ডাইনি অপবাদে ৫ মহিলাকে পিটিয়ে খুন

ডাইনি অপবাদ দিয়ে পাঁচ আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল মান্ডার থানা এলাকার কাচিয়ার একদল গ্রামবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার গভীর রাতে। ডাইনি অপবাদে হত্যার ঘটনা ঝাড়খণ্ডে প্রায়শই ঘটে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০২
Share:

ঘটনার পর গ্রামে টহলদারি পুলিশের। শনিবার। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।

ডাইনি অপবাদ দিয়ে পাঁচ আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে মেরে ফেলল মান্ডার থানা এলাকার কাচিয়ার একদল গ্রামবাসী। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার গভীর রাতে।

Advertisement

ডাইনি অপবাদে হত্যার ঘটনা ঝাড়খণ্ডে প্রায়শই ঘটে। তবে এক সঙ্গে পাঁচ জন মহিলাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। মৃতদের নাম জনসিতা খালকো (৫৫), এতবারিয়া খালকো (৫০), মদনি খালকো (৫৫), রতিয়া খালকো (৬০), তেতরি খালকো (৩২)। এখানেই শেষ নয়। গ্রামবাসীরা একটুও অনুতপ্ত না হয়ে বীরদর্পে পুলিশের সামনেই ঘোষণা করেছে, এই গ্রামে আরও তিনজন ‘ডাইনি’ রয়েছে। তাদেরকেও খুব শীঘ্রই লাঠিপেটা করে মেরে ফেলা হবে। রাঁচির পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজ কুমার লাকড়া বলেন, ‘‘ডাইনি অপবাদে ওই মহিলাদের পিটিয়ে মারার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৩৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কয়েকজনের খোঁজ চলছে।’’

রাঁচি থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে, মান্ডারা থানা এলাকার ওই ছোট্ট গ্রামে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবারের বাস। সবাই গরিব আদিবাসী। অধিকাংশই খেত মজুরের কাজ করে। গ্রামটি জন্ডিসপ্রবণ। প্রতি বছরই জন্ডিসে কয়েকজন করে লোক মারা যায়। জানা গিয়েছে, গ্রামের ওঝারা গ্রামবাসীদের জানিয়েছেন, আসলে জন্ডিস নয়, গ্রামে কয়েকজন ডাইনি বসবাস করে। সেই কারণেই গ্রামবাসীরা রোগভোগে মারা যাচ্ছে।

Advertisement

গত রবিবার পুনিত খালকা নামে ওই গ্রামের এক কিশোর মান্ডারার গ্রামীণ হাসপাতালে জন্ডিসে মারা যায়। এর পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গ্রামবাসীরা। তারা গ্রামের ওঝাদের কাছে গিয়ে ‘ডাইনিদের’ পরিচয় জানতে চায়। অভিযোগ, দিন কয়েক আগে ওঝারা ওই মহিলাদের নাম প্রকাশ করে দেয়। এরপরই গ্রামবাসীদের একাংশ ওই মহিলাদের পিটিয়ে মারার পরিকল্পনা করে। দিন দুই আগে ওঝার বাড়িতে যে বৈঠক বসেছিল সেখানে যাদের মারা হয়েছে সেই পরিবারের কাউকে ডাকা হয়নি। ফলে মৃত মহিলাদের পরিবারের লোকেরা এই ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

শুক্রবার গভীর রাতে ওই মহিলাদের বাড়িতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হানা দেয় গ্রামবাসীরা। ঘর থেকে টেনে বের করে তাদের লাঠি দিয়ে পেটানো শুরু হয়। কেউ কোনও রকমে পালাতে চাইলে তাকে তাড়া করে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অভিযোগ কয়েকজন মহিলার জামাকপড়ও খুলে নেওয়া হয়। এ দিন নিজের বাড়িতে বসে কাঁদতে কাঁদতে মৃত জনসিতা খালকোর বাবা ম্যাথিয়ুস খালকো বলেন, ‘‘রাত একটা নাগাদ দরজায় ধাক্কা মারার আওয়াজ পাই। বাইরে হট্টগোল। দরজা না খুললে ওরা দরজা ভেঙেই ফেলতো। তাই বাধ্য হয়ে দরজা খুলি। দরজা খুলতেই দেখি হুড়মুড় করে কয়েকজন ঘরে ঢুকে আমার মেয়ের চুলের মুঠি ধরে বাইরে বের করে নিয়ে এল। বাধা দেওয়ার আগেই ওরা আমার সামনেই ওকে লাঠি টাঙ্গি দিয়ে মারতে থাকল।’’ মদনি খালকোর এক মেয়ের কথায়, ‘‘মা ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় টেনে তুলল। সেই অবস্থাতেই মা পালাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওরা দৌঁড়ে ধরে ফেলল। তারপর মারতে মারতে মেরেই ফেলল।’’

এই নৃশংস গণহত্যা শুরু হয় রাত একটা থেকে। থানায় খবর পৌঁছয় রাত তিনটে নাগাদ। রূপকুমার একতা নামে এক কনস্টেবল ওই গ্রামের কাছে রাতে ডিউটি করছিলেন। তিনিই গন্ডগোল বুঝতে পেরে থানা থেকে বাহিনী নিয়ে আসেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা এতটাই ক্ষিপ্ত ছিল যে পুলিশকে প্রথমে গ্রামে ঢুকতেই দেয়নি। পরে ভোরের আলো ফুটলে পুলিশ গ্রামে ঢোকে।

পুলিশ জানিয়েছে গ্রামের চারজন ওঝা পলাতক। গ্রামবাসীরা এখন কেউ কোনও কথা বলছে না। তবে মারান্ডা থানার এক পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচজনকে শুধু পিটিয়ে মেরে খুশি নন গ্রামের লোকেরা। ভোর রাতে পুলিশদের তারা জানিয়েছে, এই গ্রামের আরও তিন ‘ডাইনি’-কেও মেরে ফেলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন