Flash Flood in Sikkim

আবার ধস সিকিমে, তিস্তার গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে জাতীয় সড়ক, ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিখোঁজের সংখ্যাও

পাকিয়ং জেলার রংপো, গ্যাংটক জেলার অন্তর্গত ডিকচু এবং সিংটাম এলাকা এবং মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকা থেকে আহত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের খবর পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

সিকিম শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৪৭
Share:

তিস্তার ধ্বংসলীলা চলছে সিকিমে। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার সকালেও ভয়াবহ পরিস্থিতি সিকিমে। ২৯ মাইল এলাকার কাছে বড়সড় ধস নামে। ধসের ফলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (সাবেক ৩১এ জাতীয় সড়ক) এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিস্তা ব্রিজ থেকে সিকিম যাওয়ার পথে বেশ কিছু জায়গায় বড় আকারের ধসের কারণে জাতীয় সড়ক নীচের দিকে বসে গিয়েছে। বুধবার দুপুর নাগাদ ২৮ মাইল এলাকায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের রাস্তায় ধস নামে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গা ধীরে ধীরে তিস্তার নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

Advertisement

বুধবার ভোর থেকে ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ে উত্তর সিকিম। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে লোনক হ্রদ ফেটে তীব্র গতিতে জল নেমে আসে। পাশাপাশি হড়পা বানে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৪ জন। বৃষ্টি না থামলে তিস্তার ভয়াবহতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা। মৃত এবং নিখোঁজের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম সরকার সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার পর্যটক রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে রয়েছেন। টানেলের ভিতর আটকে পড়েছেন শ্রমিকেরাও। সরকারি সূত্রে খবর, মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকায় তিস্তা স্টেজ ৩ বাঁধে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। হড়পা বান নেমে আসায় সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় ফিরে যেতে পারেননি তাঁরা। জানা গিয়েছে, বাঁধের অধিকাংশ জলে ভেসে গিয়েছে। প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনও নিকটবর্তী টানেলের ভিতর আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা।

প্রশাসন সূত্রে খবর, সিকিমে হড়পা বানের বিপর্যয়ের বলি অন্তত ১৪ জন। এখনও ২২ জন সেনা জওয়ান-সহ অন্তত ১২০ জন নিখোঁজ। নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিশেষ করে পাকিয়ং জেলার রংপো, গ্যাংটক জেলার অন্তর্গত ডিকচু এবং সিংটাম এলাকা এবং মঙ্গন জেলার চুংথাং এলাকা থেকে আহত এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের খবর পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২৫ জনকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চুংথাং-সহ উত্তর সিকিমের বেশির ভাগ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। মঙ্গন জেলার তুং এবং সাংকালান এলাকায় হড়পা বানের ফলে ফাইবার কেবল লাইনগুলিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চুংথাং এলাকার থানাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

Advertisement

বুধবার সকালে ২৩ জন জওয়ানের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এক জন জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ওই জওয়ানের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিংহ তামাং এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সিংটাম এলাকায় যান। বুধবার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের রাজ্য কী ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত। যে এলাকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে আপৎকালীন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যবাসীর কাছে আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন এই কঠিন সময়ে যাতায়াতের সিদ্ধান্ত না নেন। পরিস্থিতি যেন শীঘ্রই স্বাভাবিক হয়ে যায়, সে আশা রাখছি।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সিকিমের জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ। এর ফলে ফেরার পথও আপাতত অবরুদ্ধ রয়েছে। বাংলা-সহ দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে যান সিকিমে। প্রতি বার পুজোর মুখে সেই ভিড় আরও বাড়তে থাকে। তিস্তায় হড়পা বানের জেরে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গন জেলা। ভেসে গিয়েছে বহু সেতু। জলমগ্ন বাড়িঘর। কিছু জায়গায় জলের তোড়ে সম্পূর্ণ ভাবে ভেঙে পড়েছে বড় বড় বিল্ডিং। কাদাস্রোতের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে বহু বসতি, রাস্তাঘাট, সেনাছাউনি। পরিস্থিতি জরিপ করে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পাকিয়ং, গ্যাংটক, নামচি এবং মঙ্গনের সমস্ত এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে একাধিক জরুরি পরিষেবার নম্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন