‘দুলহে রাজা’র গলায় নেই নোটের মালা

‘দুলহে রাজা’-র মাথায় পাগড়ি আছে। ফুলের মালার সেহরাও রয়েছে। নেই শুধু গলায় নোটের মালা! বিয়ের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুরনো দিল্লির সদর বাজার থেকে শুরু করে গোটা উত্তর ভারতেই নোটের মালা বিক্রি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে বাজার থেকে নোটের মালাও ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে রাতারাতি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৩
Share:

পুরনো দিল্লির সদর বাজারে দশ আর কুড়ি টাকার মালার দোকান। তবে দেখা নেই একশো-র মালার। কমেছে কেনাকাটাও।—নিজস্ব চিত্র

‘দুলহে রাজা’-র মাথায় পাগড়ি আছে। ফুলের মালার সেহরাও রয়েছে।

Advertisement

নেই শুধু গলায় নোটের মালা!

বিয়ের মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পুরনো দিল্লির সদর বাজার থেকে শুরু করে গোটা উত্তর ভারতেই নোটের মালা বিক্রি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে বাজার থেকে নোটের মালাও ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গিয়েছে রাতারাতি।

Advertisement

বিক্রি হবেই বা কী করে। সদর বাজারের ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, একে তো মানুষের হাতে খরচ করার টাকা নেই। তার থেকেও বড় সমস্যা হল, যে নোটের মালা গাঁথা হবে, সেই নোটের জোগান কোথায়? তবে মালা একেবারে গায়েব হয়ে যায়নি বাজার থেকে। ১০ বা ২০ টাকার মিলছে। কিন্তু সেটা পছন্দ করছেন না অধিকাংশ ক্রেতাই। মালব্য নগর থেকে ভাইঝির বিয়ের বাজার করতে এসেছিলেন রজনী গুপ্ত। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ইচ্ছে ছিল, ১০০-র মালা নেওয়ার। দুলহে রাজার গলায় কি আর ১০-২০ টাকার নোট মানায়?’’ ইচ্ছে থাকলেই বা উপায় কী! বাজারে ১০০ টাকার নোটই মিলছে না। তাই মালাও গাঁথা হচ্ছে না।

উত্তর ভারতের বিয়ের রেওয়াজ হল, বর নোটের মালা গলায় ঝুলিয়ে বিয়ে করতে যাবে। ঘোড়ায় চেপে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছনোর পর পাত্রীর বাড়ি থেকে আরও একটা নোটের মালা গলায় ঝোলানো হবে। পকেটের জোরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মালার দৈর্ঘ্যও। কে ১০০ বা ৫০০ টাকার নোট দিল, কে এক্কেবারে ১০০০-এর নোটের মালা ঝোলাতে পারছে, তা নিয়ে পাত্র ও পাত্রী পক্ষের মধ্যে রেষারেষিও চলে আকছার। তবে বরের গলায় মালা ঝুললেও, বিয়ের শেষে তাতে গাঁথা যাবতীয় নোটে অধিকার হল একমাত্র পাত্রের পিসির। তেমনটাই রেওয়াজ। পাত্রর পিসিরাও তাই এখন হাত কামড়াচ্ছেন।

সদর বাজারের বরা টুটি চকের দু’দিকেই লাইন দিয়ে বিয়ের সামগ্রীর দোকান। একটা-দু’টো দোকান ছাড়া কোথাও ১০০ টাকার নোটের দেখা মিলল না। শ্রী গৌরীশঙ্কর ট্রেডার্সের মালিক কমল সিংহ সাইনির সাফ কথা, ‘‘আপনি ১০০ টাকার নোটের বান্ডিল নিয়ে আসুন। ১৫ মিনিটে মালা গেঁথে দেব। কিন্তু আমরা নোট জোগাতে পারব না। রোজকার সংসার খরচের জন্যই তো ৫০-১০০ টাকার নোট পাচ্ছি না। নতুন চকচকে নোট ছাড়া মালা গাঁথা যায় না। ব্যাঙ্কে এত ভিড়। লাইন দিলেও খুচরো নোট মিলছে না।’’

রাজেন্দ্র গুপ্তর মতো যে সব ব্যবসায়ীর কাছে এখনও কয়েকটি ১০০ টাকার মালা রয়েছে, তাঁরা মোটা দাম হাঁকছেন। ৫০টি ১০০ টাকা দিয়ে তৈরি পাঁচ হাজারি নোটের মালা আগে ৫৩০০ টাকায় মিলত। এখন তারই দাম উঠছে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকা।

কিন্তু কেনার লোকই বা কোথায়? দোকানের উল্টো দিকে কানাড়া ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন দেখিয়ে রাজেন্দ্র বললেন, ‘‘অর্ধেক লোকের হাতেই নগদ নেই। এ দিকে এখানকার বেশির ভাগ দোকানেই কার্ডে বেচাকেনার চল নেই। এই বিয়ের মরসুমেও তাই দোকান খুলে মাছি তাড়াতে হচ্ছে।’’ মোদী সরকার কালই ঘোষণা করেছে, বিয়ের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা তোলা যাবে। কিন্তু তার ফলে এখনও সদর বাজারে বিক্রিবাটা বাড়েনি।

আড্ডাপ্রিয় ব্যবসায়ী নবীন জৈন অন্য গল্প শোনালেন। গত সপ্তাহে বেশ কিছু ৫০-১০০ টাকার নোটের মালা বিক্রি করেছেন। বিয়ের জন্য নয়। অন্য ব্যবসায়ীরাই খুচরোর জন্য ওই মালা কিনে নিয়ে গিয়েছেন। খুচরোর অভাবে ব্যবসা মার খাচ্ছে। তাই মালা গাঁথার মজুরি বাবদ দু’তিনশো টাকা বেশি খরচ করতেও আপত্তি করেননি কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন