ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। শিলচরের গাঁধীবাগে। রয়েছেন স্থানীয় সাংসদ সুস্মিতা দেব, পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীও। মঙ্গলবার স্বপন রায়ের তোলা ছবি।
কাঁটাতার বাধা তৈরি করতে পারে না। মাতৃভাষার টানে তা-ই ও পার বাংলার ২৫ জন শিল্পী চলে এলেন এ পার বাংলায়।
আজ ১৯ মে। বরাক উপত্যকায় পালন করা হচ্ছে মাতৃভাষা দিবস। বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে স্মরণ করা হচ্ছে ভাষা সেনানীদের। করিমগঞ্জও তার ব্যতিক্রম নয়। এ দিন সকাল থেকেই বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের করিমগঞ্জ জেলা কমিটি শম্ভুসাগর পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদবেদিতে অনুষ্ঠান করে। পুষ্পস্তবক দিয়ে শহিদদের সম্মান জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি সম্মেলনের করিমগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সুখেন্দুশেখর দত্ত, জন্মজিৎ রায়, সব্যসাচী রায়, মাশুক আহমেদ, রথীন্দ্র ভট্টাচার্য, মিশনরঞ্জন দাস বক্তব্য রাখেন।
শহিদ দিবসে বরাকে বাংলা ভাষার উপর অন্য ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন বক্তারা। তাঁরা বলেন— ‘বরাকের ভাষা বাংলা। বাংলা ভাষাকে বরাকের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও ইংরাজি, অসমিয়া-সহ অন্য ভাষায় সরকারি বিজ্ঞাপন রয়েছে এই উপত্যকায়। কোনও প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। কিন্তু এই বরাকেই মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ১৯৬১ সালে ১১ জন আত্মবলিদান দিয়েছিলেন।’ ওঠে এনআরসি প্রসঙ্গও। অনেকে বলেন, ‘এনআরসি ঘিরে করে অসমের কয়েকটি সংগঠনগুলো দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ভেদাভেদ করতে চাইছে।
শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের সিলেট থেকে নৃত্যশৈলী সংগঠন, কথাকলি, সিলেট নজরুল পরিষদের প্রায় ২৫ জন সদস্য করিমগঞ্জে এসেছেন। তাঁরা শম্ভুসাগর পার্কে শহিদবেদীতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে রবীন্দ্র সঙ্গীত, ১৯শে-র কবিতা পাঠ করেন। ওপার বাংলার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সিলেট আর অসমের বরাক উপত্যকার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বছরের পর বছর মাতৃভাষার টানে ১৯শে মে পালনের জন্য বরাক উপত্যকায় এসেছি। কখনও বুঝতে পারেনি, বরাক আসলে বাংলাদেশের না কি ভারতের!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বরাক আর সিলেটের ভাষা, সংস্কৃতি একই। দু’টি যেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম।’’ বাংলাদেশের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা শহিদ বেদির সামনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শিলচরের অনুষ্ঠানেও যোগদান করেন ওপার বাংলার শিল্পীরা।