শোকার্ত: নিহত পুলিশ অফিসার ফিরদৌস আহমেদের শেষকৃত্যে স্ত্রী ও সন্তানেরা। সোপিয়ানে। পিটিআই
ফের অপহরণ করে পুলিশকে খুন করা হল কাশ্মীরে। এ বারের ঘটনাস্থল সোপিয়ান। শুক্রবার সকালে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তিন পুলিশকে গুলি করে খুন করেছে জঙ্গিরা। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিন।
দিন কয়েক আগে হিজবুলের তরফে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে উপত্যকার পুলিশ কর্মীদের বলা হয় — ‘‘ইস্তফা দাও, না হলে মরো।’’ এ দিনের ঘটনার পরে কাশ্মীরের ৬ পুলিশকর্মী পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা সেই ভিডিয়ো মেসেজ ইন্টারনেটে পোস্টও করেছেন। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পুলিশকর্মীদের চাকরি ছাড়ার যে খবর সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে এসেছে, তা অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ছড়ানো হয়েছে।
শুক্রবার বাতাগুন্দ গ্রাম থেকে নিসার আহমেদ নামে এক কনস্টেবল এবং দুই স্পেশাল পুলিশ অফিসার (এসপিও) ফিরদৌস আহমেদ ও কুলবন্ত সিংহকে তুলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। গ্রামবাসীরা জানান, জঙ্গিদের আটকাতে পিছু ধাওয়া করেছিলেন তাঁরা। অপহৃত পুলিশদের ছেড়ে দিতে অনুরোধও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু জঙ্গিরা হাওয়ায় গুলি চালিয়ে তিন জনকে নিয়ে নদী পেরিয়ে চলে যায়। এর পর বাতাগুন্দ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ওয়াঙ্গম এলাকায় একটি ফলবাগান থেকে তিন জনের গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে। নিসার আহমেদ পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে ছিলেন। ফিরদৌসের কনস্টেবল পদে নিয়োগ হওয়ার কথা চলছিল। আর কুলগাম পুলিশে কর্মরত ছিলেন কুলবন্ত সিংহ। এক পুলিশ কনস্টেবলের ভাইকেও তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। কিন্তু তাঁকে পরে ছেড়ে দেয় তারা। টুইটারে গোটা ঘটনার দায় স্বীকার করেছে হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিগোষ্ঠী।
সাম্প্রতিক কালে এ ধরনের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। হিজবুল নেতা সইদ সালাউদ্দিনের ছেলেকে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) গ্রেফতার করার ক’দিন পরেই ৩০ অগস্ট দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক পুলিশকর্মীর আত্মীয়-পরিজনকে অপহরণ করে জঙ্গিরা। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। হিজবুল কম্যান্ডার রিয়াজ় নাইকু একটি ১২ মিনিটের ভিডিয়োতে সেই ঘটনার দায় নিয়েছিলেন।
জঙ্গিদের লাগাতার হুমকির প্রেক্ষিতে গত কয়েক মাসে দক্ষিণ কাশ্মীরে একাধিক এসপিও ইস্তফা দিয়েছেন বলে শোনা গিয়েছে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে অন্তত ৩০ হাজার এসপিও রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তাঁদের কাজ খতিয়ে দেখা হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কারণে কয়েক জন এসপিও-র চাকরির চুক্তিপত্র পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। তাঁদেরই ব্যবহার করে এই ধরনের খবর ছড়াচ্ছে জঙ্গিরা। তা ছাড়া, শুধু মাত্র এ বছরই সোপিয়ানে ২৮ জন জঙ্গি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। আজও উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ লস্কর জঙ্গি নিহত হয়েছে। মন্ত্রকের দাবি, কোণঠাসা হয়ে পড়েই জঙ্গিদের এই মরিয়া চেষ্টা।