Coromandel Express accident

করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮, জখম ৮০০-এর বেশি, ৫৬ জন গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হাসপাতালে

শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব-সহ রেলের পদস্থ অফিসারেরা। মন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে যান ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ১০:১৯
Share:

বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া কামরা। ছবি: পিটিআই ।

ওড়িশার বালেশ্বরে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। রেলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল শনিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ২৮৮ জন। আহতের সংখ্যা ৮০৩। যাদের মধ্যে ৫৬ জনের আঘাত গুরুতর। রেলের তরফে প্রথম বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল মৃতের সংখ্যা ৩০। পরে শনিবার ভোর ৫টা নাগাদ জানানো হয় মৃতের সংখ্যা ৩৮। দুপুর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ঘোষণা করা হল ২৮৮। অন্য দিকে ওড়িশা সরকারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনেরও বেশি। অন্য দিকে, ওড়িশার দমকল বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু ষড়ঙ্গী জানান, শনিবার ভোর পর্যন্ত অন্তত ১২০টিরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রত্যক্ষদর্শীদেরও আশঙ্কা, উদ্ধারকাজ যত এগোবে, নিহত এবং আহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে অনেক যাত্রী আটকে রয়েছেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন। গভীর রাতে ট্রেনের দরজা ভেঙে ও গ্যাস কাটারের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চালানো হয়। নামানো হয় সেনাবাহিনীকেও। দুর্ঘটনা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব-সহ রেলের পদস্থ অফিসারেরা। মন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাস্থলে যান ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকও।

Advertisement

তবে করমণ্ডল-সহ তিনটি ট্রেন কী ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটছে না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলের পদস্থ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, কী করে দুর্ঘটনার ঘটেছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত হলে তবেই বোঝা যাবে যে কেন এবং কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন ঘটনাস্থলে। শুক্রবার রাতে মমতাও ঘটনাস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শনিবার সকালে সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। ফিরে আসবেন শনিবারেই। শুক্রবার রাতে হাওড়া এবং শালিমার স্টেশনে ভিড় করেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের উদ্বিগ্ন পরিজনেরা। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারবর্গকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ টাকা এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে ছেড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় চার ঘণ্টা পরে ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ কামরার ট্রেনটি।

তবে দুর্ঘটনা কী করে ঘটেছে, তার একাধিক বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেসই তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে আগে চলতে-থাকা একটি মালগাড়ির পিছনে। দুর্ঘটনার অভিঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়। ২৩টি কামরার মধ্যে ১৫টি কামরা লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে ও নয়ানজুলিতে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত কামরাগুলি গিয়ে পড়ে ডাউন লাইনের উপর। বেঙ্গালুরু-হাওড়া ডাউন ট্রেনটি সেই বেলাইন কামরাগুলির উপর এসে পড়ে। হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। তবে শনিবার ভোর পর্যন্ত যে ৮৮ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছিল রেল, তাঁরা প্রত্যেকেই করমণ্ডলের যাত্রী বলেও জানানো হয়েছিল।

লাইনচ্যুত বগির পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের এস ৪ কামরায় ছিলেন ক্যানিংয়ের বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল এবং তাঁর ভাইপো কৃষ্ণপদ মণ্ডল। পেশায় রাজমিস্ত্রি প্রশান্ত যাচ্ছিলেন তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে। কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন প্রশান্ত। শুধু পায়ে সামান্য চোট লেগেছে তাঁর। ঘটনাস্থল থেকে ফোনে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘উল্টে-পড়া কামরা থেকে বেরিয়ে প্রথমে একটা রেলগেট দেখতে পাই। সেখানে এক জন পুলিশ ছিল। সে বলল, সিগন্যাল না পেয়ে মালগাড়িটা দাঁড়িয়েছিল। করমণ্ডল সজোরে গিয়ে মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে।’’ করমণ্ডলের ইঞ্জিনটি যে ভাবে মালগাড়ির উপর উঠে পড়েছে, তা পিছন থেকে সরাসরি ধাক্কা মারলেই সম্ভব। প্রত্যক্ষদর্শী ওই পুলিশকর্মীর বয়ানও তেমনই বলছে।

আবার রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, মালগাড়ির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কোনও সংঘর্ষ হয়নি। কোনও কারণে প্রথমে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। সেটি গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। সেই লাইন ধরে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেটি এসে ধাক্কা মারে করমণ্ডলের লাইনচ্যুত কামরাগুলিকে। সেই ধাক্কার অভিঘাতে করমণ্ডলের ইঞ্জিন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে-থাকা মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।

সংঘর্ষের পর মালগাড়ির উপরে উঠে গিয়েছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন। —নিজস্ব চিত্র।

রেল সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় মালগাড়িটি খড়্গপুর থেকে ছাড়ে। তার ১৩ মিনিট পরে খড়্গপুর স্টেশন ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। মালগাড়ি এবং করমণ্ডল এক্সপ্রেস একই লাইনে চলছিল ১৩ মিনিটের ব্যবধানে। বালেশ্বর স্টেশন ছাড়িয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার যাওয়ার পরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক অনুমান, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক যে ওই ১৩ মিনিটের গতির ব্যবধান কমিয়ে ফেলেছেন, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তার কারণ সিগন্যালের ত্রুটি হতে পারে। হতে পারে সিগন্যাল দেওয়া হলেও চালক তা খেয়াল করেননি। অথবা একই লাইনে যে মালগাড়িটি রয়েছে, তা তিনি খেয়াল করেননি।

তবে দুর্ঘটনার কোনও কারণই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে এর সঠিক কারণ জানা যাবে। আপাতত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে হতাহতদের উদ্ধারে এবং ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উপর। কারণ, ওই দুর্ঘটনার ফলে হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন শুক্রবার বাতিল করতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শনিবারের কিছু ট্রেনও। খড়্গপুর থেকেও ওড়িশাগামী কিছু ট্রেন বাতিল হয়েছে।

রেল মন্ত্রকের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৭টা চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১০ থেকে ১২টি কামরা বালেশ্বরের কাছে বেলাইন হয়। সেই কামরাগুলি ছিটকে পড়ে পাশের লাইনে। সেই লাইনে হাওড়াগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া এক্সপ্রেস আসছিল। সেই ট্রেনটির সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিটকে-পড়া কামরাগুলির সংঘর্ষ হয়। এতে হাওড়াগামী ট্রেনটিরও দু’টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়।’’

দক্ষিণ ভারতগামী সব ট্রেন বাতিল

করমণ্ডল এক্সপ্রেস মূলত বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালগুলিতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। প্রতি দিন বহু মানুষ করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু এবং কর্নাটকে যান। দুর্ঘটনার জেরে চিকিৎসা করাতে দক্ষিণ ভারতে যাওয়া যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার জেরে শুক্রবার হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। ওড়িশাগামী ট্রেনও চালানো যাচ্ছে না। এর ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। বাতিল-হওয়া ট্রেনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুরীগামী আপ জগন্নাথ এক্সপ্রেস, আপ পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল। শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে শালিমার-পুরী ধৌলি এক্সপ্রেস এবং শালিমার-হায়দরাবাদ ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে। শনিবার অর্থাৎ ৩ জুনও বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু ট্রেন। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ ফলকনুমা এক্সপ্রেস, হাওড়া-বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেস, হাওড়া-তিরুপতি হমসফর এক্সপ্রেস। শনিবার খড়্গপুর থেকেও বাতিল করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন। সেগুলি হল খড়্গপুর-খুর্দা রোড এক্সপ্রেস, খড়্গপুর-ভদ্রক মেমু স্পেশাল।দুর্ঘটনার কারণে বেশ কয়েকটি ট্রেনের পথ পরিবর্তন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ২২৮০৭ সাঁতরাগাছি-চেন্নাই সেন্ট্রাল এসএফ এক্সপ্রেস, দীঘা-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস, ১৮৪০৯ শালিমার-পুরী এক্সপ্রেস, ২২৮১৭ হাওড়া-মাইসুরু এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেন।১৮০৪৩ হাওড়া-জলেশ্বর বাঘাযতীন এক্সপ্রেস, ১৮০৩৭ খড়্গপুর-জাজপুর এক্সপ্রেস, ১২৭০৪ সেকেন্দ্রাবাদ-হাওড়া ফলকনামা এক্সপ্রেস, ০৮৪১৫ জলেশ্বর-পুরী এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি ট্রেন সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথে চলবে বলেও রেলের তরফে জানানো হয়েছে।

উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয়েরাও। —নিজস্ব চিত্র।

মমতা ও নবান্নের ভূমিকা

আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা থেকে ওড়িশায় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। শুক্রবারে গভীর রাতেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন বালেশ্বরে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ওড়িশা সরকার এবং রেলের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন। শুক্রবার রাতে মমতা টুইটে লেখেন, ‘‘আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাত্রিবাহী শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেসের। আমাদের অনেকে গুরুতর জখম হয়েছেন। আমাদের রাজ্যের যাত্রীদের জন্য ওড়িশা সরকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলছি। জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোলরুমও চালু করা হয়েছে।’’ ঘটনাস্থলে পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নিজেই টুইট করে বিষয়টি জানিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাতেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

ক্ষতিপূরণ

করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু এককালীন ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রেল। গুরুতর আহতদের এককালীন ২ লক্ষ টাকা এবং অল্প চোট-আঘাত যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। শুক্রবার রাতেই রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন। অকুস্থলে পৌঁছন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান অনিলকুমার লাহোটিও। রেলমন্ত্রী জানান ভুবনেশ্বর এবং কলকাতা থেকে উদ্ধারকারী দল আনা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য সরকারের উদ্ধারকারী দল এবং বায়ুসেনাকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

দুঃখপ্রকাশ মোদী-শাহের

করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটে শোকপ্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘‘ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতেরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’ প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে কথা বলেছেন। সর্ব শেষ পরিস্থিতির খবর রাখছেন। তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও টুইট করেন, ‘‘ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর অত্যন্ত বেদনাদায়ক। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল (এনডিআরএফ) ইতিমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। অন্যান্য দলও উদ্ধারকাজে যোগ দিতে ছুটে গিয়েছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।

স্টেশনে পরিজনদের উদ্বেগ

রেল দুর্ঘটনার পর উদ্বিগ্ন পরিজনেরা ভিড় করেছেন হাওড়া স্টেশন এবং হাওড়ার অনতিদূরে শালিমার স্টেশনে। শুধু দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনগুলির যাত্রীদের পরিজনেরাই নন, হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ ভারতের ট্রেন ধরতে এসেছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু দুর্ঘটনার জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে প্রায় সমস্ত ট্রেন। কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। আবার কয়েকটি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সেই খবর আগে থেকে না জানায় যাত্রীরা হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছচ্ছেন। সকলেরই গন্তব্য স্টেশনের নতুন কমপ্লেক্সের হেল্প ডেস্ক। হাওড়া স্টেশনের পাশাপাশি শালিমার স্টেশনেও খোলা হয়েছে রেলের হেল্প ডেস্ক। সেখানে বহু উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়। শালিমারে সামান্য ধাক্কাধাক্কিও হয় রাতে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রুখতে দুই স্টেশনেই মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল নিরাপত্তাবাহিনী। দুই স্টেশনে ভিড় রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ প্রতি দিন হাওড়া থেকে ট্রেনে করে দক্ষিণ ভারতে যান কাজের সন্ধানে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতগামী সমস্ত ট্রেন বাতিল হওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই রাত কাটিয়েছেন স্টেশন চত্বরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন