বানভাসি অসম

বন্যায় বেহাল রাজ্যের ১৭ লক্ষ মানুষ, পরিস্থিতি সামলাতে তৎপর মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের সব মন্ত্রী ও বিধায়করা আজ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখলেন। বন্যাত্রাণে গিয়ে নৌকো উল্টে জলেও পড়লেন খুমটাইয়ের বিধায়ক। এ দিকে, বন্যায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। জাতীয় অরণ্যগুলিতে বাড়ছে পশুমৃত্যুর সংখ্যাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

বন্যা কবলিত কাজিরাঙায় উদ্ধার করে নিয়ে আসা হচ্ছে গন্ডারশাবককে। বৃহস্পতিবার। ছবি: শুভময় ভট্টাচার্য।

মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যের সব মন্ত্রী ও বিধায়করা আজ বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখলেন। বন্যাত্রাণে গিয়ে নৌকো উল্টে জলেও পড়লেন খুমটাইয়ের বিধায়ক। এ দিকে, বন্যায় আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। জাতীয় অরণ্যগুলিতে বাড়ছে পশুমৃত্যুর সংখ্যাও। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর হিসেবে বর্তমানে রাজ্যের ৩০টি জেলার মধ্যে ২১টিই বন্যা কবলিত। বন্যার্তের সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ।

Advertisement

আজ মাজুলিতে, নিজের কেন্দ্রে বন্যার শোচনীয় অবস্থা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুই মন্ত্রী, কেশব মহন্ত ও নবকুমার দোলে। গত পাঁচদিন ধরে মাজুলি বাইরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। সোনোয়ালরা এ দিন হেলিকপ্টারে নগাঁও, মরিগাঁও, যোরহাটের বন্যা দেখে মাজুলি আসেন। ঘুরে দেখেন ভাঙা বাঁধ, দু’টি আশ্রয় শিবির। মুখ্যমন্ত্রী শিবিরে পর্যাপ্ত খাদ্য, জল, শিশু ও পশুখাদ্য, ওষুধ রাখার ব্যবস্থা করতে বলেন। দ্রুত ভাঙা বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। সেখান থেকে তিনি লখিমপুরে যান।

সোনোয়ালের নির্দেশে মন্ত্রী রঞ্জিৎ দত্ত শোণিতপুর, বিশ্বনাথ, নব দোলে মাজুলি, লখিমপুর, ধেমাজি, রিহন দৈমারি নলবাড়ি, চিরাং, বাক্সা, পরিমল শুক্ল বৈদ্য ডিব্রুগড়-তিনসুকিয়ায় যান। পূর্তমন্ত্রী পরিমলবাবু বন্যার জল নামলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলি মেরামতির নির্দেশ দেন। জেলাশাসকদের অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুগুলির রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ দিন ধুবুরি ও নামনি অসমে গিয়েছেন বনমন্ত্রী প্রমীলারানি ব্রহ্ম ও স্পিকার রঞ্জিৎ দাস। আগামী কাল মুখ্যমন্ত্রী নামনি অসম যাবেন। পল্লবলোচন দাসকে দরং, কামরূপ, গোয়ালপাড়া ও দক্ষিণ শালমারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গোয়ালপাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

Advertisement

গুয়াহাটিতে বিপদসীমার নীচে নেমেছে ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর। বন্যায় কোকরাঝাড়ে জলে ভেসে যায় পূর্ণিমা নার্জারি নামে এক কিশোরী। আরও এক ব্যক্তির জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। ঢকুয়াখানায় গত রাতে পূজা নাথ নামে এক শিশু জলে পড়ে মারা যায়। জাগীরোডের শান্তিপুরে কিলিং নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন ভদ্র বরদলৈ নামে এক ব্যক্তি। মিকিরগাঁওয়ে জলে পড়ে মারা গিয়েছে ১৩ বছরের সাহাবুর আলি। মৃতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২। গোলাঘাটের খুমটাইতে বন্যাত্রাণে গিয়ে খুমটাইয়ের বিধায়ক মৃণাল শইকিয়ার নৌকো উল্টে যায়। কোনওমতে বিধায়ক-সহ আরোহীরা প্রাণে বাঁচেন।

এ দিকে বন্যায় কাজিরাঙা-মানস-পবিতরা-ডিব্রু শইখোয়া অরণ্যগুলিতে পশুমৃত্যু বাড়ছে। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা হরিণদের। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেসে আসা বা বন্যায় মারা যাওয়া হরিণের মাংস বিক্রির খবরও আসছে। কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত আটটি গন্ডার ও গন্ডারশাবক উদ্ধার করে আনা হয়েছে। তেজপুরের ভোমোরাগুড়িতে বন্যায় ভেসে আসা বুনো শুয়োর উদ্ধার করতে গিয়ে তার আক্রমণে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রবীণ বরা ও আনোয়ার হুসেন নামে দুই বনকর্মী।

পাশাপাশি, বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়ার নেতৃত্বে কংগ্রেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রূপজ্যোতি কুর্মী, ইলিয়াস আলি, রকিবুল হুসেনরা উজানি অসমে গিয়েছেন।

অসমের পাশাপাশি মেঘালয় ও অরুণাচলও বন্যা ও ধসে বিধ্বস্ত। অরুণাচলের নামসাই, জিরো, পাসিঘাট, সেপা-সহ বিভিন্ন স্থানে ধসে পাহাড়ি এলাকাগুলি বিচ্ছিন্ন। ইটানগরের মওবের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের দফতরের সামনেই রাস্তা ধসে গিয়েছে। অরুণাচলের বিপর্যয় মোকাবিলায় সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে কেন্দ্র। মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড়ের সমতল অংশে প্রায় দু’লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত। স্পিকার আবু তাহের মণ্ডলের এলাকায় বন্যার তোড় বেশি। আজ মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা হেলিকপ্টারে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন। এ দিকে, গত দু’বছরের বকেয়া না মেটায় ত্রাণসামগ্রী দিতে চাইছেন না সরবরাহকারীরা। রাজাবালা, ফুলবাড়ি, হ্যালিডেগঞ্জ, ভৈতাবাড়িতে জেলা প্রশাসন বন্যার জন্য তৈরি না থাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ শিবির খোলা যায়নি। চিকিৎসকের অভাবে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। লোকসভায় কনরাড সাংমা ও রাজ্যসভায় ওয়ানসুক সিয়েম রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন