—প্রতীকী ছবি।
নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্মকালীন গ্রহের অবস্থান অনুযায়ী উক্ত ব্যক্তির জীবনের সমস্ত কিছু বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। গ্রহের অবস্থান, দুই বা অধিক গ্রহের সম্পর্ক কখনও শুভ, কখনও অশুভ ইঙ্গিত দান করে। কোষ্ঠীতে গ্রহের শুভ ইঙ্গিতকে যোগ এবং অশুভ ইঙ্গিতকে সাধারণত দোষ বলা হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্রের আদি গ্রন্থসমূহে উল্লেখিত যোগ বা দোষের সংখ্যা কম নয়। বর্তমানকালে বিভিন্ন গবেষণার ফলে আরও কিছু যোগ এবং দোষ শাস্ত্রের অর্ন্তগত হয়েছে। সব মিলিয়ে জ্যোতিষশাস্ত্রে যোগ এবং দোষের সংখ্যা প্রচুর।
তবে সব দোষই যে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করে তা নয়। যদিও ভয়ঙ্কর দোষের সংখ্যাও খুব কম নয়। সেগুলির মধ্যেই কয়েকটি দোষের কথা এখানে জানানো হন।
কালসর্প যোগ বা দোষ:
কালসর্প যোগ বা দোষ কী? জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, রাহু এবং কেতু উত্তর এবং দক্ষিণ সংযোগ বিন্দু বা গানিতিক বিন্দু মাত্র। এই দুই বিন্দু সর্বদা সমসপ্তকে অবস্থান করে। জ্যোতিষশাস্ত্রে রাহু হল কাল এবং কেতু হল সর্প বা সাপ। কাল এবং সর্প যদি বাকি সাত গ্রহকে ঘিরে ধরে, তা হলে সৃষ্টি হয় কালসর্প যোগ বা দোষ। অর্থাৎ, রাহু এবং কেতুর এক পার্শ্বে সমস্ত গ্রহের অবস্থান হলে সৃষ্টি হয় কালসর্প যোগ বা দোষ।
প্রতিকার: কালসর্প দোষে রাহু এবং কেতুর প্রতিকার মেনে চলা প্রয়োজন।
মাঙ্গলিক দোষ:
জন্ম পত্রিকায় প্রথম (মতান্তরে দ্বিতীয়), চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম এবং দ্বাদশ স্থানে মঙ্গল গ্রহ অবস্থান করলে মাঙ্গলিক দোষ যুক্ত জন্মপত্রিকা বলা হয় বা মাঙ্গলিক দোষ সৃষ্টি হয়। যদিও মাঙ্গলিক দোষ শুনলেই মানুষজন যতটা আঁতকে ওঠেন, ততটাও ভয়ের কিছু নেই। সেটি সক্রিয় কি না সেটা আগে বিচার করা জরুরি। যে কোনও দোষ জন্মপত্রিকায় থাকলেই তা সবসময় সক্রিয় কি না তা ভালো করে বিচারের প্রয়োজন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে তা নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। মাঙ্গলিক দোষও বিভিন্ন কারণে নিস্ক্রিয় হয়। তবে মাঙ্গলিক দোষ সক্রিয় হলে প্রতিকার মেনে চলা জরুরি।
প্রতিকার: মঙ্গল গ্রহের প্রতিকার মেনে চলতে হবে।
গুরুচণ্ডাল দোষ:
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে বৃহস্পতি হল দেবগুরু এবং রাহু হল দৈত্যচণ্ডাল। জন্মছকে বৃহস্পতি এবং রাহু একসঙ্গে অবস্থান করলে গুরুচণ্ডাল দোষ সৃষ্টি হয়। রাহুর নির্দিষ্ট দূরত্বে যে গ্রহ অবস্থান করে, সেই গ্রহের পূর্ণ ফল দানের ক্ষমতা নষ্ট হয়। রাহু বা উত্তর গাণিতিক বিন্দুর কাছাকাছি বৃহস্পতি অবস্থান করলে বৃহস্পতির ফল দানের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বা হ্রাস পায় এবং রাহুর প্রভাব বৃদ্ধি পায়। তবে রাহু ও বৃহস্পতি একসঙ্গে অবস্থান করলেই যে তা ভয়ঙ্কর তা নয়। রাহুর ডিগ্রি বেশি এবং বৃহস্পতির ডিগ্রি কম হলে তা ভয়ঙ্কর প্রভাব বিস্তার করে। বিপরীত হলে সমস্যা থাকে, কিন্তু অতটা ভয়ঙ্কর না।
প্রতিকার: গুরুচণ্ডাল দোষে রাহু এবং বৃহস্পতির প্রতিকার প্রয়োজন।
পিতৃদোষ:
রবির সঙ্গে কোনও অশুভ গ্রহের সম্পর্ক হলে, বিশেষত শনি বা রাহুর সম্পর্ক হলে পিতৃদোষ নির্দেশ করে। এ ছাড়া অন্যভাবেও পিতৃদোষ সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিকার: পিতৃ দোষের বিভিন্ন ভাবে প্রতিকার সম্ভব। পিতৃদোষ সৃষ্টির কারণ দেখে প্রতিকার নির্বাচন করা উচিত।
এছাড়াও অনেক ভয়ঙ্কর দোষ জ্যোতিষশাস্ত্রে বর্তমান। ভয়ঙ্কর দোষ শুনলেই ভয় না পেয়ে সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করে প্রতিকার করলে দোষ নাশ না হলেও অশুভ প্রভাব হ্রাসপ্রাপ্ত করা সম্ভব।