জ্যোতিষ মতে ঈষট, মন্ত্র, গুরু, ভাব ও দীক্ষা

ভারতীয় সভ্যতার মহৎ দুটি প্রভাব সন্ন্যাস ও সতীত্ব। এই দুটি প্রভাব দ্বারা ভারতের ক্ষতি হয়েছে না লাভ হয়েছে সেটা নিয়ে সমাজবিদ ও ইতিহাসবিদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বর্ণাশ্রমের যে চারটে প্রথা ভারতকে ধরে রেখেছে তার একটি হল সন্ন্যাস। সন্ন্যাস যখন আছে তখন দীক্ষা থাকবেই।

Advertisement

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০১
Share:

ভারতীয় সভ্যতার মহৎ দুটি প্রভাব সন্ন্যাস ও সতীত্ব। এই দুটি প্রভাব দ্বারা ভারতের ক্ষতি হয়েছে না লাভ হয়েছে সেটা নিয়ে সমাজবিদ ও ইতিহাসবিদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বর্ণাশ্রমের যে চারটে প্রথা ভারতকে ধরে রেখেছে তার একটি হল সন্ন্যাস। সন্ন্যাস যখন আছে তখন দীক্ষা থাকবেই। দীক্ষা যখন আছে তখন গুরু, মন্ত্র, ঈষট ও ভাব থাকবেই। জ্যোতিষ মতে দীক্ষা, গুরু, ঈষট, মন্ত্র ও ভাবকে আমরা কি ভাবে দেখব!

Advertisement

জ্যোতিষ মতে লগ্নভাব, পঞ্চম ভাব ও নবম ভাব নিয়ে একটি ত্রিকোণ গড়ে ওঠে। এই ত্রিকোণ থেকে আমরা দীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজব। বলাবাহুল্য, জ্যোতিষ মতে এই ত্রিকোণকে লক্ষী ত্রিকোণ বলে। লগ্নভাব জাতক নিজে বা নিজের প্রকৃতি। লগ্নভাব জাতকের নিজের ভাব। জাতকের ভাব দুটি ভোগ ও ত্যাগ। জাতক ভোগের অধিকারে জন্মেছে না ত্যাগের অধিকারে জন্মেছে তা জাতক ভাবের উপর নির্ভর করে। দীক্ষা, আধ্যাতিক জীবনের আরম্ভের অংশে পড়ে। আমাদের ভারতবর্ষের আধ্যাতিক জীবন ত্যাগের অধিকারে পড়ে।

শনি গ্রহ ভারতবর্ষে হচ্ছে ত্যাগের প্রতীক। কেতু হচ্ছে আধ্যাতিক গ্রহ। আর একটা গ্রহ হল বৃহস্পতি। প্রাচ্য ও প্রাশ্চত্য জ্যোতিষে বৃহস্পতিকে ‘স্পিরিচুয়াল প্ল্যানে্লেট’ বলে। এই তিনটি গ্রহ নির্ণয় করবে, জাতক ত্যাগের না ভোগের অধিকারে জন্মেছে। যদি দেখা যায় জাতকের তিনটি ভোগ স্থান যেমন ৪র্থ ,৮ম ও ১২শ স্থানের একটিতে শনি অবস্থান করছে, তাহলে ধরে নিতে হবে জাতকের ভোগে বাধা আছে। এই সঙ্গে জাতকের লগ্ন, ৫ম ও ৯ম-এই তিনটি স্থানে বৃহস্পতি অবস্থান করছে। অনেক সময় ১২শে কেতু যদি থাকে তবে সোনায় সোহাগ। ১২শে কেতু মোক্ষ কারক।

Advertisement

তথন বলা যায়, জাতকের মধ্যে ত্যাগের ভাব রয়েছে। অনেক আশ্রমে এভাবে জাতকের ভাবকে ধরার চেষ্ঠা করা হয় দীক্ষার পূর্বে। পঞ্চম ভাব থেকে বিচার করা জাতকের ঈষ্ট ভাব কেমন হবে। ঈষ্ট না জানলে মন্ত্র বা বীজ ঠিক হবে কি করে? সাধারণভাবে ৫মে রবি থাকলে বিষ্ণু মন্ত্রে, চন্দ্র থাকলে সরস্বতী বা লক্ষী মন্ত্রে, মঙ্গল থাকলে হনুমান মন্ত্রে, বুধ থাকলে বেদান্ত বা বিষ্ণু মন্ত্রে, বৃহস্পতি থাকলে দূর্গা বা কালী বা কৃষ্ণ মন্ত্রে, শনি থাকলে শিব বা ভৈ্রব মন্ত্রে দীক্ষা হয়। অন্য কোনও গ্রহের সঙ্গে রাহু থাকলে জাতক বা জাতিকা বালক ব্রহ্মচহ্মারী বা লোকনাথ বাবার পথে দীক্ষিত হয়।

জ্যোতিষ মতে নবম ভাবথেকে সদ্ গুরুর বিচার হয়। ৯ম ভাবে শুভ বৃহস্পতি থাকে তবে সদ্ গুরু লাভ হয়, রবি বা বুধ থাকলে জ্ঞাণী গুরু, ৯মে শুভ শুক্র থাকলে কোন পরিব্রাজীকা নারী গুরু হয়। শনি থাকলে কোনও কর্মযোগী গুরু হয়। শুক্র ও মঙ্গল যৌথভাবে নবমে থাকলে তান্ত্রিক গুরু লাভ হয়। অন্য কোনও গ্রহর সঙ্গে রাহু থাকলে ভণ্ডগুরু লাভ বা তুকতাক করে এমন গুরুবাবার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আসে। রাহু ও শুক্র এক সঙ্গে ৯মে থাকলে কোনও ভৈরবী গুরুমার সান্নিধ্য লাভ হয়।

দীক্ষা কখন হবে? এ এক ভয়ঙ্কর জটিল প্রশ্ন। শ্রী অরবিন্দের কাছে কেউ দীক্ষা নিতে গেলে, তিনি একটা প্রশ্ন করতেন? তুমি কি ডাক পেয়েছ? কে, কখন ডাক পাবে সেটা সেই জানে। জ্যোতিষ মতে কখন দীক্ষা হয় আমরা সেটা বোঝার চেষ্টা করব। সাধারণত জন্মছকে, গোচরে বৃহস্পতি যদি জন্মকালীন বৃহস্পতির উপর দিয়ে যায় তখন ‘ডাক’ আসে বা দীক্ষার সময় হয়। আবার গোচর শনি যখন জন্মকালীন বৃহস্পতির উপর দিয়ে অতিক্রম করে তখনও দীক্ষা হয়। এছাড়া গোচর বৃহস্পতি যদি লগ্ন, ৫ম ও ৯ম ভাবের উপর দিয়ে যায় তখন দীক্ষা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন