লিওপোল্ডের প্রন পট রাইস আমার দারুণ লাগে। সেটা খেতেই গিয়েছিলাম আমি আর আমার বন্ধু রাহুল।
রাহুল মুদলেয়ার। আমি জানি আজও রাহুল ফোন করবে। অন্য দিনও করে। তবে আজ করবেই। গত ন’বছর ধরেই করছে। কারণ আজ ২৬ নভেম্বর। যে দিনটা আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে। আমাদের কেন, মুম্বইয়ের অসংখ্য লোকের।
শুক্রবার সন্ধ্যা। উইকএন্ড শুরু। শুধু লিওপোল্ড ক্যাফে কেন, কোলাবা তল্লাটের সব হোটেল-পাবই তখন জমজমাট থাকে। আমরাও তেমন এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম। সন্ত্রাসবাদীরা বেছে নিয়েছিল সেই সময়টাই। হামলা হয়েছে টের পেয়েই আমরা টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়ি। কিন্তু এক জনের সঙ্গে আমার চোখাচোখি হয়। চাপা দিতে আসা গাড়ির হেডলাইটের সামনে পড়লে কোনও প্রাণীর যা মনে হতে পারে, তেমন মনে হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ২৬/১১ মুম্বই হামলা: ফিরে দেখা হামলার দশ বছর
গুলিটা লেগেছিল আমার ডান পায়ে। যখন চিকিৎসা চলছিল কতটা অসহায় লাগত, বলে বোঝাতে পারব না। তখন বয়স ২৮। সবে চাকরি করছি। মনে হত, এই বয়স থেকে দু’পায়ে হাঁটার ক্ষমতা চলে যাবে! ভগবানের দয়ায় তা অবশ্য হয়নি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। পরিবার, বন্ধুরা সবাই পাশে ছিল বলেই লড়তে পেরেছি। পাশে ছিল আমার অফিসও। আমি টাটায় চাকরি করতাম। রতন টাটা নিজে হাসপাতালে আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন গাড়িও চালাতে পারি। বিয়ে হয়েছে, এক ছেলের বাবা আমি। আমার কর্মক্ষেত্রও বদলেছে। আপাত দৃষ্টিতে সবই স্বাভাবিক। লিওপোল্ডেও আজ সন্ধেয় তেমনই ভিড় হবে। তবে একটা বদল হয়েছে। সেটা মানসিক। আমি বুঝে গিয়েছি, আমরা কতটা অসহায়। বুঝে গিয়েছি, এই নিরাপত্তা, গোয়েন্দা-নজরদারি সব ব্যর্থ করে আবার এমন হানা হতে পারে। যে কোনও দিন। যে কোনও সময়ে। যে কোনও জায়গায়। এটাই হয়তো সন্ত্রাসের সাফল্য।
এই নিরাপত্তাহীনতা কেবল আমাকে নয়, কুরে কুরে খায় মুম্বইয়ের বহু মানুষকে। আমাদের মননে এই নিরাপত্তাহীনতা ঢুকিয়ে দিয়েছে ২৬/১১। যাঁরা সরাসরি ওই সন্ত্রাস দেখেছেন তাঁরা তো বটেই, যাঁরা দূর থেকে এর ভয়াবহতা অনুভব করেছেন তাঁরাও এর শিকার। শুধু মুম্বই কেন, দেশের অসংখ্য মানুষ এখন এমন ভয় নিয়েই রোজ রাস্তায় বেরোন।
আরও পড়ুন: চার দিনের এই হামলা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়া
আমি থাকি মুম্বইয়ের বাইকুল্লায়। ওই দিনটার পরে আমি প্রতি ২৬ নভেম্বর চার্চে যাই। প্রার্থনা করি এমন যেন আর কোনও দিন না হয়। ভগবানকে ধন্যবাদ দিই প্রাণ বাঁচানোর জন্য। আসলে ২৬/১১ আমার কাছে দ্বিতীয় জন্মদিন। তবে এমন জন্মদিন, যা সেলিব্রেট করা যায় না।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন: সুজিষ্ণু মাহাতো)