কিডনি ভাল রাখতে সারা দিনে ঠিক কতটা জল খাবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা দিন দিন চিন্তা বাড়ছে। ঘরে ঘরে এই রোগ। অনেকেই মনে করেন, বয়স্কদেরই বোধ হয় ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, ইউরিক অ্যাসিডের মতো ক্রনিক সমস্যা দেখা দেয়। তা কিন্তু নয়। এখন অল্প বয়সেও উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। নিয়মহীন জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার মতো কিছু কারণে উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড হতে পারে। রক্তে উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড জমার এই সমস্যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘হাইপারইউরিসেমিয়া’। যা থেকেই কিডনির রোগ দেখা দেয়। কিডনিতে পাথর জমার সমস্যাও দেখা দেয়। এর থেকে রেহাই পেতে হলে পর্যাপ্ত জল পানেরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
দেশের ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ইউরিক অ্যাসিড রক্তে বেশি পরিমাণে মিশতে থাকলে তা কিডনিতে পাথর জমার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য মানেই গেঁটে বাত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়বে। এই সমস্যা দূর হবে নিয়ম মেনে জল পান করলে। অনেকেই ভাবেন কিডনি ভাল রাখা মানেই ঢকঢক করে সারা দিন জল খেয়ে যাওয়া। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন, উচ্চতা, ওজন ও শরীরের অবস্থা বিচার করেই জল খাওয়া উচিত। যাঁর যতটুকু দরকার, তাঁকে ততটাই জল পান করতে হবে। এই মাত্রা নির্দিষ্ট থাকলে তবেই কিডনির স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাও হবে না।
কতটা জল খাবেন?
ওজনের উপর নির্ভর করবে দিনে ঠিক কতটা পরিমাণ জল খাবেন। যাঁর ওজন ৮০ কেজি তাঁকে ৬০ কেজি ওজনের কোনও ব্যক্তির চেয়ে বেশি জল খেতে হবে। ওজনকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে যে ফলাফল হবে, সেটিই হবে জলের পরিমাণ। অর্থাৎ, ওজন যদি ৬০ কেজি হয়, তা হলে সারা দিনে ২ লিটার জল খেতে হবে। ওজন ৮০ কেজি হলে ২.৬ লিটার জল খেতে হবে।
এ দেশে ৬৫–৭০ কেজি ওজনের সুস্থ মানুষের শরীরে দৈনিক জলের চাহিদা ৩–৪ লিটার। শীতকালে তা কমে হয় ২–৩ লিটার। কেমন খাবার খাচ্ছেন তার উপরও নির্ভর করে জলের চাহিদা। ঘরে কম তেল–নুন–মশলায় রান্না করা সুষম খাবার খেলে, কম জল খেলেই হয়। বাইরের খাবার বেশি খেলে, বেশি নুন দিয়ে রান্না খাবার নিয়মিত খেলে জলও বেশি খেতে হবে। তবে হৃদ্রোগ, কিডনির অসুখ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ইত্যাদির কারণে যাঁদের নুন কম খেতে হয়, তাঁদের জল খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের পেশির ঘনত্ব বেশি হয়। তাই সারা দিনে তাঁদের বেশি জলের প্রয়োজন হতে পারে। আবার যাঁরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বসবাস করেন, তাঁদের দেহে স্বাভাবিক ভাবেই জলের প্রয়োজন বেশি হয়। কারণ সেখানে আবহাওয়ার জন্য ঘাম বেশি হয়। মহিলাদের কমপক্ষে দিনে ১১.৫ কাপ (প্রায় ২.৭ লিটার) তরল পান করা উচিত। অন্য দিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে সেখানে দিনে কমপক্ষে ১৫.৫ কাপ (৩.৬ লিটার) তরল পান করা উচিত। এর মধ্যে শুধু জল নেই কিন্তু, ডাবের জল, শরবত বা তরল খাবারও রয়েছে। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জলের পাশাপাশি ভেষজ চা, ডিটক্স পানীয়, যেমন ডাবের জল, লেবু-পুদিনা ভেজানো জল, মেথি বা জিরে ভেজানো জলও নিয়ম করে পান করা উচিত। এতেও কিডনির স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।