যুক্তিবাদী খুনে একই দল, ভাবছে সিবিআই

মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদী নেতা নরেন্দ্র দাভোলকর খুনে ধৃত বীরেন্দ্র তাওয়াড়ে এম এম কালবুর্গীর খুনেও জড়িত বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতির সদস্য বীরেন্দ্রর সঙ্গে গোয়ার মারগাঁও বিস্ফোরণে জড়িতদেরও যোগাযোগ ছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৫০
Share:

নরেন্দ্র দাভোলকর

মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদী নেতা নরেন্দ্র দাভোলকর খুনে ধৃত বীরেন্দ্র তাওয়াড়ে এম এম কালবুর্গীর খুনেও জড়িত বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতির সদস্য বীরেন্দ্রর সঙ্গে গোয়ার মারগাঁও বিস্ফোরণে জড়িতদেরও যোগাযোগ ছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

Advertisement

তিন বছর আগে মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদী ও কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনকারী নরেন্দ্র দাভোলকর খুন হন। এই প্রথম সেই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হল। দাভোলকরের মতোই মহারাষ্ট্রের আর এক যুক্তিবাদী ও কমিউনিস্ট নেতা গোবিন্দ পানসারে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে খুন হন। অগস্টে খুন হন কর্নাটকের যুক্তিবাদী লেখক এম এম কালবুর্গী। একের পর এক এমন ঘটনায় মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ ওঠে। যার প্রতিবাদে সাহিত্যিকরা সরকারি পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন।

এই তিনটি ঘটনার মধ্যে বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে শুধুমাত্র দাভোলকরের খুনের ঘটনারই তদন্ত করছে সিবিআই। কিন্তু তদন্তে উঠে আসা তথ্য থেকে সিবিআই কর্তারা মনে করছেন, তিনটি খুনের ঘটনাতেই একই গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।

Advertisement

কী ভাবে?

প্রথমত, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক দুই রাজ্যেই সনাতন সংস্থা ও হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতির প্রভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তিনটি খুনের ঘটনাতেই একই বা একই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলেও সিবিআইয়ের সন্দেহ। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সাহায্য নিতে চাইছেন সিবিআই কর্তারা। তৃতীয়ত, পানসারের খুনের ঘটনায় আগেই আর এক সনাতন সংস্থার সদস্য সমীর গায়কোয়াড়কে গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।

যুক্তিবাদী হিসেবে দাভোলকর এক সময় নদীতে গণেশ মূর্তি বিসর্জনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচার চালান সনাতন সংস্থার তাওয়াড়েরা। তখন থেকেই দাভোলকরের সঙ্গে সনাতন সংস্থার বিবাদ ও মতাদর্শগত বিরোধের শুরু। পানসারে ও কালবুর্গীও নিয়মিত হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতেন, প্রচার চালাতেন। হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি আসলে গোয়ার সনাতন সংস্থারই শাখা সংগঠন। দুটি সংস্থাই হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, হিন্দু রাষ্ট্র গঠন, গরু রক্ষা, মন্দির ও দেবতাদের সম্মান রক্ষা থেকে শুরু করে ভ্যালেনটাইন্স ডে, লাভ জেহাদের বিরুদ্ধে প্রচারের মতো কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত।

শুক্রবার রাতে মুম্বইয়ের কাছে পানভেল থেকে বীরেন্দ্র তাওয়াড়েকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পেশায় চিকিৎসক তাওয়াড়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি, মোবাইল, ই-মেল থেকে পাওয়া তথ্য আটক করেন তদন্তকারীরা। তখনই দেখা যায়, তাওয়াড়ের সঙ্গে গোয়ার মারগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত সরঙ্গ আকোলকরের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এমনকী চলতি মাসেও সরঙ্গকে ই-মেল পাঠান তাওয়াড়ে। তাওয়াড়ের মতো সরঙ্গও সনাতন সংস্থার সক্রিয় সদস্য। ২০০৯-এর গোয়ার মাঢ়গাঁও বিস্ফোরণে নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই পুণের নারায়ণপেটের এই ইঞ্জিনিয়ারের আর খোঁজ পেলেনি। এনআইএ-র অনুরোধে ইন্টারপোল সরঙ্গের নামে রেড কর্নার নোটিসও জারি করেছে। কিন্তু তাতেও সরঙ্গের নাগাল পাননি এনআইএ কর্তারা। এখন সিবিআই কর্তারা সন্দেহ করছেন,

সরঙ্গ নিজেই দাভোলকরের খুনে যুক্ত ছিল। এ বিষয়ে তাকে সাহায্য করেছিল তাওয়াড়ে। খুনের মামলায় বীরেন্দ্রকে তাই অন্যতম ষড়যন্ত্রী হিসেবে আজ আদালতে পেশ করেছে সিবিআই। তাকে পাঁচ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

তাওয়াড়ের গ্রেফতারের পর নরেন্দ্র দাভোলকরের ছেলে হামিদ বলেন, ‘‘আগেই এই পদক্ষেপ হলে পানসারে ও কালবুর্গীর মৃত্যু রোখা যেত।’’ অন্য দিকে গোবিন্দ পানসারের পুত্রবধূর দাবি, পানসারে ও দাভোলকর, দু’জনের খুনেই সনাতন সংস্থার যোগাযোগ স্পষ্ট হওয়ায় এখন কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া।

সনাতন সংস্থার দাবি, হিন্দু সং‌গঠনগুলির বদনাম করার জন্যই তাওয়াড়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগেই মালেগাঁও বিস্ফোরণে সাধ্বী প্রজ্ঞা গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু প্রমাণ না থাকায় তিনি মুক্তি পান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন