জ্বরের জন্য দায়ী শুধু জীবাণু নয়, আসল কারণ কী? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
জ্বর হওয়ার আসল কারণ কী? উত্তরটা নিশ্চয়ই হবে, কোনও ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া। আসলে তা নয়। বহিরাগত কোনও জীবাণু শরীরে ঢুকলে সংক্রমণ ঘটবে, তাতে কোনও সন্দেহই নেই। তবে এই জীবাণুদের উস্কানি দিয়ে রোগ ছড়াতে বাধ্য করে শরীরে তৈরি হওয়া এক প্রোটিনই। সে-ই আসল খলনায়ক। ‘দুষ্ট’ সেই প্রোটিনকে খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।
‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স’ জার্নালে গবেষণার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটির সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক ইউনিভার্সিটি। চিনের এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটেনের নটিংহাম ও এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি, চিনের ইনস্টিটিউট অফ মাইক্রোবায়োলজির গবেষকেরা একযোগে এই গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণাপত্রে তাঁরা লিখেছেন, মানুষের শরীরেই এমন এক প্রোটিন তৈরি হয়, যা জ্বরজারির ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াকে রোগ ছড়াতে উস্কানি দেয়। এই প্রোটিন আবার বয়স্কদের শরীরে বেশি তৈরি হয়। তাই বয়সকালে ঘন ঘন জ্বর, নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সেই প্রোটিনটির নাম ‘অ্যাপোলিপোপ্রোটিন ডি’। এটি তৈরি হয় লিভারে।
বয়সকালে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ বেশি ঘটে। বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারও বেশি। গবেষকেরা দাবি করেছেন, তার জন্য দায়ী এই বিশেষ প্রোটিন। লিভারে তৈরি হয়ে প্রোটিনটি রক্তপ্রবাহে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। লিভার ও ফুসফুসের কোষ নষ্ট করতে শুরু করে। বাইরে থেকে কোনও জীবাণু শরীরে ঢুকলে তার বিভাজন ও বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, প্রোটিনটির পরিমাণ বেশি হলে তা খুব দ্রুত ফুসফুসের কোষ নষ্ট করতে থাকে। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেখানেও সুস্থ কোষের মৃত্যু ঘটে খুব তাড়াতাড়ি। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
প্রোটিনটির আসল লক্ষ্য হল মাইটোকন্ড্রিয়া, যা কোষে কোষে শক্তির জোগান দেয়। এর কারণেই কোষ সচল ও সজীব থাকে। প্রোটিনটি সরাসরি মাইটোকন্ড্রিয়ায় গিয়ে ধাক্কা দেয় এবং তার প্রাচীর ভেঙেচুরে দেয়। ফলে কোষে শক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়। এতে শরীরের প্রতিরোধ শক্তি কমে এবং বাইরে থেকে আগত ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাসের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই সঙ্গেই শরীরে জলশূন্যতা দেখা দিতে থাকে, কমে যায় অক্সিজেনের মাত্রা। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার সংক্রমণকে যদি বাগে আনতে হয়, তা হলে ওই প্রোটিনের দাপট কমাতে হবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তা কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়েই গবেষণা চলছে।