উফ! এসবও হয়েছে ২০১৭-তে?
ভারত সহিষ্ণুতার দেশ, এমনটা বিশ্বাস করতে অনেকেই ভালবাসেন। যদিও অসহিষ্ণুতার নমুনা আজকাল পর পর সামনে আসছে দেশের নানা প্রান্তে। সহিষ্ণু, নাকি অসহিষ্ণু, সে বিতর্ক আপাতত এক পাশে সরিয়েই রাখলেও, এ কথা কিন্তু মানতেই হবে যে, আমরা অনেকেই বেশ তাড়াতাড়ি রেগে যাই, অল্পেতেই মেজাজ হারাই, জাত-মান-কুল গেল বলে হইচই জুড়ে দিই।
২০১৭ সালের শেষ প্রান্তে পৌঁছে এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, এ বছরে কোন কোন ইস্যুতে খুব রেগে গিয়েছিলাম আমরা:
• বলিউড মুভি পদ্মাবতী রাজপুতদের বেজায় চটিয়ে দিয়েছে। যদিও রতন সিংহ-পদ্মাবতীর কাহিনির কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তবু অনেকেই মনে করছেন, রাজপুত অস্মিতায় আঘাত দিচ্ছে ‘বাস্তবের বিকৃতি’।
• দেওয়ালির আগে দিল্লিতে বাজি বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অনেকেই খুব অসন্তুষ্ট হন। দেওয়ালি হবে, কিন্তু বাজি ফাটবে না, দূষণে দিল্লি হাঁসফাঁস করবে না, এমনটা কি মেনে নেওয়া যায়? আমাদের অসন্তোষ স্বাবাবিক নয় কি?
• তিনি অত্যন্ত নামী অভিনেত্রী, বিশ্বসুন্দরীও। তা বলে প্রধানমন্ত্রী সমীপে যাওয়ার আগে পোশাক নিয়ে একটু ভাববেন না! ‘সচেতন’ নাগরিকদের রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। প্রিয়ঙ্কা চোপড়া তাই প্রবল ট্রোলিং-এর শিকার হলেন। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে দেখা করতে গেলে কী ধরনের পোশাক পরে যেতে হয়, সে বিষয়ে অনেক ‘জ্ঞান’ও অর্জন করলেন।
• জাভেদ হাবিবের সাহস বলিহারি! পুজোর আগে চটকদার বিজ্ঞাপন দেওয়ার এত তাগিদ যে, সপরিবার মা দুর্গাকে স্যালোঁতে হাজির করিয়ে দিলেন! বাঙালির কাছে ‘মা দুগ্গা’ তো পরিবারের একজন, বাপের বাড়িতে আসা উমা। অতএব বাংলার আপত্তি থাকবে না ওই বিজ্ঞাপনে। কিন্তু অন্য রাজ্যের মানুষের কথাও তো ভাবা উচিত ছিল জাভেদ হাবিবের।
• ইরফান পঠান এবং তাঁর স্ত্রী কী ভাবে এত ‘বেপরোয়া’ হতে পারলেন! স্ত্রীর মুখের সামনে থেকে হিজাব সরিয়ে সেল্ফি তুললেন! তার পরে সে ছবি আবার টুইট করলেন। এত বড় ‘ইসলাম বিরোধী’ কাজ করার আগে তাঁর ভাবা উচিত ছিল, এ দেশে কট্টরবাদীর সংখ্যা নেহাৎ কম নয়।
• ইরফান পঠানের আরও ‘অপরাধ’ রয়েছে। মুসলমানের ছেলে হয়ে হাতে রাখি পরলেন! হিন্দু বা মুসলিম, দুই তরফেই যে অসন্তুষ্ট হওয়ার জন্য অনেকে মুখিয়ে থাকেন সারাক্ষণ, সে কথা ইরফানের বোঝা উচিত ছিল।
• আমরা নিজেরা নিজেদের দেশকে গরিব বলতেই পারি। তা বলে বাইরের দেশের কেউ বলবেন, ভারত গরিব! মেনে নেওয়া যায়? স্ন্যাপচ্যাট-এর সিইও এত সাহস পেলেন কোথা থেকে? মোবাইল থেকে স্ন্যাপচ্যাট আনইনস্টল করার হিড়়িক পড়ে গেলে আর কী-ই বা বলার থাকে?
• সাধারণ মানুষ যেমন রেগে যেতে পারেন, তেমন সেন্সর বোর্ডেরও রেগে যাওয়ার হক আছে। ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’-র মতো ছবি বানানোর আগে নির্মাতাদের সে কথা খেয়াল রাখা উচিত ছিল। ভারতীয় মহিলাদের বিষয়ে ছবি বানাচ্ছেন, আর এমন ‘ব্যাভিচার’ দেখাচ্ছেন! এত বেপরোয়া হওয়া ভাল নয়।
• ভারতের ঠাকুর-দেবতা নিয়ে অস্ট্রেলীয়রা টানাটানি করতে গেলেন কেন? সে দেশের এক বিজ্ঞাপনে দেখানো হল, গণেশ ঠাকুর গোমাংস খাচ্ছেন। যতই হোক সাত সমুদ্দুরের ও পারে, এত বড় ‘অধর্মের’ আঁচ আমাদের গায়ে লাগবে না?
• উমর খালিদকে সেই কবেই ‘দেশদ্রোহী’ বলে দাগিয়ে দিয়েছে এবিভিপি। তার পরেও উমরকে সেমিনারে ভাষণ দিতে ডাকার সাহস হল কী ভাবে দিল্লির রামজস কলেজের পড়ুয়াদের? প্রবল আক্রোশে এর পর যদি আয়োজকদের উপর চড়াও হন কট্টরবাদীরা, তা হলে কি তাঁদের দোষ দেওয়া যায়?
আরও পড়ুন: