Lung cancer vs. Pneumonia

সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ভেবে ভুল হয়, বিভ্রান্ত করে ফুসফুসের ক্যানসার, কব্জা করার উপায় পেলেন গবেষকেরা

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকদের দাবি, প্রথম পর্যায়ে নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের ক্যানসারের উপসর্গ একই রকম থাকে। তাই রোগী ধরতেই পারেন না, আসলে কোন অসুখ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৪১
Share:

সর্দি-কাশি, কফ জমে যাওয়া মানে নিউমোনিয়া না-ও হতে পারে। ফাইল চিত্র।

সর্দি-কাশি সারতে না চাইলে অন্তর্জাল ঘেঁটে ওষুধের নাম দেখে খেয়ে ফেলাই অভ্যাস অনেকের। কাশির দমক বাড়লে, আরও কয়েক কদম এগিয়ে কাশির সিরাপ খেতে শুরু করে দেন প্রায় সকলেই। তাতেও না সারলে ঘরোয়া টোটকা তো আছেই। এর মধ্যে যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে জল বসে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়, তা হলে ভেবেই নেওয়া হয়, নিউমোনিয়া হয়েছে। সর্দি-কাশি বা কফ জমার সমস্যায় ক’জনই বা আর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চেস্ট এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করান। তাই রোগ ধরাও পড়ে না প্রাথমিক পর্যায়ে। কাশি বা কফ জমার সমস্যা বলে যা ভ্রম হচ্ছিল এত দিন, পরে হয়তো দেখা যায়, তা-ই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়ে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ হয়ে উঠেছে। মানুষের শরীরকে বিভ্রান্ত করে ফুসফুসের ক্যানসার নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ ফুটিয়ে তোলে প্রাথমিক পর্বে। এমনটাই দাবি করেছেন গবেষকেরা।

Advertisement

আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকদের দাবি, প্রথম পর্যায়ে নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের ক্যানসারের উপসর্গ একই রকম থাকে। তাই রোগী ধরতেই পারেন না, আসলে কোন অসুখ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর। সঙ্গে কাশি। পাশাপাশি, শ্বাসকষ্টও থাকে। সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে। বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের ব্যথার এই ধরন তবে একটু আলাদা। সাধারণত, গভীর শ্বাস নেওয়ার সময়ে এই বুকের ব্যথা অনুভূত হবে। ফুসফুসের প্রদাহের কারণে এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া, মাথায় যন্ত্রণা, ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়া, খাওয়ায় অনীহা, সারা ক্ষণ বমি বমি ভাবও আনুষঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পড়ে। ফুসফুসের ক্যানসারের লক্ষণও অনেকটা সে রকমই। তবে আরও কিছু উপসর্গ এ ক্ষেত্রে দেখা দেয়, যেমন— শুকনো কাশি মাসের পর মাস থেকে যাবে, কাশির সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসবে, হঠাৎ করেই ওজন কমতে থাকবে, অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও রোগ সারবে না।

এমআইটির গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ঘন ঘন নিউমোনিয়া হয়েছে, এমন ব্যক্তির ভবিষ্যতে ফুসফুসের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। যদি দেখা যায়, বিশেষ কিছু জিনে রাসায়নিক বদল (মিউটেশন) হচ্ছে, তা হলে সেখানকার কোষগুলির অস্বাভাবিক ও অনিয়মিত বিভাজন হতে শুরু করবে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি টিউমার কোষ তৈরি হবে, যা ফুসফুস থেকে শ্বাসনালি অবধি ছড়িয়ে পড়বে। আবার উল্টোটাও হতে পারে। ফুসফুসের ক্যানসার রয়েছে, এমন ব্যক্তির ঘন ঘন নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

Advertisement

নিউমোনিয়া বা ফুসফুসের ক্যানসার, ধরার উপায় কী?

চেস্ট এক্স-রে ও লো-ডোজ় সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে ফুসফুসের সংক্রমণ কতটা মারাত্মক পর্যায়ে গিয়েছে, যা থেকে চিকিৎসকেরা অনুমান করেন যে, রোগটি কেবল নিউমোনিয়া, না কি তা ক্যানসারের দিকে গড়িয়েছে। তবে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে আরও কয়েকটি পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন, যা নিউমোনিয়া ও ক্যানসারের মধ্যে তফাত করতে পারবে প্রাথমিক পর্ব থেকেই।

১) নতুন একটি এআই মডেল তৈরি হয়েছে, যার নাম ‘সিবিল’। এই পদ্ধতিতে এআই অ্যালগরিদ্‌মের সাহায্যে সিটি স্ক্যানের ডেটা বিশ্লেষণ করে ধরা যায়, কোনও ব্যক্তির ফুসফুসের অবস্থা কেমন। আগামী ৬ বছরের মধ্যে তাঁর ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি আছে কি না।

২) এমআইটির গবেষকদের তৈরি বিশেষ রকম চেস্ট এক্স-রে নিউমোনিয়া ও ক্যানসারের মধ্যে তফাত ধরতে পারবে। ফুসফুসের কোষের বিভাজন শুরু হয়েছে কি না, তা ধরা যাবে এই পদ্ধতিতে।

৩) ব্রিদালাইজ়ার টেকনোলজিতে বিশেষ ধরনের বায়োমার্কার ব্যবহার করে ফুসফুসের রোগের কারণ চিহ্নিত করতে পারবেন গবেষকেরা। ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসঘটিত নিউমোনিয়া, না কি ক্যানসার, সেই সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরা যাবে গোড়াতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement