সতর্ক প্রহরা। ছবি: পিটিআই।
পাংসু পাস উৎসবে যোগ দিতে অসম-অরুণাচলের সংযোগকারী জাতীয় সড়কে ভিড় বাড়বে ভিআইপি কনভয়, পর্যটকদের গাড়ির— সে দিকে তাকিয়ে কঠোর করা হয়েছিল নিরাপত্তার বেড়াজাল। কিন্তু সবার চোখে ধুলো দিয়ে ওই সড়কের পাশে ৬টি ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখল জঙ্গিরা! দল বেঁধে হামলা চালাল ‘রোড ওপেনিং পার্টির’ উপর।
জঙ্গি হানার আশঙ্কার কথা গোয়েন্দা সূত্রে পেয়েছিল পুলিশ, সেনাবাহিনী। তা নিয়ে তিনসুকিয়ায় তিন দিন আগে পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অসম পুলিশের ডিজি। তাতেও ঠেকানো গেল না নাশকতা। এ দিকে, গত কালের হামলায় গুরুতর জখম এক জওয়ান আজ হাসপাতালে মারা যান। অন্য সময় ১৫৩ নম্বর জাতীয় সড়কের জাগুন-জয়রামপুর রাস্তায় সহজে দেখা মেলে না যানবাহনের। কিন্তু অরুণাচলে পাংসু পাস শীতকালীন উৎসবের জেরে গাড়ির ভিড় বেড়েছিল ওই রাস্তায়। সেই সুযোগই নিল জঙ্গিরা।
সেনা ও পুলিশের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়া আজ দাবি করেন, গত কাল সেনাবাহিনী যে দুই যুবককে মেরেছে, তারা জঙ্গি নয়। মুখরক্ষার জন্য প্রাক্তন দুই জঙ্গিকে ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করেছে সেনাবাহিনী। পরেশ এ দিন দাবি করেন, হামলা হয়েছে আলফা নেতা রূপম অসমের নেতৃত্বে।
জাগুনে হামলার পর অসমের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) কুল শইকিয়া গত কাল থেকেই জঙ্গিদমন অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ দিন হেলিকপ্টারে চলে নজরদারি। এ দিন টিংকুপানি এলাকায় সেনাবাহিনী ওই রাস্তাতেই আরও চারটি আইইডির খোঁজ পায়। সেগুলি পরে বোমা বিশেষজ্ঞরা ফাটিয়ে ফেলেন। জয়রামপুরের জঙ্গলে তল্লাশির সময় আসাম রাইফেলস জওয়ানরা দু’জন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে দেখতে পান। হাসপাতালে পাঠানোর রাস্তাতেই তারা মারা যায়। সেনাবাহিনীর সন্দেহ তারা হামলাকারী জঙ্গিদলের সদস্য ছিল।
গত কালের হামলার আতঙ্ক ২৪ ঘণ্টা পরও কাটেনি পর্যটকদের। নাশকতার জেরে নামপঙে পাংসু পাস উৎসবে অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। সফর বাতিল করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, অরুণাচল পর্যটনের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর’ জন আব্রাহাম। আসেননি মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুও। তিনি ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নিহত জওয়ানদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। গত কালই ওই রাস্তা দিয়ে প্রাক্তন আলফা নেতা কুশল কোঁয়র সপরিবারে নামপঙ যাচ্ছিলেন। জঙ্গিদের ছোঁড়া রকেট তাঁর গাড়ির বনেট ঘেঁষে পাশের ঝোপ পড়ে ফাটে। ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান তিনি ও তাঁর পরিবার। তবে জঙ্গিদের গুলিতে তাঁর গাড়ি ও পর্যটকদের আরও দু’টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার পরে সেনাবাহিনী জঙ্গলে অভিযান চালায়। প্রথমে জানানো হয়েছিল, চার মণিপুরি জঙ্গিকে মারা হয়েছে। কিন্তু পরে দেহ উদ্ধার হয় দু’জনের।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই আলফা, কেএলও, খাপলাং বাহিনী, মণিপুরের সাতটি জঙ্গি গোষ্ঠীর যৌথ মঞ্চ কোর-কম, পিএলএ, এনডিএফবি, পিডিসিকে, এনএলএফটি, জিএনএলএ, এইচএনএলসি যৌথ বিবৃতি দিয়ে উত্তর-পূর্বে প্রজাতন্ত্র দিবস বয়কটের কথা জানায়। ২৫ জানুয়ারি রাত ৯টা থেকে ২৬ জানুয়ারি সন্ধে ৬টা পর্যন্ত অসম-সহ উত্তর-পূর্বে তারা বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের দাবি, অসম, মেঘালয় ও মণিপুরে বিচ্ছিন্নতার বীজ বপণ করেছে ভারত সরকার। অসমে হিন্দু-মুসলিম, মণিপুরে মেইতেই-নাগাদের মধ্যে বিরোধ বাধানোর চেষ্টা চলছে। যৌথ মঞ্চ কাঠগড়ায় তুলেছে ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালানো জঙ্গি সংগঠনগুলিকেও। বলা হয়, বিপ্লব দমনের অন্তর্ঘাতে তারাও সাহায্য করছে। অন্য দিকে মণিপুরে গত বছর ১ নভেম্বর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ চালিয়ে যাওয়া ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলও প্রজাতন্ত্র দিবসের সব অনুষ্ঠান বয়কট করার কথা ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে কোনও নাগা অংশ নিলে তার ফল ভাল হবে না। মণিপুরেরে নোনে জেলা থেকে পুলিশ বিস্ফোরক-সহ চার এনএসসিএন (আই-এম) জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে।
দক্ষিণ গারো পাহাড়ের গাসুয়াপাড়ায় গত কাল শিববাড়ি থেকে তুরাগামী একটি বাস ও কয়লাবাহী একটি ট্রাক থামায় সশস্ত্র সন্দেহভাজন আসাক জঙ্গিরা। বাসের চালক, এক যাত্রী এবং ট্রাকটির চালক ও খালাসিকে অপহরণ করা হয়। ১৮ জানুয়ারি ডালু থেকে অপহৃত তিন ব্যবসায়ীকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে আসাক জঙ্গিরা। গত রাতে মণিপুরের চূড়চাঁদপুরে ইউনাইটেড ট্রাইবাল লিবারেশন আর্মির চেয়ারম্যান লামটিংসেইকে দুই বন্দুকধারী গুলি করে পালায়। গির্জা থেকে ফেরার পথে তোল্লেন গ্রামে ওই হামলা হয়। তাঁকে ইম্ফলের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।