প্রশাসনিক নিষেধ, পুলিশি কড়াকড়ি, জরিমানার ভয়, সর্বোপরি একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা— নয়া প্রজন্মের নিজস্বী হিড়িকে লাগাম টানতে পারছে না কোনওটাই। উল্টে এই প্রবণতা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনছে, তা ফের প্রমাণ হল গোয়ার একটি ঘটনায়। পানজিমে ঘুরতে এসে নিজস্বী তুলতে গিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনার মুখে পড়লেন পাঁচ পর্যটক। দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
গত মাসেই শহরের ১৬টি অঞ্চলকে ‘নো সেলফি জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল মুম্বই পুলিশ। না মানলে জরিমানা ১২০০ টাকা। রেলিং নেই এমন উপকূলবর্তী এলাকাগুলির উপরে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে নিজস্বী তুলতে গিয়ে শহরবাসী এবং পর্যটকরা বিপদে না পড়েন। যদিও তাতে হেলদোল নেই দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আর এক স্বর্গরাজ্য গোয়ার।
২২ ফেব্রুয়ারি গোয়ার দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রেলিংয়ের গেট খুলে যাওয়ার ফলেই। পুলিশ জানিয়েছে, পানজিমের আঞ্জুনা গ্রামে বেড়াতে গিয়ে পাহাড়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলছিলেন ওই পাঁচ জন। পাহাড়ের যে রেলিংয়ের গেটে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা, সেটি হঠাৎই খুলে যায়। টাল সামলাতে না পেরে গড়িয়ে পড়েন প্রত্যেকেই। গোয়া পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, উপুড় হয়ে নীচে পাথরে আছড়ে পড়েন দুই তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে, গুরুতর আহত ওই তরুণীদের বয়স কুড়ির কোঠায়। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন তাঁরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ বাকি তিন জন।
পরিসংখ্যান বলছে, নিজস্বী তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে মূলত এই বয়সী ছেলেমেয়েরাই। কোনও কোনও ঘটনা ডেকে আনছে মৃত্যুও। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, গত বছর গোটা বিশ্বে নিজস্বী তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৭ জনের। যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই ভারতীয়। চলন্ত ট্রেন থেকে খাড়া পাহাড়, বিপদের একশো শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও বেপরোয়া নিজস্বী প্রেমীরা।
চলতি বছরের গোড়াতেই মহারাষ্ট্রের মুরুদ সৈকতে নিজস্বী তুলতে গিয়ে ভেসে যান ১৩ কলেজ পড়ুয়া। পুলিশ জানিয়েছিল, পিকনিক করতে আসা ওই পড়ুয়ারা সতর্কতা না মেনেই জোয়ারের সময় নিজস্বী
তুলতে এগিয়ে যান। পরিণতি মর্মান্তিক মৃত্যু। গোয়ার মতোই তামিলনাড়ুর কোলি হিলসে নিজস্বী তুলতে গিয়ে পাহাড় থেকে ৬০ ফুট নিচে
গড়িয়ে পড়েন এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। গত বছর সেপ্টেম্বরেও তাজমহলের সামনে নিজস্বী তুলতে গিয়ে সিড়ি থেকে পড়ে মৃত্যু হয় এক জাপানি পর্যটকের।