উদ্ধার: খাদ থেকে তুলে আনা হচ্ছে মৃতদেহ। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
পিকনিকের জন্য বাসে চেপে হইহই করে মহাবালেশ্বরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনা তিরিশেক কর্মী। তার আগে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবিও তুলেছিলেন তাঁরা। তখনও জানতেন না, সেটাই তাঁদের শেষ ছবি হয়ে থাকবে!
শনিবার সকালে মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার অম্বেনালী ঘাটের কাছে মুম্বই-গোয়া হাইওয়েতে পাহাড়ি রাস্তায় বাঁক নেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারায় ৩৪ জন আরোহী বোঝাই বাসটি। সেটি পিছলে গিয়ে ৫০০ ফুট গভীর একটি খাদে পড়ে। তাতে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচেছেন এক জন যাত্রী।
প্রকাশ সবন্ত দেশাই নামে ওই যাত্রী জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময়ে তিনি বাসের জানলা দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে গাছের ডালপালার মধ্যে আটকে যান। এর আধ ঘণ্টা পরে কোনও ভাবে বেয়ে রাস্তায় উঠে আসেন এবং কলেজে খবর দেন।
কী ভাবে ওই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তা-ও জানিয়েছেন তিনি। প্রকাশের বক্তব্য, তাঁরা সকলেই দাপোলীর ডঃ বালসাহেব সবন্ত কোঙ্কণ কৃষি বিদ্যাপীঠের কর্মী। প্রতি বছরই সব কর্মীরা মিলে পিকনিকে যান। এ দিন মহাবালেশ্বরে পিকনিকে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসই ভাড়া করেছিলেন তাঁরা। বাসে ছিলেন দুই চালক-সহ ৩৪ জন। সকলে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন। গল্পসল্প, ঠাট্টা-তামাশায় মেতে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের সেই ঠাট্টায় যোগ দিতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাথা ঘুরিয়েছিলেন বাসচালক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসটি নীচে পড়ে যায়। আর তিনি বাস থেকে ছিটকে বেরিয়ে যান।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও অ্যাম্বুল্যান্স। এ ছাড়াও সেখানে পাঠানো হয়েছে ১৫ জন চিকিৎসককেও। তবে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। বাস থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ১১ জনের দেহ বার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাইওয়ের সেই অংশটা এমনিতেই বিপদসঙ্কুল। তার উপর গত কয়েক দিন ধরেই সেখানে বৃষ্টিপাত চলছে। ফলে ওই রাস্তাটা আরও বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনা কী ভাবে ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখবে মহারাষ্ট্র সরকার— এমনই আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। সেই সঙ্গে মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করবে রাজ্য। মর্মান্তিক ওই বাস দুর্ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। পাশাপাশি, মৃত ও আহতদের পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ওই অঞ্চলের কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।