পিঁপড়ের দই, কেন এত চর্চা গবেষক মহলে? ছবি: এআই।
পিঁপড়ের দই? না না, পোকামাকড় খেতে হবে না। তবে দুধ থেকে দই পাততে আর এত খাটাখাটনির প্রয়োজন হবে না। দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে কয়েকটি পিঁপড়ে ছেড়ে দিলেই হবে। তাতেই দুধ জমাট বেঁধে দই তো হবেই, সে দইয়ের স্বাদও হবে অপূর্ব। এমনটাই দাবি গবেষকদের। ‘আইসায়েন্স’ জার্নালে এই বিষয়ক গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।
পিঁপড়ে দিয়ে দই পাতার পদ্ধতি নতুন নয়। ইউরোপের বলকান উপদ্বীপ ও তুরস্কের কিছু জায়গায় বহু কাল আগে এই পদ্ধতিতেই দই পাতা হত। শতাব্দী-প্রাচীন সেই প্রণালী নিয়ে এখন নতুন করে গবেষণা করছেন টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেনমার্কের গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, দোকানে বনস্পতি মেশানো বা নানা রাসায়নিক মিশিয়ে দইকে সুস্বাদু করার যে প্রক্রিয়া প্রচলিত রয়েছে, তার থেকে পিঁপড়ে দিয়ে পাতা দই অনেক বেশি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। পিঁপড়ের শরীরে ল্যাক্টিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া ও অ্যাসেটিক অ্যাসিড ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা দুধের শর্করাকে ভেঙে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি করে এবং দুধকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
পিঁপড়েরা সাধারণত তিন পদ্ধতিতে দুধ থেকে দই পাততে সাহায্য করে—
১) পিঁপড়ের মধ্যে থাকা ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুলগারিস ও স্ট্রেপ্টোকক্কাস থার্মোফিলাস ব্যাক্টেরিয়া খুব দ্রুত দুধের শর্করা (ল্যাক্টোজ়) ভেঙে ল্যাক্টিক অ্যাসিড তৈরি করে ফেলে। এতে দুধ জমাট পেতে যে দই তৈরি হয় তা খেতেও স্বাদু হয়। গতানুগতিক পদ্ধতিতে দুধে সামান্য দই ফেলে মজানোর যে প্রক্রিয়া, তার চেয়ে পিঁপড়ে দিয়ে মজানো দুধের স্বাদ ও পুষ্টি উপাদান বেশি হয় বলেই দাবি গবেষকদের।
২) লাল পিঁপড়েরা তাদের আত্মরক্ষার জন্য ফর্মিক অ্যাসিড নিঃসরণ করে। এই অ্যাসিড দুধে মিশলে দুধের অম্লতা কমে যায়। এতে যে দই তৈরি হয়, তাতে উপকারী ব্যাক্টেরিয়াও থাকে বলে দাবি গবেষকদের।
৩) পিঁপড়ে ও তাদের শরীরে থাকা কিছু ব্যাক্টেরিয়া এমন কিছু উৎসেচক তৈরি করে, যা দুধের প্রধান প্রোটিন কেসিনকে ভেঙে দিতে সাহায্য করে। এতে দুধ খুব তাড়াতাড়ি জমাট বেঁধে দই তৈরি হয়।
ডেনমার্কের কিছু রেস্তরাঁ এই পদ্ধতিতে দই পাতা শুরু করেছে। সে দই চেটেপুটে খাচ্ছেন সকলে। তবে পিঁপড়ে দিয়ে দুধ থেকে দই পাতার এই প্রাচীন পদ্ধতিকে স্বাস্থ্যকর বলে দাবি করলেও, বাড়িতে এই প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে বারণই করছেন গবেষকেরা। গবেষক লিয়োনি জ্যান জানিয়েছেন, অভিজ্ঞ রাঁধুনি বা গবেষকেরা এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে দেখছেন। কী ভাবে স্বাস্থ্যকর প্রোবায়োটিক তৈরি করা যায়, সে উদ্দেশ্যেই এই গবেষণা। তবে বাড়িতে এই প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে গেলে সংক্রমণের ভয় থাকতে পারে। পিঁপড়ে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া ছাড়াও নানা রকম অণুজীব বহন করে। কাজেই সেগুলি সরাসরি দুধে গিয়ে মিশলে তা আরও ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।