অতিরিক্ত ঘুম, খাবার খেতে অনীহা, কিসের লক্ষণ? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
শিশু খেলাধূলা করতে চাইছে না। সারা ক্ষণই ঘুমোচ্ছে। ক্লান্তি এতটাই যে বাইরে বেরোতেও চাইছে না। এমন হলে কেবল আলসেমি ভেবে এড়িয়ে গেলে ভুল হবে। বাবা-মায়েরা খেয়াল করবেন, ক্লান্তির পাশাপাশি আনুসঙ্গিক আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিচ্ছে নাকি। হয়তো দেখবেন, শিশুর খিদে কমে গিয়েছে, খাবার খেতেই চাইছে না, প্রস্রাবের রং হলদেটে হয়ে গিয়েছে, আচরণেও কিছু সমস্যা আসছে। এইসবই কিন্তু জন্ডিসের লক্ষণ হতে পারে।
শিশুর জন্ডিসের নানা রকম লক্ষণ দেখা দেয়। কেবল গায়ের রঙে বদল নয়, মস্তিষ্কে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে আচরণগত কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। বর্ধিত বিলিরুবিন প্রভাব ফেলবে স্নায়ুর উপরে। ফলে স্নায়ুর কার্যকারিতা কমবে।
হেপাটাইটিস থেকেও জন্ডিস হতে পারে শিশুর। ইদানীং শিশুদের হেপাটাইটিস উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেপাটাইটিস হল লিভারের এক ধরনের প্রদাহ। রক্তের লোহিত কণিকাগুলি একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে। এই বিলিরুবিন পরবর্তীকালে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পরিপাকতন্ত্রে ঢোকে। এর পর অন্ত্র থেকে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে বা রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে তখন জন্ডিস হয়। জন্ডিসের কারণে ত্বক, মিউকাস মেমব্রেন ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। ম্যালেরিয়া বা থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে লোহিত রক্তকণিকাগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। এর ফলে জন্ডিস হতে পারে। একে বলে প্রি-হেপাটিক জন্ডিস। লিভারের সমস্যার কারণে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে তাকে বলে হেপাটাইটিক জন্ডিস।
শিশুর কোন কোন লক্ষণ দেখে সতর্ক হবেন?
জন্ডিস হলে শিশু খেতে চাইবে না। চোখ, হাত-পায়ের তালু, মুখমণ্ডল ও শরীরের অন্যান্য অংশ হলুদ হয়ে যাবে।
সারা ক্ষণই ঝিমোবে শিশু। ক্লান্তি অত্যধিক বেড়ে যাবে।
প্রস্রাবের রং গাঢ় হলদেটে হয়ে যাবে।
জন্ডিস বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে লিভার ফুলে উঠবে। ফলে পেট অস্বাভাবিক রকম ফুলে যাবে।
ঘন ঘন বমি হতে থাকবে শিশুর।
সারা গায়ে চুলকানি হবে, ত্বক খসখসে হয়ে যাবে।
শিশুর আচরণে বদল আসবে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।
জন্ডিস ধরা পড়লে শিশুকে বেশি করে জল খাওয়াতে হবে। শরীর যেন জলশূন্য না হয়। শরীরের সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যটাও জরুরি। জন্ডিস হলে শিশুকে একবারে ভারী খাবার খাওয়ালেই বমি হবে। বারে বারে অল্প করে খাওয়াতে হবে। কিছু কিছু খাবার জন্ডিসের ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে, যেমন আখের রস। এ ছাড়াও টোম্যাটোর রস, খেজুর জন্ডিস রোগীদের জন্য খুব ভাল। বাটারমিল্ক, বিট, ডাবের জল বা লেবুর রসও নিয়মিত দিতে পারেন। নানা রকম ফলের রস বা সব্জি দিয়ে হালকা স্যুপও ভাল।