ধূমপায়ীরা যে স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলি অবশ্যই করিয়ে নেবেন।
সিগারেটে টান না দিলে দিনটাই যেন শুরু হয় না। সকালে চায়ের কাপে চুমুক আর সিগারেটে লম্বা টান দিলে তবেই মেজাজ ফুরফুরে হয় অনেকের। অফিসে কাজের ফাঁকে দেদার ধূমপান তো চলেই। মন ভাল থাক বা মন্দ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাহাড় জমলে তো কথাই নেই। ধূমপায়ীরা প্রায়ই বলেন, সিগারেটে টান না দিলে নাকি মনই ভাল হয় না! অতএব ধূমপানে বিরতি নেই। ছাড়ার ইচ্ছাও নেই। আর যাঁরা ছাড়তে চাইছেন, তাঁরা দীর্ঘ দিনের লালিত অভ্যাসকে বিদায় জানাতে পারছেন না কিছুতেই। ধূমপান বেশি করুন বা কম, তার প্রভাব শরীরের উপর পড়বেই। রোজ গুনে গুনে দু’টি সিগারেট খান কিংবা অভ্যাসের বশে অগুন্তি— নিকোটিন তিলে তিলে ক্ষতি করে শরীরের। সাময়িক ভাবে তা বোঝা যায় না। কিন্তু যত দিন যায়, তত প্রকাশ পেতে থাকে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি।
ফুসফুসের ক্যানসার, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ, ডায়াবিটিস থেকে দাঁতের ক্ষয়— ধূমপানের ক্ষতির তালিকাটা লম্বা। নিকোটিন তিল তিল করে শরীরে কী বদল আনছে তা ধরা না গেলে পরবর্তী সময়ে গিয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। যাঁরা নিয়মিত ধূমপান করেন এবং রীতিমতো আসক্ত, তাঁদের কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই করাতে হবে। সেগুলি কী কী এবং কেন করাবেন, তা জেনে নেয়া যাক।
১) স্পাইরোমেট্রি
শ্বাসের পরীক্ষা। যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি নল দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস টানতে ও ছাড়তে হয়। এতে বোঝা যায় শ্বাসপ্রশ্বাসে হার স্বাভাবিক কি না। শ্বাসের গতি দেখে ফুসফুসের অবস্থা বোঝা যায়। হাঁপানি, সিওপিডি, পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মতো রোগও শনাক্ত করা যায়।
২) চেস্ট রেডিয়োগ্রাফ
ফুসফুসে ক্যানসার বাসা বাঁধছে কি না, হার্টের অবস্থা কেমন তা জানতে চেস্ট এক্স-রে বা চেস্ট প্রোজেকশন রেডিয়োগ্রাফ করিয়ে রাখলে ভাল হয়। এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে ধমনী দিয়ে রক্তপ্রবাহ ঠিক মতো হচ্ছে কি না, হার্টে ব্লকেজ রয়েছে কি না, ফুসফুসের ভিতর টিউমার কোষ তৈরি হচ্ছে কি না।
৩) গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্ট
অত্যধিক নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণে তারতম্য ঘটে। যাঁরা অতিরিক্ত ধূমপান করেন, তাঁদের রক্তে শর্করা বাড়ছে কি না বা তাঁরা প্রি-ডায়াবেটিক কি না, তা ধরা পড়বে গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্টে।
৪) ইলেক্ট্রোকার্ডিয়োগ্রাফি
এটি কার্ডিয়াক স্ক্রিনিং পদ্ধতি। দীর্ঘ সময় ধরে যাঁরা ধূমপান করছেন তাঁদের এই পরীক্ষাটি করিয়ে রাখাই ভাল। এতে বোঝা যায় হৃৎস্পন্দনের হার অনিয়মিত হচ্ছে কি না, ধমনীতে কোনও ‘প্লাক’ জমছে কি না। হৃদ্রোগের লক্ষণও ধরা পড়ে এই পরীক্ষায়।
৫) হাই-সেনসিটিভিটি সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন টেস্ট
এটি রক্তের একটি পরীক্ষা। এই টেস্টে রক্তে সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (সিআরপি)-এর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রোটিনটির ওঠানামায় শরীরে প্রদাহ তৈরি হয়। যা দেখে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে কি না, তা ধরা যায়। এইচএস-সিআরপি লেভেল পরীক্ষাটি আগে থেকে করিয়ে রাখলে ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমবে।