Satish Shah Death Kidney Failure

কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু সতীশ শাহের! প্রতিস্থাপনেও কি শেষরক্ষা হয় না? কী দেখে সতর্ক হবেন

কিডনি প্রতিস্থাপন হওয়ার পরেও কেন শেষরক্ষা করা গেল না? কী কী কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? বলছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:০৩
Share:

কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু সতীশ শাহের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা সতীশ শাহ। ২৫ অক্টোবর, শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ মুম্বইয়ের হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৭৪ বছরের অভিনেতার। পরিচালক অশোক পণ্ডিত সমাজমাধ্যমে এক ভিডিয়ো পোস্ট করে দুঃসংবাদ দিয়ে জানিয়েছেন, কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে অভিনেতার। মুম্বইয়ের বান্দ্রার বাড়িতেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তা ছাড়া সূত্রের খবর, কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় অনেক দিন ধরেই ভুগছিলেন ‘সারাভাই ভার্সেস সারাভাই’-এর অভিনেতা। সম্প্রতি তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনও করা হয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কিডনির প্রতিস্থাপন হওয়ার পরেও কেন শেষরক্ষা করা গেল না? কী কী কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, ‘‘সতীশ শাহের ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো কোমর্বিডিটি ছিল কি না, সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য না পেলে সিদ্ধান্তে আসা যায় না। কিন্তু সাধারণত প্রতিস্থাপনের পরেও কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। এমন ঘটনা বিরল নয়। তার মূল কারণ, প্রতিস্থাপন মানেই তো শরীরে বহিরাগত বস্তুর প্রবেশ ঘটছে। শরীর তার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে না পারলেই সেটি বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। অর্থাৎ শরীর সেই অঙ্গটিকে বহিরাগত হিসেবেই দেখে। আর এই ঘটনাকে বলা হয় গ্রাফ্‌ট রিজেকশন। এই পরিস্থিতিতে প্রাপকের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত অঙ্গটিকে আক্রমণ করে এবং প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিস্থাপনের পর কিডনি ১০০ শতাংশ কাজ করবে, এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় না। আর যদি গ্রাফ্‌ট রিজেকশন দেখা দেয়, তা হলে আগের মতো একই সমস্যা ফের শুরু হবে। সেটি মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারে। অনেক সময়ে বাঁচানোও যায়, কিন্তু তার জন্য ডায়ালিসিসে ফিরে যেতে হবে। তা ছাড়া গ্রাফ্‌ট রিজেকশন আটকানোর জন্য একাধিক ওষুধ দেওয়া হয়। সতীশ শাহের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল, সেটা জানা যায়নি এখনও। কোনও রোগ ছিল কি না, বা কোনও সংক্রমণ হয়েছিল কি না, সেগুলি জানার পর সবটা বোঝা যাবে।’’

কিডনির রোগে কী কী নিয়ম পালন করা উচিত? ছবি: সংগৃহীত।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে মানুষ কিডনি বিকল হওয়ার বিষয়ে সতর্ক হবেন কী ভাবে?

Advertisement

কিডনি বিকল হওয়ার আগে বিভিন্ন উপসর্গ লক্ষ করা যায়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সে সব উপসর্গ দেখে সতর্ক হওয়া উচিত রোগীর। সেগুলি হল–

· শরীরে ফোলা ভাব– শরীরে জল জমতে থাকে এই সময়ে, তাই সারা শরীর, বিশেষ করে পা, পায়ের পাতা ও মুখে ফোলা ভাব দেখা দেয়।

· অস্বাভাবিক ক্লান্তি ও দুর্বলতা– সামান্য কাজ করেই হাঁপিয়ে ওঠা বা মনোযোগ কমে যাওয়া, জ্বর হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে।

· প্রস্রাবের পরিবর্তন– প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, রং গাঢ় হয়ে যায়, ফেনা বা বুদ্বুদ তৈরি হয় এই সময়ে।

· খিদে কমে যাওয়া– কিডনির অসুখে খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না, একই সঙ্গে হজমের সমস্যাও শুরু হয়।

· নিদ্রাহীনতা ও শ্বাসকষ্ট– শরীরে তরল জমে গিয়ে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর সারা শরীরে অস্বস্তি থেকে ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটে।

· হার্টের অসুখ- শরীরে জল জমা মানে হার্টেও জল জমার ঝুঁকি থাকে। ফলে হৃদ্‌যন্ত্রে চাপ পড়ে।

তা ছাড়া কিডনির অসুখ ধরা পড়লে কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত?

অরিন্দম জানাচ্ছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তার পর স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলি নির্দিষ্ট করতে হবে। তবে সাধারণ ভাবে বললে, কয়েকটি নিয়ম মেনে চলা উচিত। ১. রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ২. নুন ও প্রোটিন খাওয়া কমান। ৩. অতিরিক্ত জল বা তরল পান কমান (দিনে ২ লিটারের বেশি নয়)। চিকিৎসক বলছেন, ‘‘যতখানি তরল মূত্রাকারে শরীর থেকে বেরোচ্ছে, তার ৩০০-৪০০ লিটার বেশি জল আমরা দিতে পারি রোগীকে।’’

সতীশের ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, কোনও সতর্কবার্তা ছাড়াই মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারে কিডনির অসুখ। অনেকেই কিডনির রোগকে অবহেলা করে থাকেন। কিন্তু আগেভাগে সাবধান না হলে তা মারণরোগের রূপ নিতে পারে। এর পাশাপাশি ২০২০ সালে অতিমারির সময়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন সতীশ। যদিও হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার পর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন বলেই জানিয়েছিলেন অভিনেতা। ২০২১ সালে করোনার টিকাও নিয়েছিলেন সতীশ। কিন্তু কোমর্বিডিটির কারণেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement