অ্যাসপিরিনের বিকল্প, হার্টের রোগীদের জন্য আরও নিরাপদ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
‘হার্ট অ্যাটাক’ কথাটা শুনলেই মনে জন্ম নেয় আতঙ্ক। বুকে পাথর চাপিয়ে দেওয়ার মতো ভারী ভাব, দরদর করে ঘাম, বুকের ব্যথা ক্রমশ হাতে ও কাঁধে ছড়িয়ে পড়া এবং নিদারুণ শ্বাসকষ্ট— এই ধরনের লক্ষণ শুরু হলে রোগীকে অ্যাসপিরিন-জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ কেবল জ্বর বা ব্যথাবেদনা নিরাময় করে না, হৃদ্রোগের ক্ষেত্রেও উপকারী এই ওষুধ। তবে অ্যাসপিরিনের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। দীর্ঘ সময় ধরে খেয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই অ্যাসপিরিনের চেয়েও বেশি কার্যকরী ও কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ওষুধের খোঁজ চলছিল এত দিন। সে কাজে সাফল্য এসেছে বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা।
অ্যাসপিরিনের বিকল্প হতে পারে, এমন ওষুধের খোঁজ পেয়েছেন ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিয়োলজির গবেষকেরা। এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য ল্যানসেট’ মেডিক্যাল জার্নালে। ওষুধটির গোত্রনাম ক্লপিডোগ্রেল। অ্যাসপিরিনের মতোই রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ। ২৯ হাজার হার্টের রোগীকে ওষুধটি খাইয়ে দেখা গিয়েছে, অ্যাসপিরিনের চেয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ১৪ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে এটি।
ক্লপিডোগ্রেল ওষুধটি ‘প্ল্যাভিক্স’ ব্র্যান্ড নামে পাওয়া যায়। অ্যাসপিরিনের মতোই এতে অ্যান্টি-প্লেটলেট উপাদান আছে, যা প্লেটলেট বা অনুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। প্লেটলেটে ‘পি২ওয়াই১২’ নামক এক ধরনের রিসেপ্টর থাকে, যার কারণেই রক্ত জমাট বাঁধে। আর প্লেটলেটগুলি জমাট বাঁধলে হৃদ্রোগীদের দ্বিতীয় বার হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। ক্লপিডোগ্রেল ওষুধের অ্যান্টি-প্লেটলেট উপাদান ওই রিসেপ্টরকেই পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে হার্টের ধমনীতে বা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে হার্ট অ্যাটাক অথবা ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিয়োলজির গবেষকদের মতে, অ্যাসপিরিন অত্যধিক মাত্রায় খেলে শরীরের ভিতর রক্তক্ষরণ হওয়ার যে ঝুঁকি থাকে, তা কমিয়ে দিতে পারে ক্লপিডোগ্রেল। তাই অ্যাসপিরিনের আদর্শ বিকল্প হতে পারে ওষুধটি।
তবে ভারতীয় চিকিৎসকদের মত খানিকটা ভিন্ন। তাঁদের মতে, ভারতে হৃদ্রোগীদের মধ্যে যাঁরা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খান, সেই সংখ্যা মোটেও কম নয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হৃদ্রোগী এই ওষুধ খান ভারতে। তাই অ্যাসপিরিনের বিকল্প কোনও ওষুধ হৃদ্রোগীদের খাওয়াতে হলে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন। এ দেশের মানুষজনের উপর পরীক্ষার পরেই তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।