কার্গিল বিজয় দিবসেও গ্রেনেড হামলা ভূস্বর্গে

সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ বলছেন, আর একটা কার্গিল হতে দেবেন না কিছুতেই। অথচ কার্গিল ‘বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপনের দিনেও গ্রেনেড হামলা জারি রইল ভূস্বর্গে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

কার্গিল শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগের। শনিবার পিটিআইয়ের ছবি।

সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগ বলছেন, আর একটা কার্গিল হতে দেবেন না কিছুতেই। অথচ কার্গিল ‘বিজয় দিবস’ উদ্‌যাপনের দিনেও গ্রেনেড হামলা জারি রইল ভূস্বর্গে। এ বার ঘটনাস্থল দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলা। জনবহুল আচ্ছাবল বাসস্ট্যান্ডের কাছে আজ বিকেলের এই হামলায় প্রাণ গিয়েছে এক জনের। গুরুতর আহত আরও পাঁচ জন। আহতের তালিকায় রয়েছেন সিআরপিএফের এক জওয়ানও। পাক মদতপুষ্ট কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীই এই হামলার পিছনে রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

Advertisement

গতকালও শ্রীনগরে টেলিকম সংস্থার অফিস ও মোবাইল টাওয়ারে তিনটি গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। অন্য দিকে, কার্গিলে যুদ্ধজয়ের ১৬তম বর্ষপূর্তির সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানও চলছে দ্রাস সেক্টরে। তারই মধ্যে আজকের এই হামলায় ফের কপালে ভাঁজ নয়াদিল্লির।

পুলিশের দাবি, আচ্ছাবলে সিআরপিএফ ঘাঁটি লক্ষ্য করেই এ দিন হামলা চালায় এক অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী। গ্রেনেড ছুড়েই সে পালিয়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে। আর গ্রেনেডটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আছড়ে পড়ে ঘাঁটি-লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডে। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আচ্ছাবলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা মোতায়েন করে প্রশাসন।

Advertisement

জম্মু ও কাশ্মীরে হিংসা ও জঙ্গিহানা আগের থেকে অনেকটাই কমছে বলে সম্প্রতি দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি অবশ্য অন্য কথাই বলছে। ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার পাশাপাশি গত কয়েক মাসে উপত্যকায় বিরোধী শিবিরের একাধিক মিছিলে পাকিস্তানের পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। উড়েছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের কালো পতাকাও। আবার সেই পতাকা পোড়ানো নিয়েও আর এক দফা জলঘোলা হয়েছে রাজৌরিতে। অভিযোগ, বিক্ষোভ মিছিলে আইএসের পতাকা পোড়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সমর্থকরা। রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি, ওই পতাকায় পবিত্র স্তোত্র ছিল। এবং তার প্রতিবাদেই আজ উপত্যকা জুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছিল কাশ্মীরের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন। স্থানীয় সূত্রের খবর, আজ কেনাকাটি প্রায় বন্ধই ছিল উপত্যকায়।

তাই এই পরিস্থিতিতে আজকের হামলায় কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। স্বাধীনতা দিবসের আগে এই ধরনের হামলা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা গোয়েন্দাদের।

অস্বস্তি বেড়েছে সেনা মহলেও। ১৯৯৯-এর জুলাইয়ে প্রায় মাস দুয়েক যুদ্ধের পর পাকিস্তানকে হটিয়ে কার্গিলের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। ২০ জুলাই থেকে তারই ১৬তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে কাশ্মীরের দ্রাস সেক্টরে। আজ সেখানেই যুদ্ধে নিহত সেনাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ বলেন, ‘‘আর একটা কার্গিল আমরা কিছুতেই হতে দেব না। সেই পরিস্থিতি যাতে না তৈরি হয়, নজর রাখছে ভারতীয় সেনা।’’

আচ্ছাবলে হামলা চলে এর কয়েক ঘণ্টা পরেই। কিন্তু কেন এই ধারাবাহিক আক্রমণ? গোয়েন্দাদের অনুমান, আজকের হামলাতেও লস্কর-ই-ইসলাম জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত থাকতে পারে। স্বাধীনতা দিবসের আগে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের বড় কোনও সন্ত্রাসের ছক থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, টহলদারি এড়িয়ে তলে তলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলছে। সেই দিক থেকে নজর ঘোরাতেই এই হামলা কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন