রাজ্যসভায় উপস্থিত ১৭২ সদস্যের ১৬৫ জনই ভোট দেন বিলটির পক্ষে। —ফাইল চিত্র।
সংরক্ষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত কাল লোকসভায় মুখ খোলেননি। আজ সংরক্ষণ বিলের ফাঁকফোকর নিয়ে বিরোধীদের ঝাঁঝালো আক্রমণ দেখে রাজ্যসভায় পিছিয়ে গেলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও। বিরোধীদের কড়া সমালোচনা সত্ত্বেও উচ্চবর্ণের সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিলটি বেশি রাতে পাশ হয়ে গেল রাজ্যসভায়। উপস্থিত ১৭২ সদস্যের ১৬৫ জনই ভোট দেন পক্ষে। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৭টি।
রাজ্যসভায় আজ বলার জন্য সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অমিত। বিরোধী সদস্যদের কথার নোটও নিচ্ছিলেন। কংগ্রেসের কপিল সিব্বল কিংবা এসপি-র রামগোপাল যাদব বলার সময় কয়েক বার তেড়েফুঁড়েও উঠেছিলেন। বিকালে স্মৃতি ইরানির মতো মন্ত্রীরাও জানাচ্ছিলেন, অমিত শাহ বলতে পারেন। কিন্তু বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর পুরনো সাক্ষাৎকার নিয়ে হাঙ্গামা করেন, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদী বলেছিলেন— এত রোজগার তৈরি হবে যে সংরক্ষণ কেউ চাইবেনই না। নতুন সংরক্ষণের ফলে যে আসলে দলিত, আদিবাসী, ওবিসি-র সংরক্ষণে কোপ পড়বে, পরিসংখ্যান দিয়ে সেটাও তুলে ধরে হাঙ্গামা করেন বিরোধীরা। এ সব দেখে সন্ধে গড়াতে ঘনিষ্ঠ মহলে অমিত শাহ জানান, ‘‘যে ভাবে রাজ্যসভায় তু-তু ম্যায়-ম্যায় হচ্ছে, এর পর আর বলব না।’’
অধিবেশন শুরুর আগেই আজ বিরোধীরা বৈঠকে বসে রাজ্যসভার কৌশল স্থির করেন। ডিএমকে, বাম, আরজেডি-র সদস্যরা স্থির করেন, বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হবে। তবে কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি-বিএসপি অবশ্য তাতে রাজি হয়নি। সমর্থনের কথা বলেও ভোটের মুখে এই বিল কেন, সে প্রশ্ন তোলেন শরিক দলের নেতারাও।
প্রস্তুতি নিলেও রাজ্যসভায় মুখ খুললেন না অমিত শাহ।
সকালেই গুজরাতের দলিত বিধায়ক জিগ্নেশ মেবাণী বলেন, সঙ্ঘ জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণের বিরোধী। তাই মোদীকে দিয়ে আর্থিক ভিত্তিতে সংরক্ষণ শুরু করে ধাপে ধাপে জাতিগত সংরক্ষণ তুলে দিতে চায়।
কংগ্রেসের সিব্বলও প্রায় একই ভঙ্গিতে বলতে শুরু করেন, এর ফলে গরিব দলিতদের ভাগ কেটে নেওয়া হচ্ছে। হিসেব কষে দেখান, হাতে গোনা কিছু লোকের সুবিধার জন্য এই বিল। এসপি-র রামগোপাল যাদব দেখান— সংরক্ষণ থাকলেও দলিত, আদিবাসী, ওবিসি-রা সরকারি চাকরি পান না।
বিলের পক্ষে বলতে উঠে কেন্দ্র কত ‘শৌচালয়’ বানিয়েছে, সেই অঙ্কে চলে যান আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। হাসির রোল ওঠে। সন্ধ্যায় দিল্লিতে ফিরে এলেও প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বিতর্কের সময়ে এক বারও রাজ্যসভায় যাননি। তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্নও তোলেন। কিন্তু বিলটি পাশ হওয়ার পরই বড় বড় তিনটি টুইট করে নিজের সাফল্য প্রচার করেন মোদী। তবে, রাজ্যসভায় মুখ না-খোলা অমিত বিল পাশের পরেও কোনও কথা না-বলে সংসদ ছাড়েন। রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘এটা তো প্রথম ছক্কা! স্লগ ওভারে মোদী এমন অনেক ছক্কাই মারবেন।’’
সংসদের দুই সভায় পাশ হওয়ার পরে শিক্ষা ও চাকরিতে উচ্চবর্ণের ‘গরিবদের’ ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বিলটি এ বার আইনে পরিণত হবে। কিন্তু এর মধ্যেই একটি মজার ঘটনা নজর কেড়েছে। লোকসভার এক সাংসদ কিছু দিন আগে জানতে চেয়েছিলেন, সরকার কি উচ্চবর্ণের গরিবদের জন্য সংরক্ষণের কথা ভাবছে? সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী কিষাণপাল গুর্জর মঙ্গলবার তার লিখিত জবাবে জানিয়েছেন, এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেমন সরকার চলছে? ডান হাত কী করছে, বাঁ হাত জানে না?’’