শিশুর নাক দিয়ে রক্ত বেরোলে সঙ্গে সঙ্গে কী করবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
আচমকা শারীরিক কোনও সমস্যা হলে অনেকেই হকচকিয়ে যান, বুঝতে পারেন না তৎক্ষণাৎ কী করতে হবে। তেমনই এক সমস্যা নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা ‘নোজ় ব্লিডিং’। শরীরে তেমন কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু হঠাৎ নাক থেকে রক্ত বার হলে ভয় লাগেই। বিশেষ করে ছোটদের নাক দিয়ে যদি রক্ত বেরোতে থাকে, তা হলে মা-বাবাদের ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা কী ভাবে করবেন, জেনে রাখা ভাল।
নাক দিয়ে রক্তপাতের কারণ কী?
নাক থেকে রক্তক্ষরণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দু’বছর থেকে দশ বছরের শিশুদের মধ্যে। এই সমস্যার কারণ অনেক। শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পালের মতে, নাক দিয়ে রক্তপাতের কারণ হতে পারে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা, শরীরে জলের ঘাটতি, উচ্চ রক্তচাপ, ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ।
নাসিকা ছিদ্রের ভিতরে খুব পাতলা স্বচ্ছ আবরণ বা মিউকাস মেমব্রেন থাকে। সেই আবরণের তলায় থাকে অসংখ্য রক্তনালি। এই রক্তনালির মধ্যে দিয়ে যদি রক্ত চলাচল বাধা পায় বা নাকের ভিতরের মিউকাস পর্দা শুকিয়ে যায়, তখন সেখানে জ্বালা, চুলকানি হয়। অস্বস্তির কারণে অনেক সময়েই শিশুরা নাকের ভিতরে আঙুল দিয়ে খোঁচাতে থাকে। তখন সেই স্বচ্ছ আবরণ ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বার হয়। খুব গরম বা শুষ্ক আবহাওয়ায় এমন হতে পারে, আবার শরীরে জলের ঘাটতি হলে বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা ভোগালে তখন নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে পারে।
অ্যালার্জিজনিত সমস্যার কারণেও শিশুদের নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ‘অ্যালার্জিক রাইনিটিস’ থাকলে ক্রমাগত হাঁচি, নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা হয়। তখন অস্বস্তি কমাতে ন্যাজ়াল স্প্রে ব্যবহার করা হয় অনেক সময়েই। অতিরিক্ত ন্যাজ়াল স্প্রে ব্যবহার করলে নাকের ভিতরের রক্তনালিগুলি শুকিয়ে যেতে থাকে, তার জন্যও রক্তপাত হয়। আবার রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে গেলেও নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে পারে।
প্রাথমিক চিকিৎসা কী?
শিশুর নাক দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকলে তাকে শুইয়ে দেবেন না। সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে যাতে রক্ত গলা দিয়ে ফুসফুসে বা শরীরের অন্য কোথাও চলে না যায়। ভাল হয় যদি চেয়ার-টেবিলে বসে দুই হাতের উপর মাথা নীচু করে রাখা যায়।
বুড়ো আঙুল ও তর্জনী দিয়ে নাকের ছিদ্র দুটো চেপে ধরে রাখতে হবে ১০-১৫ মিনিট। তখন নিঃশ্বাস নিতে হবে মুখ দিয়ে। তবে টানা চেপে না রেখে ৫ মিনিট করে তা করতে পারেন। এতে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে।
কাপড়ে বরফ মুড়ে বা ঠান্ডা জলে তোয়ালে ভিজিয়ে নাকের উপরে, চারপাশে দেওয়া হলে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে।
শিশুকে বার বার নাকে হাত দিতে দেবেন না। সর্দি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ দিন, তবে ঘন ঘন ন্যাজ়াল স্প্রে দেবেন না।
শরীরে জলের ঘাটতি যেন না হয়, তা দেখতে হবে। শিশুর যদি আগে এমন হয়ে থাকে, তা হলে সতর্ক থাকতে হবে। দিনে পর্যাপ্ত জল ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে। এর পরেও রক্তক্ষরণ হতে থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।