ওষুধ না খেয়েও সুস্থ এডস রোগীরা, কোন চিকিৎসায় আশা জাগছে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এডসের মতো মারণ রোগের চিকিৎসায় কি তবে আশার আলো দেখা গেল? এডস একেবারে নিরাময় হয়ে যাবে, এ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে শরীরে মারণ রোগ নিয়ে ওষুধ না খেয়েও সুস্থ আছেন জনা দশেক রোগী। এডসের জন্য যে নির্দিষ্ট থেরাপি করতে হয়, এই মুহূর্তে তা-ও নিতে হচ্ছে না তাঁদের। এটা সম্ভব হয়েছে এক বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিতে।
সান ফ্রান্সিসকোর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকেরা এডসের চিকিৎসায় নতুন এক থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন। চেনা কিছু ওষুধের বদলে তাঁরা ‘কম্বিনেশন থেরাপি’ শুরু করেছেন। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এডসে আক্রান্ত দশ জনকে নিয়ে পরীক্ষা চলছে। তাঁদের প্রতিষেধক, ইমিউন-অ্যাকটিভ ওষুধ ও ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজ়িং অ্যান্টিবডি’ (বিএনএবিএস) নির্দিষ্ট ডোজ়ে পর পর দেওয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের ওষুধ ও অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হয়েছে, তার নাম এখনও জানাননি গবেষকেরা। তাঁরা বলেছেন, এই ‘কম্বিনেশন থেরাপি’-র পরে দেখা গিয়েছে, রোগীদের আরও কোনও ওষুধ খেতে হয়নি। যাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল, তাঁদের আলাদা করে আর কোনও থেরাপি নিতেও হয়নি। এই ভাবে ১৮ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে এবং ওষুধ ছাড়াই সুস্থ রয়েছেন রোগীরা।
এই রোগে আক্রান্ত হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর সেই কারণেই অন্যান্য জীবাণুঘটিত রোগ খুব সহজেই শরীরে বাসা বাঁধে। তাঁদের মধ্যে টিউবার কিউলোসিস বা যক্ষ্মা, বিভিন্ন ছত্রাকঘটিত রোগ, যেমন ক্রিপ্টোকক্কাস, ক্যানডিডা অন্যতম। একই সঙ্গে স্নায়ুঘটিত কিছু রোগ এবং বিশেষ ধরনের কিছু টিউমারও দেখা দিতে থাকে রোগীর শরীরে। এডসের ভাইরাস এত বেশি সংখ্যায় বাড়তে থাকে, যে নানা ধরনের সংক্রমণ দেখা দিতে থাকে।
এইচআইভি সংক্রমণ মূলত তিনটি ধাপে হয়। প্রথম ধাপ, অ্যাকিউট স্টেজ বা অ্যাকিউট রেট্রোভাইরাল সিনড্রোম। যা সংক্রমণের ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হয় এবং নিজে থেকেই ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। এতে সাধারণত, জ্বর বা সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা যায়। দ্বিতীয় ধাপ, ক্লিনিক্যাল ল্যাটেন্সি বা ক্রনিক স্টেজ। এই স্টেজে সাধারণত সংক্রমণের কোন লক্ষণ সে ভাবে শরীরে প্রকাশ পায় না। তৃতীয় এবং অন্তিম ধাপ হল এডস। এই পর্যায়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। সেই সময় শরীরে নানা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রাণঘাতী নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এইচআইভির যে চিকিৎসা বর্তমানে রয়েছে, তার নাম অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি)। এর মাধ্যমে রোগীকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। তবে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নতুন চিকিৎসাটি করার পরে দেখা গিয়েছে, এআরটি করার আর প্রয়োজন পড়েনি। এটি ছাড়াই এক বছরের উপর সুস্থ আছেন রোগীরা। নতুন চিকিৎসা যদি সকলের ক্ষেত্রেই কার্যকরী হয়, তা হলে এডস নির্মূল করার লক্ষ্যে আরও কিছুটা অগ্রসর হওয়া যাবে বলেই আশা রাখা হচ্ছে।