২০২১ সালে লালারস থেকে মুখ এবং গলার ক্যানসার চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াকে অনুমোদন দেয় আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। ওই প্রক্রিয়ায় এআই বা কৃত্রিম মেধার সাহায্যে লালারস বিশ্লেষণ করে জিনের ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সবিস্তার জানা যায়। যা থেকে রোগের হদিস পেতে শুরু করেন চিকিৎসকেরা। পরে প্রস্টেট ক্যানসার থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের ক্যানসার, এমনকি, ২০২৪ সালে স্তন ক্যানসারের উপসর্গ বোঝার জন্যও এক বিশেষ ধরনের লালারস পরীক্ষা আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাইওয়ানের ন্যাশনাল ইয়াং মিং চিয়াও টুং বিশ্ববিদ্যালের যৌথ গবেষণায় আবিষ্কৃত ওই পদ্ধতির কথা প্রকাশিতও হয় ‘জার্নাল অফ ভ্যাক্যুম সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বি’-তে। তাঁদের তৈরি লালারস পরীক্ষার যন্ত্রটি প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করা হয় ২১ জন মহিলার উপরে। যন্ত্রটি নীরোগ স্তনতন্তু, স্তন ক্যানসারের একেবারের গোড়ার দিকের উপসর্গ এবং ‘অ্যাডভান্সড’ স্তন ক্যানসার আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিল।

এ ছাড়াও ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, শরীরে হরমোনের ভারসম্য নষ্ট হওয়ার সমস্যা, হেপাটাইটিস, ফুসফুসের ক্যানসার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, লিভারের রোগ, স্নায়ুর রোগ, ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত সংক্রমণও ধরার জন্য চিকিৎসকেরা লালারস ব্যবহার করছেন বলে জানাচ্ছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওরাল সায়েন্স’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।

কেন লালারস পরীক্ষা কার্যকরী?

‘অ্যানুয়াল রিভিউ অফ অ্যানালিটিকাল কেমিস্ট্রি’ জার্নালে প্রকাশিত লালারস পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের লালাগ্রন্থী আধ লিটার থেকে দেড় লিটার পর্যন্ত লালারস ক্ষরণ করে। দেখা গিয়েছে, সেই লালারসে এনজ়াইম থেকে শুরু করে হরমোন, রোগপ্রতিরোধক, প্রদাহ নিয়ন্ত্রক, ভাল ব্যাক্টেরিয়া ছাড়াও ডিএনএ, আরএনএ, এমনকি, টিউমার নিঃসৃত প্রোটিনও থাকে। চিকিৎসকের কাছে যা আদতে রোগীর শরীরের তথ্যের ভান্ডার। যা থেকে রোগের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।

হঠাৎ কেন হইচই?

এর জবাব দিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ চামিন্ডি পুণ্যদীরা। নেচার পত্রিকার জেনোমিক মেডিসিন সংক্রান্ত জার্নালে চামিন্ডি লিখছেন, ‘‘রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে লালারসের প্রতি বৈমাত্রিক সন্তানের মতো আচরণ করা হয়েছে দীর্ঘ দিন।’’ আসলে এক সময়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য শরীরে সদা চলমান রক্তের উপরেই নির্ভর করত চিকিৎসা বিজ্ঞান। তা হলে হঠাৎ লালারস পরীক্ষার উপর ভরসা করা হচ্ছে কেন? তার একটি কারণ অবশ্যই এর পদ্ধতি। যা ইঞ্জেকশন মারফত রক্ত পরীক্ষা কিংবা টিউমারে সুচ বিঁধিয়ে বা স্ক্যালপেল দিয়ে কেটে বায়োপসি করার থেকে অনেক সহজ এবং সোজাসাপটা। শুধু তা-ই নয়, লালারস পরীক্ষার আরও একটি সুবিধা হল, এটি চাইলে যে কেউ নিজেও করে পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারেন। তবে ‘অ্যানুয়াল রিভিউ অফ অ্যানালিটিকাল কেমিস্ট্রি’ জার্নালে লুসিয়ানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তাইচিরো নোয়াঙ্কা বলছেন, ‘‘ইদানীং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ওমিক সায়েন্স নিয়ে নানা গবেষণা হচ্ছে। যেমন জেনোমিক্স, প্রোটোমিক্স, মেটাবলোমিক্স ইত্যাদি। বিষয়টি আসলে শরীরর নানা জৈবিক অণু, কোষ, তন্তুর বিশ্লেষণ। যে বিষয়ে অজস্র তথ্য নিহিত থাকে লালারসে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে লালারসের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement